Saturday, November 26, 2016

খিলাফত সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা


আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাবুদ্দীন তার ভ্রান্ত রেসালা “……ভ্রান্ত মতবাদে” লিখেছে “তিনি কোন পীর থেকে খেলাফত লাভ করেননি। তবে তিনি বলেন স্বয়ং আল্লাহ ও রসূল তাকে খিলাফত দান করেছেন।”
মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
“কাটা দিয়ে কাটা উঠানো সবচেয়ে সহজ।” তাই আমাদের নিজস্ব বক্তব্য দ্বারা নয় বরং কাযযাবুদ্দীনের ‘জাত ভাই’ মহা কাযযাব মুসাইলামের বক্তব্য দ্বারাই প্রমাণ করবো যে, কাযযাবুদ্দীনের বক্তব্য মিথ্যা। কাযযাবুদ্দীন লিখেছে, “তিনি কোন পীর থেকে খিলাফত লাভ করেননি।” অথচ তার জাত ভাই মহা কাযযাব মুসাইলাম তার কলঙ্কিত রেসালা ‘আদ দ্বীনে’ লিখেছে, “তিনি ফুরফুরা সিলসিলার পীর জনাব মাওলানা ওয়াজিহ উল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহ উনার মুরীদ হন। এক পর্যায়ে উনার থেকে খিলাফত প্রাপ্ত হন।”
কাযযাবুদ্দীনগং যে মিথ্যার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে তা কি এরপরও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে? সাধারণ লোকদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার কারণেই তো তাদের একজনের কথার সাথে আরেক জনের কথার কোনই মিল নেই। বরং সম্পূর্ণই বিপরীত।

স্মর্তব্য যে, মহা কাযযাব মুসাইলাম তার অনিচ্ছা সত্ত্বে যদিও “খিলাফত” সম্পর্কে সত্য কথা বলতে বাধ্য হয়েছে। তবে “উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক” প্রসঙ্গে সে অতিরিক্ত রকমের মিথ্যাচারিতা করেছে। মহা কাযযাব লিখেছে, “……. বিভিন্ন মতবাদ ও কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হন তিনি।”
মহা কাযযাব মুসাইলামের এ বক্তব্য শুধু মিথ্যাই নয় বরং উদ্দেশ্য প্রণোদিতও বটে। মূলতঃ যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যত খলীফা ও মুরীদ রয়েছেন, তাদের মধ্যে উনার সাথে সবচেয়ে বেশী গভীর সুসম্পর্ক ছিল রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথেই। আর বর্তমানেও উনার সাথে রয়েছে পরিপূর্ণ রূহানী নিসবত বা সম্পর্ক। যা কেবল তাছাউফে পূর্ণতাপ্রাপ্ত লোকদের পক্ষেই বুঝা ও অনুধাবন করা সম্ভব। মহা কাযযাব মুসাইলাম তাছাউফ শূন্য বা রূহানী দিক থেকে অন্ধ হওয়ার কারণেই এ ব্যাপারে এরূপ ডাহা মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেছে।
স্মর্তব্য যে, যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কতখানি গভীর সুসম্পর্ক ছিল তার কিছু বাস্তব প্রমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
“রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মূলতঃ মাদারজাদ ওলী। তাই শুরু থেকেই উনার অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়েছে। শিশু অবস্থা থেকেই তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ঘোষিত ছাদিক্বীন। মূলতঃ শরীয়তের একটি উসূল হলো-
النبى نبيا ولو كان صبيا، الولى وليا ولوكان صبيا
অর্থ: যিনি নবী তিনি শিশু অবস্থায়ও নবী, যিনি ওলীআল্লাহ তিনি শিশু অবস্থা থেকেই ওলীআল্লাহ। (শরহে আকাইদুন্ নাসাফী, আল বাইয়্যিনাত)
ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিও ওলীয়ে মাদারজাদ হিসাবেই যমীনে তাশরীফ এনেছেন। শিশু অবস্থা থেকেই অসংখ্য আউলিয়ায়েগণ উনাদের সাথে উনার রূহানী তায়াল্লুক বা সাক্ষাৎ হতো।
একদা আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, ইমামুল আইম্মা, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে রূহানীভাবে বিশেষ সাক্ষাতে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি মুজাদ্দিদ হবেন?
