Saturday, November 26, 2016

ছিদ্দীক্বে আকবর-এর চেয়েও মাক্বাম ঊর্ধ্বে হওয়া সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

কাযযাবুদ্দীন তার “ভ্রান্ত মতবাদে” মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৭৩তম সংখ্যার ‘মতামত বিভাগে’ প্রদত্ত একটি বক্তব্য কাঁটছাট করে উপস্থাপন করেছে। যা দ্বারা সে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে যে, “রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন কাযযাবুদ্দীন)
যেমন সে লিখেছে, “………. কিন্তু রাজারবাগের মুর্শিদ ক্বিবলা (আলাইহিস সালাম) এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। যেমন উনার আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লেখা হয়েছেঃ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেনঃ- “আমি উরুয করতে করতে ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম অতিক্রম করলাম।” ……….. এরপর পত্রিকাটিতে মন্তব্য করা হয়েছে যে, দৃশ্যতঃ এখানেও হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার চেয়ে উনার মর্যাদা বেশি প্রকাশ পায়। অতঃপর কাযযাবুদ্দীন উক্ত বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছে, “……….. হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমন কথা বলেছেন কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের বিষয়। বস্তুতঃ এসব বুযূর্গদের সম্পর্কে অতি ভক্তদের দ্বারা এমন অনেক কিছু রটানো হয়েছে যা সত্য বলে মেনে নেয়া যায়না। তবে এ ঘটনাকে এভাবে বর্ণনা করার দ্বারা রাজারবাগ শরীফ-এর মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আক্বীদা যে এরূপ তা অবশ্যই প্রমাণিত হয়।”

মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন” কাযযাবুদ্দীনের এ বক্তব্য রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যা তোহমত বৈ কিছুই নয়। কারণ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনিসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনাদের ক্ষেত্রে উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস একেবারেই সুস্পষ্ট। অর্থাৎ উনাদের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের যে আক্বীদা বর্ণিত রয়েছে, সে আক্বীদাই তিনি পোষণ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পর পৃথিবীর বুকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা বা ফাযায়িল-ফযীলত সবচেয়ে বেশি।
তিনি উনার অসংখ্য ওয়াজ শরীফ-এ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বহু সংখ্যাতেই উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার মর্যাদা বেশি, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদা বেশী?” জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি তিনি বলেন, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ঘোড়ায় চড়ে যখন দরবারে রেসালতে যেতেন তখন পায়ের দাপটে যে ধূলা-বালিগুলো ঘোড়ার নাকের ভিতর প্রবেশ করতো সেগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” কারণ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি হচ্ছেন ছাহাবী। আর উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি তিনি ছাহাবী নন। যিনি ছাহাবী নন তাকে ছাহাবী উনাদের সাথে তুলনা করাই কুফরী। এটাই হচ্ছে আমভাবে সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনাদের প্রতি রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আক্বীদা।
যদি এটাই হয়ে থাকে, তবে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার চেয়ে তিনি নিজেকে কি করে শ্রেষ্ঠ মনে করতে পারেন? মূলতঃ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক তিনি যখনই উচ্চারণ করেন তখন প্রতিবারই নাম মুবারকের সাথে এটাও উচ্চারণ করেন যে,
افضل الناس بعد الانبياء حضرت ابو بكر صديق عليه السلام
অর্থাৎ “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম হচ্ছেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর সকল মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।” (শরহে আকাইদুন্ নাসাফী)
শুধু তাই নয়, তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে জুমুয়ার দিন বহুবার কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে উনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে খুৎবাও দিয়েছেন। সে খুৎবার ক্যাসেটগুলোও আমাদের কাছে রয়েছে। কাজেই রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সরাসরি নিজস্ব বক্তব্য ও মাসিক আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত বহু বক্তব্য দ্বারাই প্রমাণিত যে, তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম সহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনাদের সম্পর্কেই উপরোক্ত ছহীহ আক্বীদা পোষণ করেন।
