Saturday, November 26, 2016

বুযূর্গদের প্রশংসা করা সম্পর্কে মিথ্যাচারিতা

কাযযাবুদ্দীন লিখেছে, “………. তিনি বিভিন্ন বুযূর্গ সম্পর্কে অতি উচ্চ মাত্রায় বাড়াবাড়ি করে কিছু প্রশংসা করেছেন। ….. যেমন তিনি বলেন,
১.    কেউ যদি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত মাকতুবাত শরীফ পড়ে (পড়াকালীন সময়ে) যদিও সে নবী নয়, তবুও নবীদের দফতরে তার নাম থাকে। ………।”
২.    রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে ‘গাউছুল আ’যম দাবি করেন। আর উনার পত্রিকায় গাউছুল আ’যম বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে বলা হয়েছে, গাউছুল আ’যম সাইয়্যিদুল আওলিয়া মুহিউদ্দীন বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “কোন চাঁদ উদিত হয় না কোন সূর্য অস্ত যায় না আমার অনুমতি ব্যতীত” … অতঃপর একটু সামনে গিয়ে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিও সেরূপ ক্ষমতা রাখেন সেদিকে ইঙ্গিত করে পত্রিকাটিতে লিখা হয়েছে, “উল্লেখ্য এ ধরনের আখাছ্ছুল খাছ মর্যাদা-মর্তবার ওলী আল্লাহর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সমাসীন …… রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।” (আল বাইয়্যিনাত ৭১তম সংখ্যা ১৩৯ পৃষ্ঠা)

কাযযাবুদ্দীন উক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছে, “চাঁদ, সূর্য অস্ত যাওয়া, উদিত হওয়ার মত প্রাকৃতিক পরিচালনা (تصرفات عالم) কোন মানুষের অনুমতি বা ইচ্ছায় সংঘটিত হয় বলে কেউ বিশ্বাস করলে সে নিশ্চিত কাফির হয়ে যায়। বিশেষতঃ সূর্যের ব্যাপারে স্পষ্টতঃ হাদীছ শরীফ-এ এসেছে যে, সূর্য আল্লাহ পাক উনার আরশের নিচে সিজদায় পড়ে আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে অনুমতি প্রার্থনা করে অনুমতি লাভ হলে সে উদিত হয়। (বুখারী শরীফ)
মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাবুদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য ও মন্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি “বুযূর্গদের প্রশংসা করতে গিয়ে অতি উচ্চ মাত্রায় বাড়াবাড়ি করেন।” কাযযাবুদ্দীনে এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। কারণ সত্য কথা হলো রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি কোন ব্যক্তি বা কিতাব সম্পর্কেই যেরূপ অতিরিক্ত প্রশংসা করেন না, তদ্রুপ এক্ষেত্রে বিনা দলীলেও কোন কথা বলেন না। যিনি বা যে কিতাব যতটুকু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য ততটুকুই তিনি বর্ণনা করেন। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জগত বরেণ্য, বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য ও বিশুদ্ধ কিতাব ‘মাকতুবাত শরীফ’-এর ভূমিকাতেই বলা হয়েছে, “ওলী-আল্লাহগণ উনারা সকলেই বলে থাকেন, যতক্ষণ মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী ভক্তি বিশ্বাসসহ পঠন ও শ্রবণ করা যায়, ততক্ষণ তাদের নাম পয়গাম্বর (আলাইহিমুস্ সালাম)গণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং মছনবী রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি পঠন ও শ্রবণকালে ওলীআল্লাহগণ উনাদের শামিল থাকে, যদিও তারা ওলীআল্লাহ না হয়।” (মাকতুবাত শরীফ-এর ভূমিকা, পৃষ্ঠা-৫)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘মাকতুবাত শরীফ’ সম্পর্কে যে কথা বলেছেন তা পূর্ববর্তী সকল ওলীগণ উনাদেরই কথা আর ‘মাকতুবাত শরীফ’ সম্পর্কিত উপরোক্ত প্রশংসা মোটেও অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি নয় বরং এটাই যথাযথ এবং শরীয়তসম্মত। কেননা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে,