ওলীয়ে মাদারজাদ রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বিনয়ের সাথে জবাব দেন, আমার ইলম-কালাম কিছুই নেই। আমি কি করে মুজাদ্দিদ হব! তখন আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আপনাকে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সমস্ত কিছুই হাদিয়া করা হবে।”
অতঃপর বাইয়াত হওয়ার ফরয আদায়ের লক্ষ্যে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন ঢাকা আলিয়া মাদরাসার মুফাসসিরে কুরআন, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, কুতুবুল আলম, মুফতিউল আ’যম হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী (যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা) রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হন। মাত্র প্রায় দেড় বছরে তিনি চার তরীক্বায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়ে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার চূড়ান্ত সন্তুষ্টি হাছিল করে খিলাফত লাভ করেন। এরপরেও তিনি দীর্ঘদিন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দরবার শরীফ-এ যাতায়াত করেন।
ব্যক্তিগত যোগ্যতা, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের আদব-কায়দা, খাছ ইলমে লাদুন্নী, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের হুবহু অনুসরণ ও দায়িমী তায়াল্লুক তথা অতুলনীয় ইলম, আমল ও ইখলাছে সন্তুষ্ট হয়ে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সম্মানে উনাকে নামধরে না ডেকে ‘শাহ ছাহিব’ বলে সম্বোধন করতেন। সুবহানাল্লাহ!
এমনকি কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সন্তুষ্ট হয়ে একথাও বলেছিলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি আমার জন্য উল্লেখযোগ্য কি করেছেন? আমি বলবো, হে আল্লাহ পাক! যামানার মুজাদ্দিদ ও লক্ষ্যস্থল আপনার খাছ ওলী রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে রেখে এসেছি।” সুবহানাল্লাহ!
জীবনের শেষ দিকে তিনি প্রায়ই রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রশংসা করতেন। একদা তিনি প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, “আমার শাহ ছাহিব হচ্ছেন রসূলে নোমা, তিনি যে কোন সময় যে কোন লোককে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার ঘটিয়ে দিতে পারেন।” সুবহানাল্লাহ!
তিনি প্রায়শঃই স্বীয় মুরীদ-মু’তাকিদদের লক্ষ্য করে বলতেন, “সাবধান! তোমরা কেউ কখনো আমার শাহ ছাহিব উনার সাথে বেয়াদবী করবেনা। যে ব্যক্তি উনার সাথে বেয়াদবী করবে সে অবশ্যই হালাক হয়ে যাবে।”
অনুরূপ অসংখ্য অগণিত প্রশংসা তিনি নিজ যবান মুবারক-এ করেছেন, সেসবের অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী আজও বিদ্যমান রয়েছেন। যে কারণে যাত্রাবাড়ীর অনেক মুরীদ বর্তমানে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক-এ পুনরায় বাইয়াত গ্রহণ করেছেন ও করছেন।
হাদীছে কুদসী শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
ان اوليائى تـحت قبائى لايعرفهم غيرى الا اوليائى
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমার ওলীগণ উনারা আমার কুদরতী জুব্বার নীচে অবস্থান করেন। উনাদের হাক্বীক্বী ফযীলত আমি ও আমার খাছ ওলীগণ ব্যতীত কেউই উপলব্ধি করতে পারেনা।” (রাহাতুল মুহিব্বীন, মসনবীয়ে রূমী, আনীসুল্ আরওয়াহ)
সুতরাং যিনি যামানার মুজাদ্দিদ, মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল তথা সমসাময়িক সকল ওলীআল্লাহগণ উনাদের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদা-মর্তবা ও উচ্চ মাক্বামের অধিকারী, উনার হাক্বীক্বী মর্যাদা কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক ও মহান আল্লাহ পাক যাঁদেরকে উপলব্ধি করার তাওফিক দেন, উনারাই বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারেন।
অতএব, মহা কাযযাব মুসাইলাম “পীর ছাহেবের সাথে সম্পর্ক” প্রসঙ্গে যে তথ্য পরিবেশন করেছে তা সম্পূর্ণরূপেই ডাহা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলো। সে মূলতঃ সাধারণ লোকদেরকে বিভ্রান্ত করার কুট উদ্দেশ্যেই এ ধরনের জঘন্যতম মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।