স্মর্তব্য যে, এখানে যেটা উল্লেখ করা হলো, সেটা হচ্ছে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সরাসরি নিজ বক্তব্য। আর কাযযাবুদ্দীন যেটা উল্লেখ করেছে, তা একে তো মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য নয় বরং একজন পাঠকের বক্তব্য। দ্বিতীয়তঃ কাযযাবুদ্দীন উক্ত বক্তব্যকে কাঁটছাট করে উপস্থাপন করেছে। উক্ত বক্তব্যের মুল বিষয়কে সুকৌশলে গোপন রেখেছে। তার উদ্দেশ্য হলো বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে সাধারণ লোকদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলা। কিন্তু কাযযাবুদ্দীনের এ আশা কোন দিনও পূর্ণ হবেনা। কারণ মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে ঢেকে রাখা যায়না। সত্য একদিন প্রকাশ হবেই। সেদিন সাধারণ জনগণ কাযযাবুদ্দীনকে নির্মমভাবে উপযুক্ত শিক্ষা দিবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যের জবাবে দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীন ৭৩তম সংখ্যার যে বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মিথ্যা তোহমত দিয়েছে, সে বক্তব্যের সাথে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন দিক দিয়েই কোন সম্পর্ক নেই। উক্ত বক্তব্যের আগে পিছে কোথাও রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কথা উল্লেখ নেই। কাযযাবুদ্দীন প্রতারণামূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে আগে পিছের বক্তব্য বাদ দিয়ে মাঝখান থেকে কয়েকটি লাইন তুলে দিয়ে তার সাথে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে জড়িয়ে দিয়েছে।
তাই পাঠকগণের বুঝার সুবিধার্থে আল বাইয়্যিনাত-এর ৭৩ তম সংখ্যায় মুদ্রিত পূর্ণ বক্তব্যটি নিম্নে তুলে ধরা হলো- “………….    কি ইলমে জাহির, কি ইল্মে বাতিন, কি শরীয়ত, কি তাছাউফ, সর্বক্ষেত্রে  শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বেমেছাল অবদান, উনার শ্রদ্ধেয় ভাবমূর্তির কথা জানেনা এমন লোককে ইল্মদার বলে সাব্যস্ত করা সত্যিই দুস্কর।
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আফদ্বালুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় কালে একজন শ্রদ্ধেয় হক্ব আলিম ও ওলীআল্লাহর নাম। আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তিনি ভাল জানতেন। কিন্তু একটা সময় আসলো যখন তিনি উনার প্রতি বিরূপ মন্তব্য পেশ করলেন। এ প্রেক্ষিতে কারণ বর্ণনা হয়েছে কয়েকটি।
গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দ্বারা এত অধিক কারামত বর্ণনার কারণ তিনি নুযুল করেছিলেন রুহ লতিফা পর্যন্ত। আর আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নুযুল করেছেন রুহ লতিফাকে অতিক্রম করে ক্বলব লতিফা পর্যন্ত। অর্থাৎ কিনা এতে দৃশ্যতঃ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদা বেশী প্রকাশ পায়।
অপর বর্ণনায় রয়েছে, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, ‘আমি উরুয করতে করতে ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম অতিক্রম করলাম।’ দৃশ্যতঃ এখানেও হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার চেয়ে উনার মর্যাদা বেশী প্রকাশ পায়।
আর বিশেষতঃ হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন বললেন, “সমস্ত ওলী আল্লাহ উনাদের গর্দানের উপর আমার পা” সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আযম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কওল উনার জামানার জন্য-ই খাছ, তখন শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখলেন, আফদ্বালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাফের হয়ে গেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক)
প্রসঙ্গতঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বুযুর্গী কিছুটা বলার অপেক্ষা রাখে। জীবনের একসময়ে যখন তিনি মদীনা শরীফ অবস্থান করছিলেন, অহরহ প্রাণের আঁকা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত সমৃদ্ধ ছিলেন। তখন এক পর্যায়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিলেন, “হে আব্দুল হক্ব!” আপনি হিন্দুস্থানে যান। সেটাই হবে আপনার হিদায়েতের ক্ষেত্র।” কিন্তু প্রাণের আঁকা, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ ত্যাগ করে আসতে কিছুতেই উনার আশেক মন চাচ্ছিল না। অবশেষে তিনি আরজু করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি সেখানে যেতে পারি, তবে সেখানে গেলে প্রতিদিন অবশ্যই আপনি আমাকে সাক্ষাৎ দিবেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আপনাকে প্রতিদিনই আমার সাক্ষাৎ দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!