من جاء الـموت وهو يطلب العلم ليحيى به الاسلام فبينه وبين النبين درجة واحدة فى الجنة
অর্থ: যে ব্যক্তি এ অবস্থায় ইন্তিকাল করলো যে, সে ইসলামকে জিন্দা করার উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করতে ছিল। জান্নাতে তাঁর মধ্যে আর নবীগণ উনাদের মধ্যে একটি মাত্র দরজা বা পার্থক্য থাকবে। অর্থাৎ সে নবী না হয়েও নবীর মাক্বাম লাভ করবে।” (দারিমী ও মিশকাত)
কাজেই এক্ষেত্রে কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো।
দ্বিতীয়তঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে যে প্রশংসা করা হয়েছে তাও অতি উচ্চ মাত্রায় বাড়াবাড়ি নয়। বরং যথাযথ ও দলীলভিত্তিক। সেটা মনগড়া বা বানানো কোন কথা নয়। স্বয়ং গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই একথা বলেছেন। আর এ উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও বুযূর্গ হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই উনার রচিত সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘বাহযাতুল আসরার’-এর সংক্ষিপ্তসার “জুবদাতুল আছার”-এর ৮১ পৃষ্ঠায় তা বর্ণনা করেছেন।
উক্ত কিতাবে বর্ণিত আছে,
شیخ ابو القاسم عمر بن مسعود بزاز اور شیخ ابو حفص عمر  یکمانی رحمھم اللہ روایت کر تے ہیں کہ ایک دفعہ شیخ سید عبد القادر جیلانی بادلو میں سیر کرتھے اور اپ تمام اھل مجلس کے سروں پرتھے تواپ نے فرمایا جب تک افتاب مجھے سلام نہ کرے طلوع نھیں ھونا ہر سال اینے اغاز سے پھلے میرے پاس اتاھے اور مجے اہم واقعات سے اکاہ کرتا ہے اسی طرح ماہ وہفتہ میرے پاس اکر سلام کہتے ہیں اور اپنے دوران جو چیزیں رونما ہونے والی ہوتی ہیں مجھے اگاہ کرتے
অর্থ: “শায়খ আবুল কাসেম উমর বিন মাসউদ এবং শায়খ আবুল হাফছ উমর রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বর্ণনা করেন, একবার শায়খ সাইয়্যিদ আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মজলিসে সমবেত লোকদের মাথার উপর মেঘমালায় পরিভ্রমণরত ছিলেন। তিনি বলেন, সূর্য যতক্ষণ আমাকে সালাম না দেয় (অর্থাৎ আমার থেকে অনুমতি না নেয়) ততক্ষণ উদিত হয় না। প্রতিটি নতুন বছর শুরুর আগে আমার কাছে আসে এবং ঘটমান গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে। অনুরূপ মাস ও সপ্তাহ আমার কাছে এসে আমাকে সালাম দেয় এবং স্বীয় কালে ঘটমান ঘটনাবলী সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেন।”
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কিত উপরোক্ত প্রশংসা অতি উচ্চমাত্রায় বাড়াবাড়ি নয়। বরং যথাযথ ও সঠিক। কারণ স্বয়ং রঈছুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন যে, “সূর্য গাউছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এসে সালাম দিয়ে  বা উনার নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে উদিত হয়।”
কাযযাবুদ্দীন লিখেছে “চাঁদ-সূর্য মানুষের অনুমতিতে অস্ত যায় বা উদিত হয় বলে বিশ্বাস করলে কাফির হয়ে যাবে।” এখন প্রশ্ন হলো- তবে কি কাযযাবুদ্দীনের মতে গাউছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা কাফির” নাঊযুবিল্লাহ!
