Tuesday, December 15, 2015

‘পীর’ শব্দ নিয়ে কিছু কথা

পীর শব্দের অর্থ কি?
পীর শব্দটি ফার্সি। শব্দগতভাবে এর অর্থ হল ‘জ্ঞানবৃদ্ধ’। পারিভাষিক অর্থে যিনি আল্লাহ পাককে পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে বা আল্লাহ পাক এর সাথে রূহানী সংযোগ করে দেয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, উনাকেই পীর সাহেব বলা হয়। কুরআন শরীফ ও হাদিছ শরীফে যাদের আউলিয়া, মুর্শিদ, শায়খ ,মুহসিনিন, ছ্বদেকীন , উলিল আমর বলা হয়েছে, ফার্সিতে তাদের পীর সাহেব বলা হয়।
ফার্সি ভাষার শব্দ 'পীর' কেন বাংলায় ব্যবহার হচ্ছে?
পাক ভারতে ইসলামের প্রচার-প্রসার তথা স্থানীয় বিধর্মীদের মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে ফার্সি ভাষাভাষি আউলিয়ায়ে কিরামদের ভূমিকাই মুখ্য। যে কারণে এ স্থানে মুসলমানদের বন্দিগী জীবনে ফার্সির অনেক পরিভাষাই ব্যবহৃত হয়। আরবী সালাত, সাওম এর পরিবর্তে যেরূপ ফার্সি নামায, রোযা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আল্লাহকে খোদা ,
জান্নাতকে বেহেশত ,
মালাইকাদের ফেরেশ্তা ইত্যাদি ফার্সি শব্দ আমরা ব্যবহার করে থাকি।
বাংলায় যেমন একই শব্দের একাধিক সমার্থক শব্দ থাকে তেমনি আরবী ,ফারসীতেও থাকে।
যারা পীর শব্দ নিয়ে উলটা পালটা বলে থাকে যে এই শব্দ কোরআন হাদীস এ নাই তাঁরা উপরোক্ত শব্দ কি কোরআন হাদিসে পাবে ?
যদি না পায় তাহলে ব্যবহার করে কেন ?
তাই পীর শব্দের সাথে এলার্জি থাকার আর কোন কারণ দেখছি না।

রাজারবাগে এসে মানুষ যা হাসিল করতে পারে ....

আল্লাহ সুবহানু তায়ালা এবং রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বত অর্জন এবং তাঁদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন কত মুল্যবান ও সহজ সেটা আমি রাজারবাগ শরীফে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে পরিচয় লাভ কিংবা একটুখানি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মানুষ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চেষ্টা-তদবীর করতে থাকে। এটা করতে পারলে টাকা-পয়সা, ক্ষমতা ইত্যাদি হাসিল করা সহজ হবে। এতে কেউ সফলকাম হতে পারে, নাও হতে পারে। সফলকাম হলেও মৃত্যুকালে সমস্ত অর্জন এই দুনিয়াতেই রেখে যেতে হয়। আর আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যদি কেউ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তবে সে উভয় কালেই কামীয়াবী অর্জন করে থাকে। আর রাজারবাগ শরীফে আসতে পারলে তাঁদের মহব্বত হাসিল করা কিংবা সম্পর্ক স্থাপন করা কঠিন কিছু নয়। হাদীস পাকে বর্ণিত আছে, হুযুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তি যদি মুহব্বতের সাথে দরুদ শরীফ পাঠ করেন, হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা শুনতে পান, তিনি পাঠকারীকে চিনেও রাখেন। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দরুদ শরীফ পাঠকারী ব্যক্তির একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। আল্লাহর সাথেও পাঠকারীর একটা মুহব্বত হাসীল হয়ে যায়। একটা লোক রাজারবাগ শরীফে গিয়ে বাইয়াত হয়ে নিয়মিত দরুদ শরীফ পাঠ করলে অল্প দিনের মধ্যেই সেটা সে বুঝতে পারে। রাজারবাগ শরীফে গিয়ে দেখেছি সেখানে সেই বিষয়টাই সবাইকে শিখিয়ে দেয়া হয়। পরকালে নাজাত পাওয়ার কত সহজ ব্যবস্থা ! সুবহানাল্লাহ।

রাজারবাগ দরবারে যে শিক্ষা দেওয়া হয়

হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-
ইলম বা জ্ঞান হচ্ছে দুই প্রকার-
(১) কলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইলম।
(২) যবানী ইলাম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল।
(সূত্র:দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)
হাদীস শরীফ বর্ণিত কলবী ইলম বা ইলমে তাসাউফ অর্জন যে একটি মূল্যবান বিষয় তা আমি বুঝতে সক্ষম হই রাজারবাগ দরবার শরীফে এসে।
উল্লেখ্যা ইলমে তাসাউফ হচ্ছে এমন একটি জ্ঞান যা দ্বারা স্বয়ং আল্লাহ তালায়া ও উনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ- দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে পরিচয় লাভ কিংবা একটুখানি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মানুষ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চেষ্টা-তদবীর করতে থাকে। এটা করতে পারলে টাকা-পয়সা, ক্ষমতা ইত্যাদি অর্জন করা সহজ হবে বলে। এতে কেউ সফলকাম হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। সফলকাম হলেও মৃত্যুকালে সমস্ত অর্জন এই দুনিয়াতেই রেখে যেতে হয়। অথচ মহান আল্লাহ তায়ালা এবং উনার রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যদি কেউ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তবে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই সাফল্য অর্জন করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ।
সত্যি বলতে- রাজারবাগ দরবার শরীফে আসতে পারলে এই ইলমে তাসাউফ অর্জন খুব সহজেই হয়ে যায়। দরবার শরীফে এসে বাইয়াত হয়ে নিয়মিত প্রতিদিন দরুদ শরীফ পাঠ শুরু করার সাথে সাথেই সেটা বুঝতে পারলাম। অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, রাজারবাগ দরবার শরীফ সেই বিষয়টাই সবাইকে শিখিয়ে দেয় । কত সহজ ব্যবস্থা।