বলাবাহুল্য এরকমই ছিল শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বুযুর্গী। সেই শ্রদ্ধাভাজন বুযূর্গ যখন ফতওয়া দেন যে, আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছেন (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) এবং সে কারণে তিনি কাফির। তখন স্বভাবতঃই তা জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয় না। এহেন সংকট মুহূর্ত চলল কিছুদিন। কিন্তু এরই মাঝে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারতে, হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞেস করে ফেললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কি করলে আমি আরো অধিক আপনার সন্তুষ্টি পেতে পারি?’ জবাবে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনি আফদ্বালুল আউলিয়া শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী, মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে গিয়ে বয়াত হলে আমার সন্তুষ্টি আরো অধিক পাবেন।” ঠিক পরদিনই হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে লিখা কিতাব ছিঁড়ে ফেললেন, এবং উনার মর্যাদা-মর্তবা, বুযুর্গী স্বীকার করে নতুন কিতাব লিখলেন।
মূলতঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হাক্বীকীভাবে সুন্নতের অনুসারী, আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তায়াল্লুক সমৃদ্ধ হাক্বীক্বী আশিকে রসূল তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের খাঁটি প্রতিনিধি। তাই গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদা সম্পর্কে সাময়িক তথ্যসংকট তাকে আল্লাহ পাক- রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর অন্যরূপ যারা মুখে মুখে আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আশিক দাবি করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের তথাকথিত মহাসচিব দাবি করে, কার্যতঃ সুন্নতের খিলাফ চলে এবং বেশরা-বিদ্য়াতে মগ্ন থাকে, সর্বোপরি যাদের অন্তর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তায়াল্লুক থেকে বহু দূরে থাকে তারা কি করে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে নছীহত হাসিল করার সম্মানে ভূষিত হতে পারে? …..”
পাঠক! মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর উপরোক্ত বক্তব্যের কোথাও রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কথা উল্লেখ আছে কি? নেই। তাহলে ৭৩তম সংখ্যার উক্ত বক্তব্য কি করে একথার দলীল হতে পারে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন? কাজেই একথা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্য প্রতারণামূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ডাহা মিথ্যা।
বস্তুতঃ ৭৩তম সংখ্যার  উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণটাই হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সংশ্লিষ্ট। লিখকের উক্ত বক্তব্যের মুল বিষয়বস্তু হলো, হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি কি কারণে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রথমে কাফির ফতওয়া দেন। অতঃপর কি কারণে বা কিভাবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সুধারণা আসে এবং তিনি উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। সে বিষয়টাই লিখক উক্ত বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার থেকে মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বা অন্য কারো মর্যাদা বেশী, এ কথা প্রমাণ করা লেখকের উদ্দেশ্য নয়।
হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেসব কারণে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কাফির ফতওয়া দিয়েছিলেন তন্মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, নিম্নোক্ত বক্তব্যটি-হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি উরূয করতে করতে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম অতিক্রম করলাম।”
হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্যের বাহ্যিক বা সরাসরি অর্থ গ্রহণ করার কারণেই উনার উপর কুফরীর ফতওয়া দিয়েছেন। কিন্তু হাক্বীক্বত তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে উনার উক্ত বক্তব্য সঠিকই রয়েছে। যা তিনি পরবর্তীতে বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, কাযযাবুদ্দীনও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্যের সরাসরি অর্থ গ্রহণ করার কারণেই “এরূপ কথা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।” এরূপ মিথ্যা দাবি করে নিজেকে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হিসেবে পুনরায় প্রমাণ করলো।
স্মর্তব্য যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্যটি একটি ঐতিহাসিক ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী বক্তব্য। যাঁরা “মাকতুবাত শরীফ” বা উনার জীবনী মুবারক পাঠ করেছেন, তারা সকলেই উনার উক্ত বক্তব্যের সাথে পরিচিত। কাযযাবুদ্দীনের মতো যারা জাহিল তারাই শুধু উনার উক্ত বক্তব্যের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। জাহিল কাযযাবুদ্দীনের সন্দেহ দূর করার লক্ষ্যে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ বিশ্বখ্যাত, সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “মাকতূবাত শরীফ” ১ম খণ্ড ১ম ভাগ ২২ পৃষ্ঠা থেকে উনার উক্ত  বক্তব্যটি হুবহু নিম্নে তুলে  ধরা হলো-
“পূর্ব্ব বর্ণিত দুই মাক্বামও উক্তরূপ ছিল। তৎপর ইহার ঊর্ধ্বে আরও এক মাক্বাম দেখিতে পাইলাম যখন তথায় পৌঁছিলাম তখন বুঝিলাম যে, উহা হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম, অন্যান্য খলীফাগণ উনারাও ইহা অতিক্রম করিয়াছেন। ইহার উপর ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম প্রকাশ পাইল, তথায়ও পৌঁছিলাম।
স্বীয় ছিলছিলার পীরগণের মধ্যে হযরত নকশবন্দ কুদ্দেছাছেররুহুকে সর্ব্বস্থানে সঙ্গে পাইতেছিলাম। অবশিষ্ট খলীফাগণ উনাদেরকেও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম অতিক্রম করিতে দেখিলাম। উনাদের মধ্যে কোনই প্রভেদ পাইলাম না। কেবলমাত্র দেখিলাম যে, কেহ যাইতেছেন, কেহ ক্ষণেক আছেন, কেহ বা চলিতেছেন এবং কেহ বা স্থায়ীভাবে আছেন। তাহার উপর হযরত খাতেমুররোছোল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাক্বাম ব্যতীত অন্যা কোন মাক্বাম আছে বলিয়া মনে হইল না।
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাক্বামের সম্মুখে কিঞ্চিত উচ্চ, তথায় সুন্দর, সুসজ্জিত নূরানী একটি মাক্বাম দেখিলাম এবং জানিলাম যে, উহা মাহবুবীয়াতের মাক্বাম, উহা রঙ্গিন ও নক্সাদার ছিল। উক্ত মাক্বামের রঙ্গে আমিও রঞ্জিত ও বিচিত্রিত হইলাম। তৎপর দেখিলাম যে, আমি সূক্ষ্ম বস্তু যথা- বাযু কিম্বা মেঘখণ্ডের ন্যায় হইয়া আকাশের চতুষ্পার্শে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িলাম। হযরত খাজা নকশবন্দ কুদ্দেছাছেররুহু তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকরব আলাইহিস সালাম উনার মাক্বামে ছিলেন এবং আমি উনারই সম্মুখে এক মাক্বাম, যাহা বর্ণনা করিলাম, তথায় উল্লিখিতরূপে ছিলাম।” (মাকতূব নং ১১)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অতি ভক্তরা নয় বরং মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই বলেছেন এবং নিজ কিতাব ‘মাকতুবাত শরীফ’-এ-ই তা লিপিবদ্ধ করেছেন। এখন কাযযাবুদ্দীন কাকে কাফির ফতওয়া দিবে? যিনি এ বক্তব্য প্রদান করেছেন তাকে, না যিনি উক্ত বক্তব্য এভাবে আল বাইয়্যিনাতে প্রকাশ করেছেন তাকে?
মূলতঃ কাযযাবুদ্দীন যেরূপ আল বাইয়্যিনাত-এ প্রকাশিত হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নামে মিথ্যা তোহমত দিয়েছে যে, “তিনি নিজেকে ছিদ্দীক্বে আকবরের চেয়েও বড় মনে করেন।” নাঊযুবিল্লাহি মিন কাযযাবিদ্দীন। ঠিক অনুরূপভাবেই কাযযাবুদ্দীনের পূর্বসূরী তৎকালীন সময়ের কুখ্যাত উলামায়ে ‘ছূ’ বা দুনিয়াদার মৌলবী আবূল ফযল, ফৈজী, মুল্লা মুবারক গংও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে উনার প্রতি মিথ্যা তোহমত দিয়েছিল যে, “হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেকে ছিদ্দীক্বে আকবরের চেয়েও শ্রেষ্ঠ মনে করেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)
