Saturday, November 26, 2016

নাম মুবারক সম্পর্কে জিহালতী ও মিথ্যাচারিতা

নাম মুবারক সম্পর্কে জিহালতী ও মিথ্যাচারিতা
উক্ত মহা কাযযাব তার ভ্রান্তিমূলক রেসালা “আদদ্বীনে” আরো লিখেছে, “………… মজার ব্যাপার হচ্ছে, ‘দিল্লুর রহমান’ নামটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, রহমান (আল্লাহ পাক) যাকে গোমরাহ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
জিহালতী ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
মহা কাযযাব মুসাইলাম এবার প্রমাণ করলো যে, সে শুধু  মহা কয্যাবই নয় বরং সে মহা জাহিল অর্থাৎ আশাদুদ দরজার জাহিলও বটে। কারণ সে নিজেকে ‘শায়খুল হাদীছ’ বলে প্রচার করছে, অথচ মীযান বা তৃতীয় শ্রেণীর জ্ঞানও তার নেই। আর এ কারণেই সে ‘নাম মুবারক’-এর ভুল অর্থ করেছে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি তোহমত দিয়ে কুফরী করে বসেছে। তার বক্তব্য হলো, “মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে গোমরাহ করেন।” নাঊযুবিল্লাহ! অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে গোমরাহ করেন না। বরং বান্দাই তার বদ আক্বীদা ও আমলের কারণে গোমরাহ হয়ে যায়। কাজেই প্রমাণিত হলো, তার মধ্যে কুফরী আক্বীদা রয়েছে।
স্মর্তব্য যে এ ধরনের জিহালতী ও কুফরীমূলক বক্তব্য মহা কাযযাবের গুরু শাইখুল কাযযাব মাহিউদ্দীনও তার মদীনা পত্রিকায় দিয়েছিল। মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৩তম সংখ্যায় মতামত বিভাগে তার দাঁতভাঙ্গা দলীলভিত্তিক জবাব দেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সে নাম মুবারকের ব্যাপারে টু শব্দ করার সাহস পায়নি। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে জাহিলদের জিহালতী দূর করার উদ্দেশ্যে আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৯তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে নাম মুবারকের দলীল ভিত্তিক তাহক্বীক্ব উল্লেখ করা হয়। মহা কাযযাব ও মহা জাহিল মুসাইলামের দাঁতভাঙ্গা জবাব স্বরূপ উক্ত মতামত ও সুওয়াল জবাবটি হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলো-
নাম মুবারক ও লক্বব মুবারক সম্পর্কে