তাছাড়া হাদীছ শরীফ-এই রয়েছে যে, পৃথিবীতে সর্বদাই এমন কিছু বুযর্গ থাকবেন যাদের ওসীলা বা ইচ্ছায় জগতের অনেক কিছুই পরিচালিত হবে। যার দলীলভিত্তিক বিস্তারিত বর্ণনা পূর্বে দেয়া হয়েছে। তবে কি কাযযাবুদ্দীনের মতে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব তিনিও কাফির? (নাউযুবিল্লাহি মিন মালউনিল আযীম)
উল্লেখ্য কাযযাবুদ্দীন এক্ষেত্রে বুখারী শরীফ-এর উক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে চরম জিহালতীর পরিচয় দিয়েছে। কারণ একথা তো সকলেরই জানা যে, শুধু সূর্য কেন  মহান আল্লাহ পাক ছাড়া যা কিছু রয়েছে সবই মহান আল্লাহ পাক উনার অনুমতি সাপেক্ষে পরিচালিত হয়। তাই বলে উক্ত  হাদীছ শরীফ-এ তো আর একথা উল্লেখ নেই যে, সূর্য উদিত হওয়ার সময় অন্য কারো অনুমতি নেয় না বা অন্য কারো অনুমতিতে সূর্য উদিত হয়, বিশ্বাস করা কুফরী।
কাযযাবুদ্দীনের একথার পিছনে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোন দলীল আছে কি যে, কোন মানুষের ইচ্ছায় সূর্য উদিত হয় মনে করা কুফরী? মূলত এর স্বপক্ষে কোন দলীলই সে পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে সূর্যসহ পৃথিবীর অনেক কিছুই যে, গাউছ, কুতুব, আবদাল, নক্বীব, নুজাবা ও ক্বাইয়্যূমগণ উনাদের ইচ্ছায় পরিচালিত হয়, তার বহু প্রমাণ পেশ করা সম্ভব। যেমন, কিছু প্রমাণ পূর্ববর্তী “কাইয়্যূম শীর্ষক” আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই এক্ষেত্রে বুখারী শরীফ-এর উক্ত হাদীছ শরীফকে উল্লেখ করা কাযযাবুদ্দীনের জিহালতী ও প্রতারণা মাত্র।
কাযযাবুদ্দীন গালী শিয়াদের প্রসঙ্গ টেনে এনে লিখেছে যে, “গালী শিয়ারা মনে করতো আল্লাহ পাক জগত পরিচালনার দায়িত্ব হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার উপর ন্যস্ত করেছেন, তাই তাদেরকে কাফির ফতওয়া দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কাযযাবুদ্দীন এটাই বুঝাতে চেয়েছে, যারা মনে করবে জগত পরিচালনার দায়িত্ব মানুষের হাতে রয়েছে তারা শিয়াদের ন্যায় কাফির।”
মূলতঃ কাযযাবুদ্দীন এক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। কারণ “জগত পরিচালনার দায়িত্ব হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার উপর ন্যস্ত একথা বিশ্বাস করার কারণে গালী শিয়াদেরকে কাফির ফতওয়া দেয়া হয়নি। বরং তাদেরকে কাফির ফতওয়া দেয়া হয়েছে এজন্য যে, তারা মনে করতো হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনিই আল্লাহ বা খালিক, অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার ছূরতে পৃথিবীতে এসেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! আর এ কারণেই তাদেরকে কাফির ফতওয়া দেয়া হয়েছে।
সুতরাং কাযযাবুদ্দীন যে লিখেছে, “জগত পরিচালনার দায়িত্ব হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার উপর ন্যস্ত ছিল একথা মনে করার কারণেই গালী শিয়াদেরকে কাফির ফতওয়া দেয়া হয়েছে।” তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সে মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে নিজ থেকেই এ বক্তব্য জুড়ে দিয়েছে। নচেৎ কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ ও অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নবী-রসূল, ছাহাবায়ে কিরাম, ওলীআল্লাহ ও ফেরেশ্তাগণ উনাদের অনেকের উপরই জগত পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল বা রয়েছে। আর মূলতঃ এটিই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বীদা। কাজেই গালী শিয়াদের উদাহরণ টানা কাযযাবুদ্দীনের আরেকটি প্রতারণা মাত্র।
স্মরনীয় যে, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল ও গোমরাহ কাযযাবুদ্দীন তার গোমরাহীমূলক রেসালা “ভ্রান্ত মতবাদে” রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে যে সকল জিহালতী ও গোমরাহী উদগীরণ করেছে, তার মূল বিষয়বস্তু হলো- সে লিখেছে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নাকি নিজের বুযূর্গী ও মর্যাদা প্রকাশ করার জন্যে তিন ধরনের পন্থা অবলম্বন করেছেন, ১. নামের পূর্বে লক্বব ব্যবহার করা, ২. নিজের এবং অন্যের স্বপ্ন বর্ণনা করা, ৩. পূর্ববর্তী বুযূর্গদের  প্রশংসা করে তিনি নিজেও এরূপ এটি প্রমাণ করা। (নাউযুবিল্লাহ)