রাজারবাগ দরবারে মানুষ যাতায়াতের কারণ

আমার দেখা রাজারবাগ শরীফে -
কি হয় ?
-সেখানে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করা হয়, অন্তর থেকে ইবাদত বন্দেগী করার শিক্ষা দেওয়া হয়।
কে শিক্ষা দেন?
যিনি খাটি ওলীআল্লাহ, তিনি -
সেখানে আল্লাহ পাক ও হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুহব্বত, মা’রিফত শিক্ষা দেন; আদব শিক্ষা দেন।
শরীয়তের আদেশ নির্দেশ শিক্ষা দেন।
পরিপুর্ন ইসলাম পালন করার শিক্ষা দেন ।
হালালকে হালাল ,হারামকে হারাম বলা শিক্ষা দেন ।
মানুষ কেন রাজারবাগ শরীফে যায়?
সূরা ফাতিহা’তে আল্লাহ পাক দোয়া করতে বলেন, “আয় বারে ইলাহী! আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন এবং ঐ সমস্ত মনোনীত বান্দাগণের পথ দান করুন, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন”।
ওলী-আল্লাহগণ হচ্ছেন সেই নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তাই সিরাতাল মুস্তাকীমের সন্ধান পেতে মানুষ রাজারবাগ শরীফে যায়।
হাক্বিকি , মুমীন ,মুত্তাকী ,আল্লাহ ওয়ালা - আল্লাহওয়ালী হওয়ার জন্য মানুষ সেখানে যায় ।

রাজারবাগ দরবারের গেট দেখে আশ্চর্য় হওয়া নিয়ে কিছু কথা

রাজারবাগ শরীফের বিষয়গুলো আমি খুব আগ্রহসহকারে লক্ষ্য করি। আজ সকালে যাচ্ছিলাম রাজারবাগ দরবারের সামনে দিয়ে। দেখি বড় গেইটের উপরে সবুজ রং এর লাইট দিয়ে লেখা আছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ।
নিচে একটি বড় স্ক্রীনে থেমে থেমে আসছে নবীজির সন্তানদের নাম। খুব আশ্চর্য হলাম যে, আমরা মুসলমান হয়েও জানিনা প্রিয় নবীজির ছেলে সন্তান কতজন ছিলেন। প্রিয় নবীজির মেয়ে সন্তান কতজন ছিলেন।
রাজারবাগ দরবার শরীফের গেইটের দিকে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ পড়লাম প্রিয় নবীজির ছেলে ও মেয়ে সন্তানদের নাম। সবার জানার জন্য আমি পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ করছি সকল মুসলমানকে।
প্রিয় নবীজির ছেলে সন্তান ৪ জন। (১) হযরত ক্বসিম আলাইহিস সালাম (২) হযরত ত্বইয়্যিব আলাইহিস সালাম (৩) হযরত ত্বহির আলাইহিস সালাম এবং (৪) হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
আর নবীজির মেয়ে সন্তান ৪ জন। (১) হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম (২) হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম (৩) হযরত উম্মে কুলসুম আলাইহাস সালাম এবং (৪) হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম।
ভালো করে বাজারবাগ শরীফের গেইটের লেখাগুলো পড়ে আমি লিখে রেখেছি। আপনারা ইচ্ছে করলে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারেন রাজারবাগের দরবারের গেইটের ডিসপ্লে থেকে।

রাজারবাগে এসে একজন মানুষের দ্রুত পরিবর্তন হওয়া


একদিন রাজারবাগ দরবার শরীফে বেলাল ভাই একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি বল্লেন, উনার নাম সিরাজুল ইসলাম,তিনি আমার প্রতিবেশি এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁকে আজ দরবার শরীফে দাওয়াত দিয়ে জুম্মার নামায পড়তে এসেছি। সেদিন থেকে সিরাজুল ভাইর সাথে আমার পরিচয়।
তার পরের সপ্তাহের ঘটনা। আমাকে একজন সালাম দিয়ে বলছেন ভাইজান কেমন আছেন? আমি সালামের উত্তর দিয়ে বল্লাম জি ভালো। আমি হঠাৎ করে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। তিনি বল্লেন,আমি সিরাজুল, গত সপ্তাহে পরিচয় হয়েছিলাম।
আমি এজন্যই অবাক হলাম যে, গত সপ্তাহেই যে ব্যক্তি শার্ট,প্যান্ট আর শু পরে এসেছিল, মাত্র এক সপ্তাহেই তার এত পরিবর্তন ! অর্থাৎ সিরাজুল ভাই কোর্তা,সেলোযার,পাগড়ী,রুমাল,সুন্নতি স্যান্ডেল পরা শুরু করেছেন। সেদিন থেকে আমি সিরাজুল ভাইকে দেখে আসছি তিনি আর শার্ট ,প্যান্ট পরেননি অর্থাৎ তিনি পুরোপুরিভাবে সুন্নতি পোশাক পরা শুরু করেন।
শুধু সিরাজুল ভাই নয়, উনার পরেও আমি অনেককে দেখেছি যারা দরবার শরীফে আমার দুই এক সপ্তাহের মধ্যে দুনিয়াবী সবকিছু ত্যাগ করে সুন্নতি আমল শুরু করেছে। এমনকি অনেকে আছে যারা প্রথম দিন থেকেই সুন্নতি আমল শুরু করেছেন। অর্থাৎ রাজার দরবার শরীফে গেলে সবাই সুন্নতের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

