Sunday, August 27, 2017

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-১১ (১০). হিদায়েতের কার্যক্রম বিস্তারের লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক:


(ক). খানকা শরীফ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা:
(ক-১). পবিত্র ইলমে তাছাউফ চর্চার জন্য পবিত্র দরবার শরীফ উনার মাঝে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘খানকা শরীফ’।
(ক-২). পবিত্র দরবার শরীফ উনার মাঝে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। রয়েছে বালক শাখা, বালিকা শাখা এবং হিফজখানা।
(ক-৩). বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মসজিদ, মাদরাসা, খানকা শরীফ, গবেষণাগার, ঈদগাহ, কবরস্থান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। ইত্যাদি
(খ). মাহফিল:
(খ-১). অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সায়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল জারি এবং উনার কার্যক্রম।

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-১০ (৯). আযীমুশ্ শান মুবারক দফতর শরীফ- হিদায়েত বিস্তারের এক অনন্য দিক:



পূর্ববর্তী হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের হিদায়েতের কার্যক্রম বিস্তৃত ছিল মূলত খানকা শরীফ ভিত্তিক বা উনাদের তালিমগাহ নির্ভর। পবিত্র ইলমে তাসাউফ উনার কিতাবসমূহ থেকে যা বোঝা যায়, উনারা পবিত্র ইলমে তাসাউফ উনার শিক্ষার উপরই বেশি প্রাধান্য দিতেন। এর যথেষ্ট কারণও আছে। মুসলিম প্রাধান্যযুক্ত অঞ্চলসমূহে পরিপূর্ণ খিলাফত ব্যবস্থা না থাকলেও শাসকগণ পবিত্র শরীয়ত উনার অনুশাসনসমূহ জানতেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেন। পবিত্র যাকাত ব্যবস্থা, মসজিদ-মাদরাসার সম্প্রসারণ, উশর আদায়, আলিম-উলামাগণ উনাদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তালিম-তালকীনের ব্যবস্থাও মুসলিম সুলতান ও বাদশাহর পক্ষ থেকেই হতো।

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৯ (৮). রাজারবাগ শরীফ সিলসিলার আক্বীদা মূলত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার বিশুদ্ধ আক্বীদা:


আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা বিস্তারিত ব্যাখ্যা মূলত করেছেন- হযরত ইমাম আবুল মনসুর মাতুরিদি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত আবুল হাছান আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। অতঃপর পরবর্তীতে অন্যান্যরা। তবে হযরত ইমাম আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আক্বায়িদ হচ্ছে- মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী। আর হযরত ইমাম মাতুরিদি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং হানাফী মাযহাব উনার আক্বীদাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৮ (৭). হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কার্যক্রমের ব্যাপ্তি



একজন সম্মানিত মুজাদ্দিদ উনার কার্যক্রমের ব্যাপ্তি কেবল জানেন স্বয়ং যিনি মুজাদ্দিদ তিনি এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। 

একজন মহান মুজাদ্দিদ উনার সম্মানিত হায়াত মুবারকে যা তাজদীদ মুবারক করেন তা কেবল উনার সময়কালে সীমাবদ্ধ থাকে না, তা কাল পেরিয়ে চলতে থাকে দীর্ঘ সময়ব্যাপী। তবে এটা সহজে এভাবে বলা যেতে পারে- যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি ১০০ বছর পরপর একজন সম্মানিত মুজাদ্দিদ উনাকে পাঠান, তার অর্থ কমপক্ষে ১০০ বছর ধরে ওই মহান মুজাদ্দিদ উনার তাজদীদ মুবারকের এক ধরনের প্রচ্ছন্ন ব্যাপকতা থাকে। তারপর ধীরে ধীরে মানুষ সেখানে বিভ্রান্তি প্রবেশ করায়। আবার বলা হয়- ৫০০ বছর এবং হাজার বছর পরপর যিনি মুজাদ্দিদ হিসেবে প্রকাশিত হন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সাথে নিসবত-কুরবত উনার দিক থেকে অনেক বেশি দৃঢ় হয়ে থাকেন। ফলে উনাদের কার্যক্রম আরো ব্যাপক হয়ে থাকে।

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৭ (৬). সুন্নতী মাসজিদ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে দুই মহান ওলীআল্লাহ উনাদের প্রতি মহান নির্দেশ মুবারক:


পাঠক, আলোচনার সুবিধার্থে আমাদের জানা প্রয়োজন- রাজারবাগ শরীফ উনার মহান মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম, যিনি ১৫ শতকের সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিত পিতা, মহান আল্লাহ পাক উনার মহান ওলী, আওলাদে রসূল, বিশিষ্ট বুযুর্গ, কুতুবুজ্জামান হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনাকে সম্বোধন করা হয় ‘হযরত দাদা হুযূর কিবলা আলাইহিস সালাম’ হিসেবে। আর উনার সম্মানিত শায়েখ শাহ ছুফী হযরত মাওলানা মুহম্মদ ওয়াজিউল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি অবস্থান করতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। উনি যাত্রাবাড়ীর পীর ছাহেব ক্বিবলা (শায়েখ ক্বিবলা) হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। সম্মানিত শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন যাত্রাবাড়ী থেকে রাজারবাগ শরীফ এসে দেখা করেন ১৫ শতকের সম্মানিত মুজাদ্দিদ, আওলাদে রসূল, ইমামুল উমাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা এবং বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে।