কাযযাবুদ্দীনের উক্ত জিহালতপুর্ণ ও গোমরাহীমূলক বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে, “নিজের বুযূর্গী বা মর্যাদা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে বা নিয়তে লক্বব ব্যবহার করেন, স্বপ্ন বর্ণনা করেন এবং পূর্ববর্তী বুযূর্গদের প্রশংসা করেন,” এটা কাযযাবুদ্দীন জানলো বা বুঝলো কিভাবে? উদ্দেশ্য বা নিয়তটা তো ক্বলব বা অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর ক্বলব বা অন্তরের খবর তো একমাত্র আল্লাহ পাক তিনিই জানেন। তবে কি কাযযাবুদ্দীন ‘আল্লাহ’ হওয়ার দাবি করছে? (নাউযুবিল্লাহ)
মূলতঃ লক্বব ব্যবহার বা প্রকাশ করা, নিজের বা অন্যের স্বপ্ন বর্ণনা করা এবং পূর্ববর্তীদের প্রশংসা বর্ণনা করা সবগুলোই খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লক্বব মুবারক প্রকাশ করেছেন, নিজের স্বপ্ন বা ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের স্বপ্ন বর্ণনা করেছেন এবং পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের প্রশংসা বর্ণনা করেছেন। এ খাছ সুন্নত আদায়ের উদ্দেশ্যে বা নিয়তেই মুহইস্ সুন্নাহ রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি লক্বব মুবারক ব্যবহার বা প্রকাশ করেন, নিজ স্বপ্ন বা মুরীদানদের স্বপ্ন বর্ণনা করেন এবং পূর্ববর্তী গাউছ, কুতুব, ক্বাইয়্যূম তথা ওলীগণ উনাদের প্রশংসা করে থাকেন।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লক্বব ব্যবহার করেছেন বা নিজের লক্বব নিজেই প্রকাশ করেছেন, নিজের এবং অপরের স্বপ্ন বর্ণনা করেছেন এবং পূর্ববর্তীদের প্রশংসা বর্ণনা করেছেন। তাই বলে কি কাযযাবুদ্দীন বলবে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের বুযূর্গী প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে উপরোক্ত পন্থা বা কৌশল অবলম্বন করেছেন? (নাউযুবিল্লাহ)
তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, পূর্ববর্তী ইমাম-মুজতাহিদ বা ওলীগণ উনাদের অনেকেই লক্বব ব্যবহার ও প্রকাশ করেছেন, স্বপ্নও বর্ণনা করেছেন এবং উনাদের পূর্ববর্তী নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ী, তথা ওলীগণ উনাদের বহু প্রশংসা করেছেন। তার বহু প্রমাণ সীরাত গ্রন্থসমূহে রয়েছে। তাই বলে কি কাযযাবুদ্দীন বলবে যে, উনারা নিজেদের বুযূর্গী প্রকাশের উদ্দেশ্যেই এ ধরনের পন্থা বা কৌশল অবলম্বন করেছেন। অথবা নবী-রসূল ছাহাবাদের প্রশংসা করার অর্থ কি এই যে, উনারা নিজেদেরকে নবী-রসূল ছাহাবা উনাদের ন্যয় মর্যাদার অধিকারী বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন? (নাউযুবিল্লাহ)
মূলতঃ কারো প্রশংসা বর্ণনা করলে যদি নিজেই উক্ত মর্যাদার অধিকারী হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে, তবে তো মহান আল্লাহ পাক, নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের প্রশংসা করা যাবে না। কারণ উনাদের প্রশংসা করা এ ইঙ্গিতই বহন করে যে, সে অর্থাৎ প্রশংসাকারীও আল্লাহ পাক, নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ন্যায় মর্যাদার অধিকারী! (নাউযুবিল্লাহ) কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যের দ্বারা কি এটাই বুঝায় না?
সবশেষে বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীনের মুরুব্বী পূর্ববর্তী দেওবন্দীদের অনেকের জিবনীতে বিশেষ করে থানবীর জীবনীতে উল্লেখ আছে যে, তারা লক্বব ব্যবহার ও প্রকাশ করেছে। নিজের স্বপ্ন ও মুরীদানদের স্বপ্ন বর্ণনা করেছেন এবং পূর্ববর্তী বুযূর্গদের প্রশংসা বর্ণনা করেছে। যেমন এ প্রসঙ্গে থানবী তার নিজের লেখনীতে (থানবীর নির্বাচিত ঘটনাবলী ক্বারী আবুল হাসান, দেওবন্দ) নিম্নোক্ত ঘটনা সংকলন করেছেন:
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ রেফায়ী উনার মর্যাদা
“হযরত সাইয়্যিদ আহমদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমসাময়িক বুযূর্গ ছিলেন উনার কাছে উনার এক মুরীদ জিজ্ঞাসা করল যে, আপনার মর্যাদাও কি বড় পীর ছাহেব উনার সমান? তিনি বলেন, তোমার শায়খকে বড় পীর ছাহেব উনার উর্ধ্বে মনে করো। মুরীদ বলল, তাহলে কি আপনি কুতুব? তিনি আবার বললেন, “তোমার পীরকে কুতুবেরও উর্ধ্বে মনে কর।…।”
কাযযাবুদ্দীনের কথা মতে কি এটাই ছাবেত হয় না যে, থানবী নিজের বুযূর্গী জাহির করার উদ্দেশ্যে উক্ত পন্থা বা কৌশল অবলম্বন করেছে এবং শায়খ আহমদ রেফায়ী উনার প্রসঙ্গ টেনে থানবী নিজেই যে, বড় পীর ছাহেব উনার চেয়েও বড় তা প্রমাণ করেছে। এক্ষেত্রে কাযযাবুদ্দীন কি জবাব দিবে?