রাজারবাগে এসে সুন্নতি পোশাক পড়া

তার স্টাইলও সবার একইরকম। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা ডিউটিম্যানদের ইউনিফর্ম। কিন্তু বাইরে থেকে যতো মানুষ আসতে দেখছি সবাই একই পোশাক! আরো অবাক হয়েছি সেখানকার পীর সাহেবকেও একই পোশাকে দেখে। পরে জানতে পারলাম আমাদের নবীজী ঠিক যে পোশাকটি পড়েছেন, হাদিসে সে পোশাকের বর্ণনা আছে। তাই এখানে হাদিসের বর্ণনা মোতাবেক হুবহু সেই পোশাকটিই পড়ার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং ঠিক সেই পোশাকটিই পড়া হচ্ছে।
যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবী পড়তাম কিন্তু সেটা যেহেতু সুন্নতি স্টাইল নয়, তাই সেটা ছেড়ে দিয়ে এখন সুন্নতি স্টাইলের পাঞ্জাবী পড়ার চিন্তা করছি। সবাইতে বিভিন্ন ফ্যাশনের পাঞ্জাবী পড়ে, আমি না হয় সুন্নতি স্টাইলের পোশাকটিই ফ্যাশন হিসেবে পড়া শুরু করলাম।
সবাই দোয়া করবেন।

‘পীর’ শব্দটির বিরোধীতা করার কারণ

পীর শব্দের সাথে এলার্জি হওয়ার পেছনে চারটি কারণ রয়েছে। মূলত এই এলারজি কৃত্রিম। দুই শ্রেণী এই এলারজি তৈরীর জন্য দায়ী।
১) যারা ওলী-আল্লাহ বিরোধী গোমরাহ
২) কাফিরদের প্রচারিত মিডিয়া
আরেকটি কারণ রয়েছে- সেটা হল
৩) ওলী-আল্লাহর অপ্রতুলতা ও নিষ্ক্রিয়তা
৪) কিছু ভন্ড পীরের আবির্ভাব।
যারা ওলী-আল্লাহ বিরোধী গোমরাহ তারা ইসলামের ধারক-বাহক ওলী-আল্লাহ, পীর, গাউছ, কুতুবদের সাথে কি করে এরা দুশমনি করতে পারে! এরা সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছে। আরেকটি সমস্যা হল সাধারণ মানুষের মধ্যে ফাসিক-ফুজ্জারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নাটক-সিনেমা দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত। হয়তবা কথাটি খারাপ শুনায়, কিন্তু এটাই বাস্তব।
আর নাটক-সিনেমাতে পীর সাহেবদেরকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মহান ওলীয়ে মুর্শিদদেরকে অসম্মানের সাথে নাটক-বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হচ্ছে। তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও এভাবেই সূফী-দরবেশদের ব্যাপারে সামাজিক এলার্জির কৃত্রিম বিষ তৈরী করা হয়েছে। আর এই এলারজি নতুন মাত্রা পেয়েছে ভন্ড নামধারী পীরদের কারণে।
যেমনঃ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি পরিপূর্ণ সুন্নতের অনুসারী ছিলেন এবং গান-বাজনা, বেপর্দা এবং মূর্তির বিপক্ষে ছিলেন এবং ভারতীয় উপমহাদের ইসলামের আবাদ করেন। কিন্তু তাঁর মাযার শরীফে এখন গান-বাজনা, বেপর্দা হয়ে থাকে। অনেক পীর মারিফতের ধুয়া তুললেও শরীয়তের নির্দেশ মানে না, তারাই মূলত ভন্ড।
তবে ভন্ডদের ভন্ডামী তুলনা দিয়ে হক্বের বিরোধিতা করা নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