এবার কাযযাবুদ্দীনের উল্লিখিত পরবর্তী বক্তব্যের জবাবে আসা যাক। কাযযাবুদ্দীন অতঃপর লিখেছে, “………. তিনি বলেন স্বয়ং আল্লাহ ও রসূল তাকে খিলাফত দান করেছেন।”
আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাবুদ্দীনের এ বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, সে এক্ষেত্রেও মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য উল্লেখ করেছে। কারণ কাযযাবুদ্দীন কখনো প্রমাণ করতে পারবেনা যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন ওয়াজ শরীফ-এ অথবা আল বাইয়্যিনাত-এর কোন সংখ্যায় হুবহু একথা উল্লেখ আছে। কাজেই এক্ষেত্রেও সে ডাহা মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যদিও ধরে নেয়া হয় যে, তিনি এ কথা বলেছেন, তাতেই বা অসুবিধা কোথায়? কাযযাবুদ্দীন কি প্রমাণ করতে পারবে যে, এ ধরনের কথা বলা কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ? কস্মিনকালেও সে তা পারবেনা। বরং উক্ত কথার পক্ষেই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ থেকে বহু দলীল পেশ করা সম্ভব। মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই খাছ খিলাফত দিয়ে থাকেন। আর মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি উনার মুরীদকে যে খিলাফত দিয়ে থাকেন, সেটাও মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশেই দিয়ে থাকেন। যেমন, এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে, আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় মাকতুবাত শরীফ-এ ১০৫ নম্বর মকতুবে বলেন, “আমি স্বপ্নে দেখলাম, মাশায়িখ ও বুযূর্গগণ যেরূপ উনাদের খলীফাদেরকে ইজাযতনামা লিখে দেন, তদ্রুপ আমাকে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইজাযতনামা লিখে দিলেন। অতঃপর তা স্বীয় মহরে নুবুওওয়াত মুবারক দ্বারা পরিশোভিত করলেন।” তাতে লিখা ছিল, “পার্থিব ইযাযতনামার পরিবর্তে পারলৌকিক ইযাযতনামা প্রদত্ত হলো। তা দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে শাফায়াতের মাক্বামের অংশ প্রদান করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই ওলীআল্লাহগণ উনাদের খিলাফত হাক্বীক্বীভাবে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই প্রদান করে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক-এ বলেন,
وعد الله الذين امنوا منكم وعملوا الصلحت ليستخلفنهم فى الارض كما استخلف الذين من قبلهم
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াদা করেছেন যে, যারা ঈমান আনবে ও আমলে ছালিহ করবে (হাক্বীক্বী ওলীআল্লাহ হবে) উনাদের জন্য অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি জমীনে খিলাফত প্রদান করবেন, যেমন উনাদের পূর্ববর্তীদেরকে প্রদান করা হয়েছিল।” (সূরা নূর: আয়াত শরীফ – ৫৫)
এ আয়াত শরীফ-এ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই বর্ণনা করেছেন যে, যারা হাক্বীক্বীভাবে ঈমান এনে আমলে ছালেহ করবেন অর্থাৎ যারা খালিছ ওলীআল্লাহ হবেন তথা মহান আল্লাহ পাক ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মতে ও পথে চলবেন, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই উনাদেরকে খিলাফত প্রদান করবেন।
উল্লেখ্য যে, খিলাফত দুই প্রকার (১) জাহিরী খিলাফত বা ইসলামী হুকুমত কায়িম করা, (২) বাতিনী খিলাফত যা বাতিনীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্যে যাঁকে পছন্দ করেন উনাকেই প্রদান করেন। তখন সে ব্যক্তি রূহানীভাবে স্বীয় দায়িত্ব পালন করেন।
যাঁরা গাউছ, কুতুব, আবদাল, ইমাম, ক্বাইয়্যুম, মুজাদ্দিদ ইত্যাদি হন উনাদেরকে বাতিনী খিলাফত প্রদান করা হয়। উনারা রুহানীভাবে সমগ্র জগত পরিচালনা করেন। যা পূর্বের বড় বড় সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদেরকে প্রদান করা হয়েছিল এবং বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, গাউছূল আ’যম, ইমামুল আ’ইম্মা, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে এবং অন্যান্য যত কুতুব ও আবদালগণ পৃথিবীতে রয়েছেন উনাদেরকে প্রদান করা হয়েছে।
সুতরাং রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খিলাফত দিয়েছেন, এ চিরসত্য কথাকে যারা অস্বীকার করবে তারা উপরোক্ত আয়াতে কারীমা অস্বীকারকারী। আর কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াতে কারীমা ও তার হুকুম অস্বীকার করা কুফরী।