তাছাড়া কাযযাবুদ্দীন নিজেই তার “ভ্রান্ত মতবাদে” পূর্ববর্তী অনেকের প্রশংসা বর্ণনা করেছে এবং অনেকের অনেক ঘটনা বর্ণনা করেছে। যেমন সে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ঘটনা বর্ণনা করেছে। ঘটনাটি নিম্নরূপ-
“হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে একজন লোক দশ বছর পর্যন্ত ছিলেন। এই দশ বছরের মধ্যে উক্ত লোকটি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে অলৌকিক কিছু ঘটতে দেখেননি। একদিন সে মনে মনে ভাবলো, এই দশ বছর থাকলাম, অলৌকিক কিছু দেখলাম না, অতএব এখানে থেকে আর কী হবে? আগামীকাল চলে যাব। সকাল বেলায় হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বল তোমার মনে কি ইচ্ছা জেগেছে? সে বললো, হযরত, এতদিন আপনার কাছে থেকে কোনই কারামত দেখলাম না। তাই আজ আমি চলে যাব বলে ইচ্ছা করেছি। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তোমার কি কারামত আছে? সে বললো হুজুর! আমি ধ্যান করে কবরের মধ্যে ঢুকে যেতে পারি এবং মুর্দার সাথে কথা বলে তার খবরাখবর জেনে আসতে পারি। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তুমি ধ্যান করে কবরের ভিতর ঢুকে যেয়ে তাদের অবস্থা জানবে। আর আমি এখানে বসে ডাক দিলে সেরহিন্দের সব রূহ হাজির হয়ে যাবে।….।” (মাজালিসে হাকীমুল উম্মাত)
কাযযাবুদ্দীনের নিকট প্রশ্ন? তবে কি কাযযাবুদ্দীন উক্ত ঘটনা বর্ণনা করে এদিকেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, সেও অনুরুপ ক্ষমতার অধিকারী বা তার মর্যাদাও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুরূপ? (নাউযুবিল্লাহ)
তাছাড়া কেউ যদি সত্যিই লক্বব, স্বপ্ন ইত্যাদি প্রকাশ বা বর্ণনা করে নিজের বুযূর্গী বা মর্যাদা প্রকাশ করতে চায়, তবে তাতেই বা দোষ কোথায়? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও কি নিজের বুযূর্গী বা মর্যাদা প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে? নিষেধ করা হয়নি বরং কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
واما بنعمة ربك فحدث
অর্থ “তোমার রব উনার পক্ষ হতে প্রাপ্ত নিয়ামত প্রকাশ বা বর্ণনা কর।” (সূরা দুহা: আয়াত শরীফ – ১১)
এ আয়াত শরীফ-এর ভিত্তিতে অতীতের অনেক বড় বড় ও অনুসরনীয় ওলীগণ উনারা স্বপ্ন, ইলহাম, ইলক্বা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাপ্ত লক্বব বা বুযূর্গী প্রকশ করে দিয়েছেন। যদি এটা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর খিলাফই হতো তবে উনারা তা প্রকাশ বা বর্ণনা করতেন না।
অতএব, এতেই প্রমানিত হয় যে, নিজের বুযূর্গী বা মর্যাদা প্রকাশ করা যেরূপ জায়িয ও সুন্নত, তদ্রুপ নিজের বুযূর্গী প্রকাশের জন্যে লক্বব ব্যবহার করা স্বপ্ন বর্ণনা করাও জায়িয ও সুন্নত। কাযযাবুদ্দীন যদি এটাকে শরীয়ত বিরোধী মনে করে থাকে তবে তাকে দলীল পেশ করতে হবে। কারণ শরীয়তে বিনা দলীলে কোন কিছুই গ্রহণ যোগ্য নয়।

No comments:

Post a Comment