রাজারবাগ পীর সাহেবের মুনাজাত

কিছুদিন আগে ঢাকাস্থ রাজারবাগ এলাকায় ৫ আউটার সার্কুলার রোডে অবস্থিত রাজারবাগ দরবাবে যাওয়া হয়েছিলো। সেখানে একটি মাহফিল চলছিল, আমার এক বন্ধু আমাকে সেখানে নিয়ে যায়। আমিও তার সাথে সানন্দে গিয়েছিলাম। আসলে, দেশের কোথাও ইসলামী মাহফিল হলে সেখানে এটেন্ড করার সুযোগ থাকলে আমি মিস করি না। সবগুলো হয়ত পারি না, কিন্তু যেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়, সেটা আমি ছাড়ি না।
যাই হোক, মাহফিলের মোনাজাত অংশটি নিয়ে আমার এ স্ট্যাটাস। মোনাজাত পরিচালনা করছিলেন রাজারবাগ দরবারের পীর সাহেব। দীর্ঘ সময় মোনাজাত চলেছিলো। আমি মোনাজাত করার করার চেয়ে মোনাজাতের কথাগুলোর দিয়ে বেশি খেয়াল করছিলাম। মোনাজাতের কথাগুলোগুলো শুনে আমার অন্তরে বেশ নাড়া খায়। সত্যিই বলতে, বর্তমান মুসলমান জাতির যে কঠিন অবস্থা, মুসলমানদের উপর সারা বিশ্বজুড়ে যে নির্যাতন-নিপীড়ন হচ্ছে, সেটার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বলার লোক খুব কমই আছে। বিশেষ করে কোন মাহফিলে আমি পাইনি- সারা বিশ্বের মুসলমাদের পক্ষ নিয়ে এভাবে দোয়া করতে। কিন্তু সেই দিন আমি অবাক হয়, ঐ মোনাজাতে দীর্ঘক্ষণ ধরে সারা বিশ্বের মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা’র দরবারে গগন বিরারি কণ্ঠে মোনাজাত করা হচ্ছিলো। ইরাক-আফগানিস্তান-ফিলিস্তিন-ভারতসহ সারা বিশ্বে মুসলমানদের যে নৃংশসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে সেখান থেকে মুসলমাদের হেফাজত করার জন্য দোয়া করা হয় মোনাজাতে। একই সাথে কাফেররা যে বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজির বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র আঁকছে সেটা নিয়েও মহান আল্লাহ’র দরবারে বিচার দেওয়া হয় এবং দোয়ায় বলা হয়- যদি জুমুলকারী কাফেরদের নসিবে হেদায়তে থাকে, তবে যেন আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়েত দেন, আর যদি হেদায়েত না থাকে তবে যেন আল্লাহ তায়ালা তাদের আবরাহা বাহিনীর মত ধ্বংস করে দেন। তারা যেন আর মুসলমানদের কষ্ট না দিতে পারে, ব্যঙ্গচিত্র অঙ্গন করতে না পারে সেই দোয়াই করা হয়।
সত্যিই বলতে, বর্তমান সময়ে অনেক আলেম আছেন এটা ঠিক, কিন্তু সরাসরি সারা বিশ্বের মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট এমন মর্মস্পর্ষী দোয়া করতে আমি আর দেখিনি। আপনাদের যদি সম্ভব হয়, তবে চেষ্টা করবেন সেই দোয়ায় কখন উপস্থিত হতে।

রাজারবাগ দরবার-এর ভিতরের কিছু তথ্য


ঢাকার মালিবাগ মোড় সংলগ্ন রাজারবাগ দরবার। এই দরবার সম্পর্কে অনেক পোস্ট আমি ব্লগে দেখেছি। আমি যতটুকু দেখেছি সেই অভিজ্ঞতা মতে কারোটা সত্য, কারোটা মিথ্যা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ৩ নং গেটের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত এই দরবারের গেইট চোখে পড়বে। গেইটে বড় করে লেখা- “পবিত্র ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ, জারি থাকুক আবদুল আবাদ”। এছাড়া গেইটের উপরে আছে একটি ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে, সেখানে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার সম্মানিত পরিবারবর্গ নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবারহ করা হচ্ছে।
এছাড়া দেখতে পাবেন- একই ধরনের পোষাক পরিহিত গেইটম্যান। ভেতরে ঢুকলে মাদ্রাসার ছাত্র থেকে ছোট বড় সবারই ঐ একই পোষক। আমি প্রথমে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম: “আপনাদের সবার পোষাক এক ধরনের কেন? সুতি কাপড়ের জামা (তারা বলে কোর্তা), সিলাই বিহীন লুঙ্গি, পাগড়ি (সাদা-কাল-সবুজ), সাদা রুমাল, সবার বাবরী চুল, এমনকি সবার স্যান্ডেলও একই ধরনের।” তারা বলেছিল, “আমাদের রাসূল তো একজন, উনার সুন্নত সম্পর্কে হাদীস শরীফের মধ্যে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আমরা হাদীস শরীফ অনুসরণ করে সেই আমলই করছি।” বাইরে থেকে কৌতুহল নিয়ে অনেকে ঢুকে ভিতরে আসলে কি আছে? - ভিতরে আছে মসজিদ - ‘মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসা (পুরুষ ও মহিলা বিভাগ আলাদা, পুরুষের জন্য পুরুষ শিক্ষক ও মহিলাদের জন্য মহিলা শিক্ষিকা) - বিশাল লাইব্রেরী - গবেষণাগার ‘মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ’ গবেষণাগার - দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত অফিস - ক্যান্টিন -পত্রিকা বিক্রয়কেন্দ্র -রান্নাঘর (খাবার সেকশন) ভিতরে সবাই ঢুকতে পারে, এবং তালিম সবার জন্য উন্মুক্ত।
জুমুয়ার নামযের সময় অনেক লোকজন আসে। এছাড়া প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে মাহফিল হয়। মাহফিলের পর তবারক দেওয়া হয়। এই মাহফিলগুলো ‘আল হিকমা নামক একটি ইন্টারনেট রেডিও থেকে তারা সরাসরি সম্প্রচার করে।

রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেবের পরিচয়


‘রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব সম্পর্কে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আসলে কে? কি উনার পরিচয়? কোথা থেকেই বা আসলেন? এ সম্পর্কে ব্লগে অনেকে অনেক কথাও লিখে থাকে। কারোটা হয়ত সত্যি, কারোটা হয়ত আবার পুরোপুরি মিথ্যা। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তার থেকে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
রাজারবাগ দরবার শরীফ শরীফটির অবস্থান ঢাকার মালিবাগ মোড় সংলগ্ন, ৫ আউর্টার সার্কুলার রোড। রাজারবাগ দরবার শরীফ মূলত ফুরফুরাহ সিলিসিলা থেকে আগত একটি সিলসিয়া । রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেবের পীর সাহেব হচ্ছেন যাত্রাবাড়ী দরবার শরীফের পীর সাহেব হযরত আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজিহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার পীর সাহেব হচ্ছেন দুই জন হযরত নাজমুস সাদাত সিদ্দিকী ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আব্দুল হাই সিদ্দিকী ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা দুইজনই ছিলেন ফুরফুরাহ দরবার শরীফের মূল পীর সাহেব হযরত আবু বরক সিদ্দিক ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি’র দুইজন সন্তান ও খলিফা।
রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেবের পিতা হচ্ছেন আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেসুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি পেশায় রেলওয়ের প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি সূফী ও বুজুর্গ ছিলেন। উনার পীর সাহেব ছিলেন হযরত আব্দুল হাই সিদ্দিকী ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি। রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব হঠাৎ করে আগত কোন পীর সাহেব নন। উনার পূর্ব পুরুষ সকলেই ছিলেন কামেল অলী, বুজুর্গ ও ছুফী । অনেকে ছিলেন পীর সাহেব। যাদের মাজার শরীফ নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার প্রভাকরদী ও সোনারগায়ে অবস্থিত। পুরাতন ঐ মাজার শরীফের গেটে এই বুজুর্গগণের বংশ পরম্পরা স্পষ্ট করে সম্পূর্ণ লেখা রয়েছে। মূলত এই বংশটির উৎপত্তি ছিল মদীনা শরীফ থেকে। হযরত মঈনুদ্দিন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন দ্বীন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ভারত উপমহাদেশের আজমীর শরীফে আসেন তখন উনার সাথে আরো ৪০ জন বুজুর্গ ইসলাম প্রচারক এসেছিলেন। এই ৪০ জনের এক জন হচ্ছেন, হযরত সাইয়্যিদ আবু বরক মুজাদ্দিদি রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি নবীজির বংশধর (হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদের বংশধর) ছিলেন। হযরত সাইয়্যিদ আবু বকর মুজাদ্দিদি রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পরপুরুষগণ দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতের দিল্লী, দিল্লী থেকে কলকাতা, কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে, চট্টগ্রাম থেকে নারায়নগঞ্জের সোনারগা, সোনারগা থেকে প্রভাকরদী গ্রামে আসেন। প্রচলিত আছে, এই বুজুর্গগণ চট্ট্রগ্রাম থেকে সোনারগায়ে নদী পথে পাথরের উপরে ভেসে এসেছিলেন।
রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে আমি এই তথ্যগুলোই জানতে পেরেছে। সবাইকে ধন্যবাদ।

ভারতীয় উপমহাদেশে পীর সাহেবদের শক্ত স্থান দখল করার কারণ


অনেকে ভারতীয় উপমহাদেশে পীর-মুরিদি বেশি দেখতে পান। কিন্তু এর কারণ আছে। ইসলাম মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে ইলিয়াস সাহেবের তাবলীগী করেও আসে নি, আবার মওদূদী-নিজামী-সাঈদীর রগ কাটা বাহিনীর জালাও পোড়াও করেও আসে নি। ইসলাম এদিকে এসেছে ওলী-আল্লাহদের হাত ধরে, পীর-মাশায়িখদের, সূফী-দরবেশদের হাত ধরে এসেছে। তাই আল্লাহর ওলীদের মাজার শরীফ বিভিন্ন স্থানেই চোখে পড়ে যায়, সুবহানাল্লাহ। ইসলাম যাদের মাধ্যমে এসেছে, যাদের মাধ্যমে কাফিরেরা কুফরী ছেড়ে দিয়ে মুসলমান হল, তাদের দেখানো পথেই তো মানুষ সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ খুজবে, সেটাই কি স্বাভাবিক নয়!