মদীনা সম্পাদকের জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ
মাসিক মদীনার ডিসেম্বর ’৯৩ইং সংখ্যায় সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে মুহম্মদ রফীকুল ইসলাম-এর প্রশ্নের জবাবে আমার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহিউস সুন্নাহ, মুজাদ্দিদুয যামান হযরত মাওলানা শাহ ছুফী শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক-এর যে অর্থ করা হয়েছে এবং লক্বব মুবারক সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করছি। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদকের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, কল্পনা প্রসূত, হিংসাত্মক, অজ্ঞতাপূর্ণ এবং কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ বিরোধী।
মদীনা সম্পাদকের বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে সে আউলিয়ায়ে কিরাম ও ইলমে তাছাউফ সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ ও জাহিল। এ ব্যাপারে তার জ্ঞান একেবারেই সীমিত, যার কারণেই সে এরূপ বক্তব্যের অবতারণা করেছে এবং এ ব্যাপারে তার মতাদর্শীরাও তথৈবচ।
এ প্রসঙ্গে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে-
وما لـهم به من علم ان يتبعون الظن وان الظن لا يغنى من الـحق شيئا
অর্থ: “এ বিষয়ে তারা একেবারেই জাহিল, তারা শুধু জল্পনা-কল্পনার অনুসরণ করে এবং সত্যের মোকাবেলায় জল্পনা-কল্পনা মোটেই ফলপ্রসূ নহে।” (সূরা নজম: আয়াত শরীফ – ২৮)
মাহিউদ্দীনের অবস্থা হয়েছে ঠিক তাই। সে বিনা তাহ্ক্বীকে শুধু জল্পনা-কল্পনার অনুসরণ করে নাম মুবারক ও লক্বব মুবারক সম্পর্কে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছে। সে আমাদের মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক-এর যে মিথ্যা, ভ্রান্তিকর ও জিহালতপূর্ণ অর্থ করেছে, আমি সর্বপ্রথম তার তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং নাম মুবারকের সঠিক অর্থ ও তাহক্বীক পাঠক সম্মুখে তুলে ধরছি।
মাহিউদ্দীন নাম মুবারক-এর যে অর্থ করেছে, তা মোটেও শুদ্ধ হয়নি, কারণ সে বাংলা শব্দের উপর ক্বিয়াস করে এরূপ বিরূপ অর্থ পেশ করেছে। কেননা বাংলায় দাল (د)-এর উচ্চারণ ও দোয়াদ (ض)-এর উচ্চারণ একই রকম হয়।
অতএব, তার প্রথমে তাহক্বীক করা উচিত ছিল, বিনা তাহ্ক্বীকে ক্বিয়াস বা ধারণা করে এরূপভাবে হাক্কানী আলিম ও মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বজন স্বীকৃত ওলী উনার নাম মুবারক-এর বিরূপ অর্থ করা মোটেও জায়িয হয়নি।
মাহিউদ্দীনের অবশ্যই জানা থাকার কথা একজন সাধারণ মুসলমান ব্যক্তি তার কোন সন্তান হলে সে আলিমদের দ্বারা তার সন্তানের একটি সুন্দর ও শরীয়তসম্মত নাম রাখার চেষ্টা করেন। যদি একজন সাধারণ মুসলমানের বেলায় এটা হয়ে থাকে, তবে যিনি বিজ্ঞ আলিম হাক্কানী আল্লাহওয়ালা যামানার মুজাদ্দিদ তিনি কি করে বিরূপ অর্থবোধক নাম ধারণ করতে পারেন? এটা কোন মূর্খ লোকের পক্ষেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। মূলতঃ মাহিউদ্দীন হিংসার বশবর্তী হয়েই নাম মুবারক-এর মনগড়া অর্থ করেছে।
মাহিউদ্দীন একখানা দলীলও পেশ করতে পারবে না যে, আমাদের মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি দোয়াদ (ض) অর্থাৎ (ضل) দিয়ে নাম লিখে থাকেন। বরং আমি বহু দলীল পেশ করতে পারবো যে, আমাদের মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি দাল (د) অর্থাৎ (دل) দিয়ে নাম লিখে থাকেন। সুতরাং মাহিউদ্দীনের নিকট যদি ضل দিয়ে নাম লেখার প্রমাণ না থাকে তবে সে কিভাবে বুঝলো যে, নামের অর্থ দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে পথভ্রষ্টকারী। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين
অর্থ: “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে দলীল পেশ কর”। (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ – ১১১)
আর যদি মাহিউদ্দীন বাংলা শব্দের উপর ক্বিয়াস করে নামের অর্থ করে থাকে, তবে আমি বলবো মাহিউদ্দীন “জিল্লুর রহমান”-এর কি অর্থ করবে? যাল (ذ) দিয়ে করবে? না (ظ) যোওয়া দিয়ে করবে? কারণ “জ” অক্ষরটি তো যাল ও যোওয়া উভয় অক্ষরের জন্য ব্যবহৃত হয়। সুতরাং মাহিউদ্দীন যদি “জিল্লুর রহমান”-এর অর্থ বাংলা শব্দের উপর ধারণা করে (ذ) অর্থাৎ (ذل) দিয়ে করে থাকে তবে তার অর্থ হবে “দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে লাঞ্ছিত ব্যক্তি”। আর যদি (ظ) অর্থাৎ (ظل) দিয়ে করে থাকে তবে তার অর্থ হবে “দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে ছায়াপ্রাপ্ত”। কাজেই বাংলা শব্দের উপর ধারণা করে কোন নামের অর্থ করলে সেটা অবশ্যই ভুল হবে।