এ সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হায়াতে তইয়্যিবাতে উনার দরবার শরীফ-এ একাধিকবার আহলে সুন্নত ওয়াল  জামায়াতের বিশুদ্ধ আক্বীদা থেকে বিপথগামী ওহাবী মতবাদ গ্রহণকারী বাপ-দাদার আদর্শ বাদ দিয়ে শিয়া, রাফিযী ও বিধর্মীদের মত গ্রহণকারী, হক্ব সিলসিলার কলঙ্ক,  কাবিল ও কিনানের ক্বায়িম-মক্বামসহ কয়েকজন নামধারী ওহাবী ব্যক্তি যাত্রাবাড়ী দরবার শরীফ-এ গিয়ে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে কতগুলো ডাহা মিথ্যা কথা বলে খিলাফত কেটে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “খিলাফত কেটে দেয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। কারণ খিলাফত তো আমি দেইনি বরং উনাকে (রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে) স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই খিলাফত দিয়েছেন এবং খিলাফত দিতে আমাকে নির্দেশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনারা যেরূপ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব উনার জাহিরী ও বাতিনী খলীফা ছিলেন, তদ্রুপ পরবর্তী সকল ইমাম মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা সকলেই মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনাদের খলীফা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই উনাদেরকে খিলাফত প্রদান করেন। তাছাড়া আমভাবে যারা হাক্বীক্বী নায়িবে নবী ও সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করেন তারাও “খলীফাতুল্লাহ ও খলীফাতু রসূলিল্লাহ”। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اللهم ارحم خلفائى الذين ياتون بعدى يراؤن احاديث وسنن يعلمو نـها الناس
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান, আয় আল্লাহ পাক! আমার ঐ সমস্ত খলীফাগণ উনাদের প্রতি আপনি রহম (দয়া) করুন, যারা আমার পরে যমীনে আগমন করে আমার হাদীছ শরীফ ও সুন্নাহ সমূহ মানুষকে শিক্ষা দিবেন তথা মানুষের মাঝে সুন্নত জারী করবেন।”
আলোচ্য হাদীছ শরীফ-এ একথাই সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে যে, যিনি পরিপূর্ণরূপে সুন্নতের পাবন্দ ও মানুষের মাঝে সুন্নত জারী করেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই উনাকে خليفة رسول الله (খলীফাতু রসূলিল্লাহ) মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খলীফা লক্বব দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
من امر بالـمعروف ونـهى عن الـمنكر فهو خليفة الله فى الارض وخليفة كتابه وخليفة رسوله
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি সৎ কাজে আদেশ করেন এবং অসৎ কাজে নিষেধ করেন সে ব্যক্তি খলীফাতুল্লাহি ফিল আরদ, খলীফাতু কিতাবিল্লাহ এবং খলীফাতু রসূলিল্লাহ লক্ববের অধিকারী হন।” (মুকাশাফাতুল কুলুব/৪৮)
আর একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ফরয-ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা তো অবশ্যই পালন করেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নতে যায়িদাহ-এর খিলাফও কোন আমল করেন না। বরং তিনি মাথার তালু মুবারক থেকে পায়ের তলা মুবারক পর্যন্ত পরিপূর্ণরূপে সুন্নতের অনুসরণ করেন। যে কারণে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘোষিত সেই خليفة الله (খলীফাতুল্লাহ) خليفة رسول الله (খলীফাতু রসূলিল্লাহ্) خليفة كتاب الله (খলীফাতু কিতাবিল্লাহ) মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম-এর খলীফা বা প্রতিনিধি লক্ববের পরিপূর্ণ মিছদাক। কাজেই যামানার মুজাদ্দিদ, গাউছূল আ’যম, ইমামুল আইম্মা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই খিলাফত দিয়েছেন ও দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, খাছ খিলাফত মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই দিয়ে থাকেন। আর মুর্শিদ ক্বিবলা বা পীর ছাহেব যে খিলাফত দেন সেটাও মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশেই দিয়ে থাকেন। এটা কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোন কথা নয়, বরং কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ সম্মত কথা।

No comments:

Post a Comment