সাথে সাথে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে তৎকালীন বাদশাকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্যে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মৌলবীরা বাদশার নিকট নালিশ জানায়। তখন বাদশাহ জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্যে আরয করেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন উক্ত বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন, তখন উলামায়ে ছূদের মুখে চুনকালী পরে যায়। তাদেরই উত্তরসূরী বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূ’ বা কাযযাবুদ্দীন গংদের মুখে চুনকালি মেরে দেয়ার উদ্দেশ্যে এ সম্পর্কিত তথ্যাবলী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্ভরযোগ্য জীবনী গ্রন্থ থেকে নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-
“সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের অসীম প্রভাবের দরুন বাদশাহ জাহাঙ্গীরের রাজদরবারে রাফেযীদের প্রভাব অতিশয় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছিল। হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই মাযহাবের বিরুদ্ধে কতিপয় পুস্তক-পুস্তিকা রচনা করিয়াছিলেন। যাহার ফলে এই সম্প্রদায় উনার ঘোর শত্রুতে পরিণত হইয়াছিল। তাহারা হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জব্দ করিবার জন্য তৎপর হইয়া উঠিল। তাহারা সুযোগ বুঝিয়া হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে লিখিত একটি পত্র বাদশাহর সম্মুখে পেশ করিয়া বাদশাকে বুঝাইয়া দিল যে, শেখ আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হইতে শ্রেষ্ঠ মনে করেন এবং তিনি বলেন যে, তাহার মাক্বাম হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম হইতে উচ্চে। উক্ত পত্র খানির অংশ বিশেষ নিম্নে উদ্ধৃত করা হইলঃ “দ্বিতীয়বার এই মাক্বাম অবলোকন করিবার সময় আরও অনেক মাক্বাম দৃষ্টিগোচর হয়, যাহার একটি অন্যটি হইতে উচ্চ ছিল। যখন উহা হইতে অধিকতর উচ্চ মাক্বামে পৌঁছিলাম তখন বুঝিলাম এই মাক্বামটি হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম উনার এবং অন্য খলীফাগণও এই মাক্বাম অতিক্রম করিয়াছেন। এই স্থান হইতে অধিক উচ্চ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম জাহির হইল। এই স্থানেও আসিয়া পৌঁছিলাম।খাজা বুযূর্গ হযরত শাহ্ নক্শবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রত্যেক স্থানে এইভাবে আমার সঙ্গীরূপে দেখিলাম যেন মাত্র অতিক্রম করার তফাৎ ছিল। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম হইতে উচ্চ কোন মাক্বাম বুঝিতে পারি নাই। অবশ্য নুবুওওয়াতের মাক্বাম অত্যন্ত বুলন্দ ও উচ্চ ছিল। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাক্বামের বরাবর আর একটি অতি উত্তম ও বহুত নূরানী মাক্বাম দৃষ্টিগোচর হয়, যাহা হইতে অধিক উত্তম অন্য কোন মাক্বাম দৃষ্টিগোচর হয় নাই। মাক্বামে ছিদ্দীক্ব হইতে উহা কেবল এতটুকু উচ্চ ছিল যেরূপ জমিন হইতে সভামঞ্চ কিয়ৎ পরিমাণ উচ্চ হইয়া থাকে। আমি জানিতে পারিলাম যে, ইহা ‘মাহবুবিয়াতের মাক্বাম’। এই মাক্বামটি রঙিন ও নকশা খচিত ছিল। এই মাক্বামের প্রতিচ্ছায়া পড়িবার দরুন এই বান্দা নিজকে রঙ্গিন ও উক্ত নক্শায় নিজকে খচিত দেখিল। তৎপর রঙিন ও নক্শা খচিত এই অবস্থা সত্ত্বেও আমি নিজকে বড়ই সূক্ষ্ম (লতীফ) অনুভব করিতে লাগিলাম এবং বাতাস ও মেঘের টুকরার ন্যায় নিজকে আকাশের চক্রবালে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় অনুভব করিতে লাগিলাম। এই অবস্থায় এক প্রান্তে যাইয়া পৌঁছিলাম। হযরত খাজা বুযূর্গ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাক্বামে ছিদ্দীক্বের মধ্যে রহিলেন এবং আমি নিজকে ইহার বরাবরের মাক্বামে উল্লিখিত অবস্থায় দেখিতে লাগিলাম।” (মকতুব নং ১১, দফতর ১)