রাজারবাগী পীর সাহেবের মুরিদের সাথে একদিন

পটুয়াখালী জেলায় একদিন। দেখা হলো পটুয়াখালী সদরের সড়ক ও জনপথ অফিসের ইঞ্জিনীয়ার ইউসুফ সাহেবের সাথে। ভদ্রলোক একবার কথা প্রসঙ্গে রাজারবাগ দরবারে এসে তাঁর উপলদ্ধির কথা আমাকে বললেন। তিনি জানালেন সড়ক ও জনপথের বরিশাল বিভাগের এডিশনাল চীফ ইঞ্জি. এমদাদ সাহেব রাজারবাগ পীর সাহেব ক্বিবলার একজন মুরিদ।
তো ইউসুফ সাহেব আমাকে বললেন, আমি সেখানে যাওয়ার আগে মনে মনে ভাবতেছিলাম- স্যারতো (ইঞ্জি. এমদাদ সাহেব) খুবই বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও অমায়িক মানুষ। কিন্তু দরবার বলতেই কেমন যেন একটা নেগেটিভ ধারণা আগে থেকেই আমার ভেতরে বদ্ধমূল ছিলো। ভাবতেছিলাম যে, রাজারবাগ দরবারে যেহেতু স্যার আসা যাওয়া করে নিশ্চেই তেমন খারাপ কিছু হবেনা, ব্যাতিক্রম কোন বিষয় থাকতে পারে।
রাজারবাগ আসার পর কিছু লোকের সাথে পরিচয় হওয়ার পরে আমি নিজেকে খুব অসহায় মনে করতে লাগলাম। ধারণা করেছিলাম যে, এখানে আমাকে সবাই ভিআইপি লোক হিসেবে গণ্য করবে। স্যারের পরিচয় দিলে হয়তো আলাদা মেহমানদারির ব্যবস্থা করবে কিন্তু এখানে এসে কিছুক্ষণের মধ্যেই ধারণা চেঞ্জ হয়ে গেলো।
দেখলাম- স্যারের লেভেলের বহু জ্ঞানী-গুনি, উচ্চ শিক্ষিত, পদস্থ লোকজন এখানে সাধারণ মানুষের মতোই আসা যাওয়া করছে। স্যারের মতো বহু ইঞ্জিনীয়ার, ডাক্তার, কর্ণেল, মেজর ও সমাজের উচ্চপদস্থ লোকজন এখানে নিয়মিত তালিম নিচ্ছেন, সবার সাথে একসাথে ফ্লোরে বসে সুন্নতি কায়দায় খাওয়া দাওয়া করছেন, হাসি খুশি করছেন।
মজার ব্যপার হচ্ছে, এসব লোকদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এরা এতোটা উচ্চ শিক্ষিত,কারণ সবাই পাগড়ি-রুমাল, সুন্নতি পোশাক পড়া। দেখতে মনে হয় সবাই মাদরাসায় পড়ুয়া আলেম।
আবার এখানে গরিব মানুষসহ সব শ্রেণীর লোক জন আসা যাওয়া করেন। একটা বিষয় কমন দেখলাম যে, সবাই আসলে যিনি পীর সাহেব ক্বিবলা তাঁর তা’লীম তালক্বীন নেয়ার জন্যই আসছেন এবং সবার কথা বার্তা, জ্ঞানের পরিসীমা উচ্চ পর্যায়ের আলেমদের মতোই ।

Tuesday, December 8, 2015

নিয়ামত কাদের দিয়েছেন ?

কুরআন-এ এসেছে-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّ‌سُوْلَ وَاُوْلِي الْاَمْرِ‌ مِنْكُمْ ۖ
অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুসরণ কর মহান আল্লাহ পাকের, উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং উলিল আমরদের।” (সূরা নিসা : ৫৯)
সূরা ফাতিহায় উল্লেখ আছে-
اِهْدِنَا الصِّرَ‌اطَ الْمُسْتَقِيْمَ ◌ صِرَ‌اطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ◌
অর্থ : “(আয় বারে ইলাহী!) আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন। এবং ওই সমস্ত মনোনীত বান্দাদের পথ দান করুন, যাঁদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন।” (সূরা ফাতিহা : ৬-৭)
আল্লাহ কাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন; সে প্রসঙ্গে কুরআন-এ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِـحِيْنَ ۚ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক নিয়ামত দিয়েছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা ও ছালিহীন বান্দাদেরকে।” (সূরা নিসা : ৬৯)
কুরআন-এ এসেছে-
مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَـجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْ‌شِدًا ﴿١٧﴾
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সে-ই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, তার জন্য কোনো ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল পীর) পাবেন না।” (সূরা কাহফ : ১৭)

Tuesday, November 24, 2015

আল বাইয়্যিনাত ও আল ইহসান পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব আসলে কে?


মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসান পত্রিকা দুটির নাম অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু যিনি এই পত্রিকা দুটো চালান তার সম্পর্কে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আসলে কে? কি উনার পরিচয়? কোথা থেকেই বা আসলেন? এ সম্পর্কে ব্লগে অনেকে অনেক কথাও লিখে থাকে। কারোটা হয়ত সত্যি, কারোটা হয়ত আবার পুরোপুরি মিথ্যা। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তার থেকে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। ---------------------------------------------- রাজারবাগ দরবার শরীফ শরীফটির অবস্থান ঢাকার মালিবাগ মোড় সংলগ্ন, ৫ আউর্টার সার্কুলার রোড। রাজারবাগ দরবার শরীফ মূলত ফুরফুরাহ সিলিসিলা থেকে আগত একটি সিলসিয়া । রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেবের পীর সাহেব হচ্ছেন যাত্রাবাড়ী দরবার শরীফের পীর সাহেব হযরত আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজিহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার পীর সাহেব হচ্ছেন দুই জন হযরত নাজমুস সাদাত সিদ্দিকী ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আব্দুল হাই সিদ্দিকী ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা দুইজনই ছিলেন ফুরফুরাহ দরবার শরীফের মূল পীর সাহেব হযরত আবু বরক সিদ্দিক ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দুইজন সন্তান ও খলিফা।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (১০)

# রাজারবাগী পীর সাহেব আলাইহিস সালাম উনার সাথে অন্যান্য মাওলানা ও পীর সাহেবদের পার্থক্য কোথায়?
  • – মানুষের সাথে মানুষের মতের পার্থক্য সর্বকালেই রয়েছে। আর মতপার্থক্যই অনেকক্ষেত্রে বিরোধ সৃষ্টি করে থাকে। তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে তিনিই সঠিক হবেন যিনি কুরআন শরীফ, হাদিছ শরীফ থেকে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরেন। আমি বলব, রাজারবাগী পীর সাহেব হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের অনুসরণ করে থাকেন। আর এটাই হচ্ছে অন্যান্য সকল দল-উপদল থেকে উনার একমাত্র পার্থক্য।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৯)