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৬ (৫). পবিত্র সুন্নতী মসজিদ ও মাদরাসা উনাদের মূল বুনিয়াদী অবকাঠামো ও তার পূর্ণ বিবরণী:


আলহামদুলিল্লাহ! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মুবারক নির্দেশ এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিক-নির্দেশনায় রাজারবাগ শরীফে সুন্নতী জামে মসজিদ উনার নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অক্লান্ত ও অবর্ণনীয় ত্যাগ ও পরিশ্রমে সর্বপ্রকার সুন্নতী নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। যথাক্রমে যশোর ও ফরিদপুর এবং ঢাকা রূপগঞ্জের কালীগঞ্জ থেকে খেজুর গাছ, খেজুরের পাতা, কা- ও ছাল। আমাদের দেশের অধিকাংশ খেজুর গাছই রস সংগৃহীত কাটা গাছ। আর ওই কাটা গাছ দিয়ে স্তম্ভ, কাঠ, রুয়া ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব নয়। পূর্ণাঙ্গ ভালো গাছের দরকার। তাই অনেক খোঁজাখুঁজি ও ব্যয়বহুল ব্যবস্থায় দূর-দুরান্ত থেকে ট্রাকযোগে ও নৌপথে সমস্ত সুন্নতী সামগ্রী সংগ্রহ করে পবিত্র রাজারবাগ শরীফ-এ আনা হয়। চাল বাঁধাইয়ের জন্যে বেঁত আনতে হয় সিলেট থেকে। দেয়াল নির্মাণের জন্য লালমাটি সংগ্রহ করা হয় ঢাকা ক্বদমতলা রাজারবাগ থেকে। পাথর আনা হয় নূরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে।

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৫ (৪). পবিত্র সুন্নতী মসজিদ উনার কথা-(খ):


এই পবিত্র সুন্নতী মসজিদ উনার মিল রয়েছে সেই পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত করে এসে প্রতিষ্ঠিত ‘মসজিদে নববী শরীফ’ উনার সাথে। সে আলোচনা আজ শোনা যাক।
ঢাকার কেন্দ্রস্থল রাজারবাগ এলাকায় মহান আল্লাহ পাক উনার মহান ওলী, আওলাদে রসূল, বিশিষ্ট বুযুর্গ, কুতুবুজ্জামান হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার আবাস; যিনি ১৫ শতকের মহাসম্মানিত মুজাদ্দিদ, ইমামুল উমাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা।
আওলাদে রসূল, বিশিষ্ট বুযুর্গ, কুতুবুজ্জামান হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার পুত্র সন্তানগণের মধ্যে যিনি তৃতীয়, তিনি সবার চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম। উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক যখন কম, তখন থেকেই লক্ষ্য করা গেছে যে- তিনি পবিত্র সুন্নত পালনে অবিচল। উনার জীবন মুবারকের বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎ হয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে। এছাড়াও অনেক হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সম্মানিত মাযহাব উনাদের ইমাম, সম্মানিত তরীক্বা উনাদের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা দেখা করে উনাকে বভিন্ন বিষয়ে সুসংবাদ প্রদান করতেন।

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৪ এক সুন্নতী মসজিদ উনার কথা:



রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি তুলে ধরতে হলে পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ উনার কথা বলতেই হবে। এছাড়া সমস্ত বর্ণনা অপূর্ণ রয়ে যাবে। মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর। খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে- মুসলমান মাত্রই কোনো না কোনো মসজিদ তৈরিতে সাহায্য করেন বা দান করে থাকেন। শহরে থাকলে এলাকার মসজিদে, গ্রামে থাকলে গ্রামের মসজিদে আবার অনেকে শহরে থেকেও নিজের গ্রামের মসজিদের জন্য দান করে থাকেন। পাশ্চাত্যে যেমন- আমেরিকা, ব্রিটেন, ইটালী, ফ্রান্স এসব দেশে যখন কোনো মুসলিম দেশ যেমন- বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা কোনো আফ্রিকার মুসলিম দেশ থেকে মুসলমানগণ যান; তারা সেদেশে গিয়ে অনেক মসজিদ-মাদরাসা তৈরি করেছেন তার বহু নজির রয়েছে। অনেক বেনামাযী লোকও কেবল মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নামাযী হয়ে গেছেন। এর কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত। অর্থাৎ খালিছ নিয়তে কেউ যদি মহান আল্লাহ পাক উনার ঘরের খিদমতের আঞ্জাম দেয়, তাহলে এক সময় তার আল্লাহওয়ালা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যায়।