অনুরূপভাবে যদি “দিল্লুর রহমান”-এর অর্থ বাংলা শব্দের উপর ধারণা করে (ض) অর্থাৎ (ضل) দিয়ে করা হয়, তবে তার অর্থ মাহিউদ্দীনের দেওয়া অর্থ হবে। আর যদি (د) অর্থাৎ (دل) দিয়ে করা হয়, তবে তার অর্থ হয়, (অর্থাৎ دل الرحـمن -এর অর্থ হয়) “দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে শান্তিপ্রাপ্ত ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী”। আর এ নাম মুবারক-এর বাস্তব উদাহরণ হলো নাম মুবারক-এর পূর্বে ব্যবহৃত লক্বব মুবারকসমূহ। যে সকল লক্বব মুবারকগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতেই আল্লাহওয়ালা উনাদেরকে দেওয়া হয়ে থাকে। এগুলো কোন অভিধান গ্রন্থ হতে কুড়িয়ে নেওয়ার বস্তু নয়।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যদি দাল্লুন (دل) মাছদার হয়ে থাকে, তবে দিল্লুন (دل) না হয়ে দাল্লুন হবে, দাল-এর মধ্যে যের হ’ল কেন? এর জবাব হলো আরবী ব্যাকরণে এমন অনেক শব্দই রয়েছে, যে শব্দগুলোকে খিলাফে ক্বিয়াস ((خلاف قياس যবরের পরিবর্তে যের দিয়ে পড়া হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে দাল্লুনকেও খিলাফে কিয়াস দিল্লুন বলা হলে অশুদ্ধ হবে কেন? সুতরাং আমাদের মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক হলো-
مـحمد دل الرحـمن
যার অর্থ হলো- “দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে শান্তিপ্রাপ্ত ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই মাহিউদ্দীনের বিনা দলীলে এবং তাহ্ক্বীক না করে শুধুমাত্র বাংলা শব্দের উপর ধারণা করে এরূপ একটি জঘন্য মিথ্যা বক্তব্য পেশ করা অবশ্যই কুফরী হয়েছে। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, মাহিউদ্দীনের আরবী ভাষা ও ব্যাকরণের প্রতি দূর্বলতা রয়েছে। আরবী ভাষার প্রতি যে তার  দূর্বলতা রয়েছে, তার বক্তব্যই এর প্রমাণ বহন করে, কেননা সে নাম মুবারক-এর পূর্বে ব্যবহৃত লক্বব মুবারক সমূহ জটিল অর্থবোধক বলে নিজেই স্বীকার করেছে। কাজেই যার নিকট লক্বব মুবারক সমূহ জটিল অর্থবোধক মনে হয়, সে যে আরবী ভাষা ও ব্যাকরণের প্রতি দূর্বল তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। যদি আরবী ভাষা ও ব্যাকরণের প্রতি দূর্বলতা নাই থাকতো, তবে সে কেন বুঝলো না যে, (دل) দাল্লুন মাছদার হতেও (دل الرحـمن) ‘দিল্লুর রহমান’ লেখা যেতে পারে। সুতরাং শুধু বাংলা শব্দের উপর ধারণা করে নামের অর্থ করা শরীয়তসম্মত হয়নি। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ্ শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
ان بعض الظن اثـم
অর্থ: “নিশ্চয় অনেক ধারণাই গুনাহর কারণ।” (সূরা হুজুরাত: আয়াত শরীফ  – ১২)
তাই ধারণা করে কোন কথা বলা ঠিক হবে না, কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে হলে প্রথমে সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে জানতে হবে এবং দলীল-প্রমাণসহ তা পেশ করতে হবে। ” (মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৩তম সংখ্যা, মতামত বিভাগ)
আবূ তাহের মুহম্মদ সিবগাতুল্লাহ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
সুওয়ালঃ আমরা বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাতের” প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারকের অর্থ ও তাহক্বীক্ব জানতে আগ্রহী। দয়া করে নাম মুবারকের অর্থ ও তাহ্ক্বীক্ব দলীলসহ জানায়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক (دل الرحـمن) “দিল্লুর রহমান”-এর অর্থ হলো- দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে শান্তিপ্রাপ্ত ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী।
মূলতঃ دل (দিল্লুন) শব্দটি الدل (আদ দাল্লু) মাছদার থেকে উদ্ভুত। আর الدل (আদ দাল্লু) শব্দের লোগাতী অর্থ হলো- শান্তি, ইতমিনান ও উত্তম চরিত্র। دل শব্দটি মোজাফ আর الرحمن (আর রহমান) শব্দটি মুজাফ ইলাইহি। মুজাফ ও মুজাফ ইলাইহি মিলে মুরাক্কাবে ইজাফী বা সম্বন্ধসূচক বাক্য হয়েছে। যার তারক্বীবী অর্থ দাঁড়ায় রহমান উনার শান্তি, ইতমিনান ও উত্তম চরিত্র। অর্থাৎ দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে শান্তি ও এতমিনানপ্রাপ্ত এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি الدل (আদ দাল্লু) মাছদার হয়ে থাকে, তবে دل (দিল্লুন) না হয়ে অর্থাৎ দাল (د)-এর মধ্যে যের না হয়ে যবর হবে। দালের মধ্যে যের হলো কেন?
এর জবাব হলো- আরবী ব্যাকরণে এমন অনেক শব্দই রয়েছে যে শব্দগুলো খিলাফে ক্বিয়াস (خلاف قياس) পেশের স্থলে যবর, যবরের স্থলে যের দিয়ে পড়া হয়। অনুরূপ দাল্লুনকেও খিলাফে ক্বিয়াস যের দিয়ে দিল্লুর রহমান পড়া হয়। (লিসানুল আরব, মিছবাহুল লোগাত, আল্ মুনজিদ, পাঞ্জেগাঞ্জ, ইল্মুছ্ ছীগা, কাওয়ায়েদুছ্ ছরফ ইত্যাদি)
অতএব, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহা কাযযাব, আশাদুদ্ দরজার জাহিল মুসাইলাম- “খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক সম্পর্কে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণ ভুল, বিভ্রান্তিমূলক দলীলবিহীন, জিহালতপূর্ণ ও কুফরীমূলক হয়েছে।

No comments:

Post a Comment