 ইলমে তাছাউফ যদি ফরয মেনে নেই, তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়- পীর সাহেবের কাছে কেন বাইয়াত হতে হবে? ইলমে তাছাউফ অর্জনের সাথে পীর সাহেবের কি সম্পর্ক?
– ইলমে তাছাউফ হল ক্বলবী ইলম, যা ফিক্বাহ বা তাছাউফের কিতাবাদি পড়ে কখনো হাছিল হয় না। ইলমে তাছাউফ হাছিল করতে হলে ওলী-আল্লাহ, পীর-মাশায়িখের হাতে বাইয়াত হয়ে উনার নির্দেশ মুতাবিক যিকির-ফিকির ও আমল করতে হয়। আর হাদিছ শরীফ উনার ভাষ্য অনুযায়ী ইলমে তাছাউফ ই হচ্ছে উপকারী ইলম। কারণ এই ইলম মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফত, মুহব্বত, নৈকট্য, হাকিকত শিক্ষা দেয় যা কিনা বই পড়ে সম্ভব নয়। আর এ পথে পথ-নির্দেশনা ব্যতীত কেউ পথের সন্ধানই পায় না, পথ পেরিয়ে গন্তব্যে পৌছানো তো অসম্ভব।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৮)

 অনেকে বলে, ইলমে তাছাউফ হাছিল করা নাকি ফরয? এখন ফরয বলে দিলেই তো আর ফরয হয় না। ফরয হওয়ার প্রমাণ ও যুক্তি কি?
– ইলমে তাছাউফ হল আত্মশুদ্ধির পথ। যা কিছু পূর্বে বলা হয়েছে, শুধু এগুলোই নয়, আরও অনেক বিষয় তাছাউফের সাথে জড়িত রয়েছে।
আর, ইলমে তাছাউফ চর্চার মাধ্যমে কমপক্ষে সুলতানুল আযকার পর্যন্ত জারী করা ফরযে আইন। এখন, প্রশ্ন হতে পারে, ‘সুলতানুল আযকার’ শব্দ কুরআন শরীফে খুঁজে পেলাম না, সেটা আবার ফরয হল কি করে। জি, সে বিষয়েই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথমেই বলে নেওয়া জরুরী, ইসলামে মনগড়া কথা চলবে না। কথা বললে প্রমাণ থাকতে হবে। প্রমাণ দিলে অস্বীকার করা যাবে না। তবে যুক্তি থাকলে পেশ করতে পারে। কিন্তু অনেক সময়, গ্রহণযোগ্য প্রমাণ দেওয়া হলে, সেই প্রমাণটিকেই অনেকে অস্বীকার করে থাকে মনগড়া সিদ্ধান্তে। মূলত, এরা অবিশ্বাসী, অস্বীকারকারীদের মধ্যেই গণ্য হতে চায়। যাই হোক, আলোচনায় ফিরে আসি। যেসব কারণে তাছাউফ চর্চা করা ফরযঃ

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৭)

 এখন প্রশ্ন হল, পীর সাহেবের দরবার শরীফে কি উদ্দেশ্যে যেতে হয়? আর সেগুলো কি খুব জরুরী?

  • – জি হক্কানী ওলী-আল্লাহ, পীর সাহেবের দরবার শরীফে বিনা উদ্দেশ্যে যাওয়া হয় না। অবশ্যই এমন কিছু উদ্দেশ্য পূরণে যাওয়া হয়, যা পীর সাহেবের দরবার শরীফ ব্যতীত অন্য কোথাও হাছিল করা দুষ্কর ও অসম্ভব।

প্রথমতঃ আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি, মুহব্বত, মা’রিফত হাছিলের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ্‌ পাক পবিত্র কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করার জন্য উসীলা তালাশ (গ্রহণ) করো।”(সূরা মায়িদা/৩৫)। এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় “তাফ্‌সীরে রুহুল বয়ানে” উল্লেখ আছে যে, “উসীলা ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করা যায়না। আর উক্ত উসীলা হচ্ছেন, হাক্বীক্বত ও তরীক্বতপন্থী আলিম বা মাশায়েখগণ অর্থাৎ কামিল মুর্শিদগণ।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৬)


 আচ্ছা, বান্দা ইবাদত করুক এটাই তো আল্লাহ পাক চান। এখন, কুরআন শরীফেই তো সব বলেই দেওয়াই হয়েছে। তাহলে আর পীর সাহেবের কি দরকার? বাজার থেকে কুরআন শরীফ কিনে নিলেই কি যথেষ্ট নয়? 
  • - জি তা তো বটেই, কুরআন শরীফ এ আল্লাহ পাক বান্দাকে সকল পথ দেখিয়েছেন কিভাবে ইবাদত বন্দেগী করতে হবে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করার জন্য।

 যেমন, আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং ছাদিক্বীন অর্থাৎ সত্যবাদী উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও।” (সূরা তওবা : আয়াত শরীফ ১১৯)। অর্থাৎ শুধু কুরআন শরীফ পড়লেই হবে না, আল্লাহ পাকের ইবাদত করতে হলে ছাদিক্বীনদের সঙ্গী হতে হবে। 
এখন, একটু চিন্তা করে দেখুন তো- আমি বা আপনি কি সত্যিকার অর্থেই ছাদিক্বীন হতে পেরেছি। তাহলে, এই ছাদিক্বীন কারা? সহজ জবাব হল- ওলী-আল্লাহগণ। 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৫)


 রাজারবাগ দরবার শরীফে নাকি মহিলারা যাতায়াত করে। তাহলে রাজারবাগের পীর সাহেব আলাইহিস সালাম কি মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেন? 