এই পত্রখানি পেশ করার দরুন বাদশাহ জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এই বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উত্তরে বলিলেন, “আহলে সুন্নাতগণের নিকট যেমন ঐ ব্যক্তি সুন্নী নহেন যিনি হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনাকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হইতে শ্রেষ্ঠ মনে করেন;  অনুরূপভাবে সূফীগণের নিকটও ঐ ব্যক্তি সূফী নহেন, যিনি নিজকে সৃষ্ট জীবের মধ্যে নিকৃষ্ট কুকুর হইতে ভালো মনে করেন। অতএব আমি নিজকে কিরূপে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হইতে শ্রেষ্ঠ মনে করিতে পারি। পীরের তাওয়াজ্জুহের দরুন সালেকগণ কিরূপে এক মাক্বাম হইতে অন্য মাক্বামে ভ্রমণ করে ও উন্নীত হয় তাহার বর্ণনা এই মকতুবে উল্লেখ করা হইয়াছে। সালেকগণের উরুজ বা উত্থান এইরূপ মাক্বামে অল্প সময়ের জন্য হইয়া থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, শাহী দরবারে আমীরগণ রাত্র দিবস হাজির থাকেন। যদি কোন সময় প্রয়োজনবশতঃ বা অন্য কোন অজুহাতের দরুন বাদশাহ কোন সিপাহীকে তলব করিয়া তাহার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করিয়া তাহাকে সম্মানিত করেন, তাহা হইলে উহা একটি অস্থায়ী ব্যাপার। ক্ষণিক পরেই সিপাহী নিজ স্থানে প্রত্যাবর্তন করে এবং দরবারী স্বীয় বুলন্দ মাক্বামেই অবস্থান করেন। এই অস্থায়ী নৈকট্যের দরুন সিপাহীর মর্যাদা বাদশাহের অমাত্যগণ হইতে উচ্চ মনে করা যাইতে পারেনা। এইভাবে আমাদের উরুজ বা উত্থান একটি সাময়িক অবস্থা। এই অবস্থা শেষ হওয়ার পর আমি পুনঃ সিরহিন্দে পুরাতন পর্ণ কুটিরেই ফিরিয়া আসি। এই হাক্বীক্বতটি উপলব্ধি করার পর এই উচ্চ মাক্বামে ছিদ্দীক্বী অর্থাৎ ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হইতে নিজকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার ধারণা করাও অসম্ভব।
ইহা ব্যতীত এই পত্রে ইহাও লিখিত আছে যে, এই মাক্বামের প্রতিবিম্বের দরুন আমি নিজকে স্বয়ং রঙিন পাইলাম। সূর্যের আলো এবং ইহা হইতে আলোকপ্রাপ্ত হওয়াকে উদাহরণস্বরূপ পেশ করা যাইতে পারে। সূর্য সূর্যই থাকে- জমিনের উপর উহার আলোক পতিত হইলে জমিন আলোকিত হয়। কিন্তু জমিন কি ইহার  কারণে সূর্যের সমকক্ষতার দাবি করিতে পারে? এইরূপ দলীল ও প্রমাণের দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাদশাহকে বুঝাইবার পর বাদশাহ শান্ত হইলেন এবং উনাকে সসম্মানে বিদায় দান করিলেন। বিরোধীদলের জন্য এই পরাজয় বরদাশ্তযোগ্য ছিল না। তাহারা তখন অন্য ব্যবস্থা অবলম্বন করিল।” (হযরত মুজাদ্দিদ আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১ম খণ্ড ২২২ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে,
(১) ‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’ লক্বব ব্যবহার করা শরীয়ত সম্মত। কারণ পূর্ববর্তী অনেকেই উক্ত লক্বব ব্যবহার করেছেন। যেমন উনাদের মধ্যে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অন্যতম। আর লক্ববগুলো প্রত্যেকের যামানার জন্যে খাছ।
(২) “রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে ছিদ্দীক্বে আকবর উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করেন” কাযযাবুদ্দীনের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, প্রতারণা ও উদ্দেশ্যমূলক।
(৩) রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পর। তন্মধ্যে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। কাজেই যারা ছাহাবী নন, তারা ছাহাবী উনাদের চেয়ে বেশী বা সমপরিমাণ মর্যাদার দাবি করা কুফরী।
(৪) কাযযাবুদ্দীন একজন প্রতারক ও ধোকাবাজ। কারণ সে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আল বাইয়্যিনাতের বক্তব্য কাঁটছাট করেছে। পূর্বাপর বক্তব্য বাদ দিয়ে মাঝখান থেকে একটি বক্তব্য তুলে দিয়ে সে জনগণকে ধোকা দিতে চেয়েছে।
(৫) “আমি উরূয করতে করতে ছিদ্দীকে আকবরের মাক্বাম অতিক্রম করলাম” এটা অতি ভক্তদের দ্বারা  রচিত বা বানানো কোন কথা নয়। এটা স্বয়ং মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বওল মুবারক, যা উনার নিজের লিখা কিতাবেই রয়েছে। কাযযাবুদ্দীন “এটাকে সত্য বলে মেনে নেয়া যায়না” বলে নিজেকে সত্য প্রত্যাখানকারী এবং হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিদ্বেষী ও আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল বলেই নিজেকে প্রমাণ করলো।
(৬) উক্ত বক্তেব্যর দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে, নিজেকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করেননি তাও উনার ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। এখন কাযযাবুদ্দীন মুখ লুকাবে কোথায়?

No comments:

Post a Comment