  • - প্রথমেই বলছি, ইসলামটা হচ্ছে পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য নির্ধারিত। এখন ফরজ ইলম পুরুষকেও হাছিল করতে হবে, মহিলাদেরও হাছিল করতে হবে। তাহলে মহিলারা কার কাছে হাছিল করবে? মহিলারা তো পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। কিন্তু মহিলারা যাতে ইলম হাছিল করতে পারে, সেজন্য রাজারবাগের পীর সাহেব উনার সম্মানিতা স্ত্রী আলাইহাস সালাম তিনি মহিলাদের সরাসরিভাবে নিয়মিত তালিম দিয়ে থাকেন। আর সেজন্যই পর্দানশীন মহিলারা তালিম নিতে দরবার শরীফ যেয়ে থাকেন। জেনে খুশি হবেন যে, রাজারবাগী পীর সাহেব আলাইহিস সালাম কোন বেগানা মহিলাকে সাক্ষাৎ দেন না। তবে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্দার অন্তরালে মহিলারা রাজারবাগের পীর সাহেবের ওয়াজ-নছীহত মুবারক শুনতে পারেন। আপনারা আপনাদের অধীনস্থ স্ত্রী, মেয়ে বা মাকে অবশ্যই তালিমে নিয়ে আসবেন। 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৪)


 অনেক কিছুই জানলাম, তাছাউফ সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই জানব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এবার রাজারবাগ শরীফের প্রসঙ্গে আসি। রাজারবাগ শরীফ কোথায় অবস্থিত? 
  • মালিবাগ মোড়ে নেমে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে ২-৩ মিনিট হাটলেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন ৩ নং গেট চোখে পড়বে। ঠিক তার বিপরীত পাশেই রাজারবাগ শরীফ অবস্থিত (সুবহানাল্লাহ)। ঠিকানা হচ্ছে- ৫, আউটার সারকুলার রোড, রাজারবাগ, ঢাকা -১২১৭, বাংলাদেশ। অন্য কোন দরবারের মত ‘লোক দেখানো ফুটানি’ নেই এখানে। আশা করি, (আপাতত) ৫ তলা সম্পন্ন বিল্ডিং মুবারকের সাদামাটা এ দরবার শরীফ দেখে কোন আদরের দুলাল পিছিয়ে যাবেন না। খুব সম্ভবত সেখানে লেখা দেখতে পাবেন 'মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা'। 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৩)


 পীর শব্দের অর্থ কি? 

  • পীর শব্দটি ফার্সি। শব্দগতভাবে এর অর্থ হল ‘জ্ঞানবৃদ্ধ’। পারিভাষিক অর্থে যিনি আল্লাহ পাককে পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে বা আল্লাহ পাক এর সাথে রূহানী সংযোগ করে দেয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, উনাকেই পীর সাহেব বলা হয়। কুরআন শরীফ ও হাদিছ শরীফে যাদের আউলিয়া, মুর্শিদ ও শায়খ বলা হয়েছে, ফার্সিতে তাদের পীর সাহেব বলা হয়। 

 ফার্সি ভাষার শব্দ 'পীর' কেন বাংলায় ব্যবহার হচ্ছে?

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (২)


 আচ্ছা ভারতীয় উপমহাদেশে পীর সাহেবেরা কেন শক্ত স্থান দখল করে ছিল?

  • অনেকে ভারতীয় উপমহাদেশে পীর-মুরিদি বেশি দেখতে পান। কিন্তু এর কারণ আছে। ইসলাম মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে ইলিয়াস সাহেবের তাবলীগী করেও আসে নি, আবার মওদূদী-নিজামী-সাঈদীর রগ কাটা বাহিনীর জালাও পোড়াও করেও আসে নি। ইসলাম এদিকে এসেছে ওলী-আল্লাহদের হাত ধরে, পীর-মাশায়িখদের, সূফী-দরবেশদের হাত ধরে এসেছে। তাই আল্লাহর ওলীদের মাজার শরীফ বিভিন্ন স্থানেই চোখে পড়ে যায়, সুবহানাল্লাহ। ইসলাম যাদের মাধ্যমে এসেছে, যাদের মাধ্যমে কাফিরেরা কুফরী ছেড়ে দিয়ে মুসলমান হল, তাদের দেখানো পথেই তো মানুষ সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ খুজবে, সেটাই কি স্বাভাবিক নয়! 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (১)


রাজারবাগ দরবার শরীফ হল আল্লাহ পাক উনার এক মহান ওলীর দরবার। 

 কি হয় সেখানে? 
  • -সেখানে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করা হয়, অন্তর থেকে ইবাদত বন্দেগী করার শিক্ষা দেওয়া হয়। 

 কে শিক্ষা দেন? 
  • যামানার যিনি লক্ষস্থল ওলীআল্লাহ, তিনি সেখানে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত, মা’রিফত শিক্ষা দেন; আদব শিক্ষা দেন। শরীয়তের আদেশ নির্দেশও শিক্ষা দেন।