Saturday, November 26, 2016

আল বাইয়্যিনাত-এর বক্তব্য কাটছাঁট ও গাউছুল আ’যম সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাবুদ্দীন তার “……ভ্রান্ত মতবাদে” লিখেছে, “ ………. তিনি দাবি করেন যে, “উনাকে ইলমে লাদুন্নী দান করা হয়েছে এবং তিনি ‘বাহরুল উলূম’ বা জ্ঞানের সমুদ্র। উনার দাবি হলো তিনি সাধারণ পীর নন, বরং গাউছূল আ’যম এবং আমীরুল মু’মিনীন ফিত্ তাছাউফ …..। উনার মুরীদগণের বর্ণনা মতে বড় পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানীর চেয়েও উনার মাক্বাম অনেক ঊর্ধ্বে। মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৭৩তম সংখ্যার ৪৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছেঃ “উল্লেখ্য রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নামের পূর্বে যেসব লক্বব রয়েছে, উনি তারও ঊর্ধ্বে। এমনকি ‘গাউছূল আ’যম’ লক্ববেরও ঊর্ধ্বে।”
মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব

কাযযাবুদ্দীনের উক্ত মিথ্যাচারিতা ও জিহালতীর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীন সে “তিনি দাবি করেন, ……..” বলে যে কথাগুলো উল্লেখ করেছে, তা সম্পূর্ণরূপেই মিথ্যা। রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অনুরূপ বক্তব্য প্রদান করেছেন, এরূপ একটি প্রমাণও কাযযাবুদ্দীন দেখাতে পারবেনা। তার প্রতি চ্যালেঞ্জ রইল, যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে যেন তার প্রমাণ পেশ করে।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীন কি প্রমাণ করতে পারবে যে, ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত হওয়া, বাহরুল উলূম, গাউছূল আ’যম ও আমীরুল মু’মিনীন ফিত্ তাছাউফ ইত্যাদি হওয়ার দাবি করা কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ বা শরীয়তের খিলাফ?
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা যে ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত হন তা তো কুরআন শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
وعلمناه من لدنا علما
অর্থাৎ আমি (হযরত খিযির আলাইহিস সালাম) উনাকে ইলমে লাদুন্নী প্রদান করেছি। (সূরা কাহফ: আয়াত শরীফ – ৬৫)
‘বাহরুল উলূম’ দাবি করেছেন এরূপ বহু প্রমাণ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক-এ পাওয়া যাবে। কাযযাবুদ্দীনের মুরুব্বী বা পূর্বপুরুষদের থেকেও যে অনেকেই ‘বাহরুল উলূম’ দাবি করেছে, তারও প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
‘গাউছূল আ’যম’ তো বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকেই দাবি করেছেন। আর আমীরুল মু’মিনীন ফিত তাছাউফ বা অনুরূপ আরো বহু লক্বব মুবারকই পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের মধ্যে পাওয়া যায়। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লক্বব মুবারক ছিল ‘আমিরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ’। অতএব, হাদীছ শাস্ত্রের ক্ষেত্রে যদি তা হতে পারে, তবে তাছাউফ-এর ক্ষেত্রে কেন হবেনা? শুধু তাই নয়; খোদ কাযযাবুদ্দীনের গুরু থানবীও দাবি করেছে যে, সে “আমীরুল মু’মিনীন ফিত্ তাফসীর ওয়াল হাদীছ ওয়াল ফিক্বাহ”। মূলতঃ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ, তাছাউফ ইত্যাদি প্রতি ক্ষেত্রেই ‘আমিরুল  মু’মিনীন’ হওয়া সম্ভব ও শরীয়ত সম্মত।
মূলতঃ কাযযাবুদ্দীন যেরূপ প্রমাণ করতে পারবে না যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অনুরূপ বক্তব্য প্রদান করেছেন। তদ্রুপ প্রমাণ করতে পারবেনা যে, ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত হওয়া, বাহরুল উলূম, গাউছূল আ’যম ও আমীরুল মু’মিনীন ফিত্ তাছাউফ ইত্যাদি হওয়া সম্ভব নয় বা শরীয়তের খিলাফ।
সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাবুদ্দীন জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো। আর বস্তুতঃ সে কুটকৌশলে সাধারণ লোকদেরকে বিভ্রান্ত ও উত্তেজিত করার হীন স্বার্থেই এরূপ মিথ্যাচারিতা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এর জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে তার পরবর্তী বক্তব্য। কাযযাবুদ্দীন লিখেছে, “……… উনার মুরীদগণের বর্ণনা মতে বড় পীর ছাহেব আব্দুল ক্বাদির জিলানী উনার চেয়েও উনার মাক্বাম অনেক ঊর্ধ্বে।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীনের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর কোথাও এ ধরনের কোন কথা উল্লেখ নেই। কাযযাবুদ্দীন সাধারণ লোকদেরকে বিভ্রান্ত ও রাজারবাগ শরীফ-এর বিরুদ্ধে তাদেরকে উত্তেজিত করার অসৎ উদ্দেশ্যেই মনগড়া এ বক্তব্য প্রদান করেছে। আর তার এ মনগড়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যা বক্তব্যকে সাধারণের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৭৩তম সংখ্যার ৪৬নং পৃষ্ঠার যে বর্ণনা উল্লেখ করেছে, তাতেও সে মিথ্যা ও জালিয়াতীর  আশ্রয় নিয়েছে এবং আল বাইয়্যিনাত-এ প্রদত্ত উক্ত বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। যেমন সে লিখেছে, “উল্লেখ্য রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নামের পূর্বে যা কিছু লক্বব রয়েছে, উনি তারও ঊর্ধ্বে। এমনকি কথিত গাউছুল আ’যম লক্ববেরও ঊর্ধ্বে।”
কাযযাবুদ্দীন এ ক্ষেত্রে জঘন্যতম জালিয়াতি ও কারচুপি করেছে। কারণ সে আল বাইয়্যিনাতের উক্ত পৃষ্ঠার পরবর্র্তী অংশটুকু গোপন রেখেছে। সে ভাল করেই জানে যে, পরবর্তী অংশটুকু উল্লেখ করলে বা গোপন না রাখলে তার সকল ষড়যন্ত্রের জালই ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে। তাই সে এত বড় জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। কাযযাবুদ্দীনের জালিয়াতী ও প্রতারণাময় কলঙ্কিত চেহারা জনসম্মুখে উন্মোচন করে দেয়ার লক্ষ্যে আল বাইয়্যিনাত-এর ৭৩তম সংখ্যার ৪৬ পৃষ্ঠার যে অংশটুকু সে প্রতারণামুলকভাবে জালিয়াতি করে গোপন রেখেছে নিম্নে সে অংশটুকু উল্লেখ করা হলো- “………যেমনটি ছিলেন গাউছুল আ’যম, মুহিউদ্দীন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল হুযূর, আপনি কি গাউছুল আ’যম? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ, জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কি মুজাদ্দিদুয্ যামান? জবাব দেয়া হল হ্যাঁ, জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কি ইমামুল আইম্মা? জবাব দেয়া হল- হ্যাঁ। জিজ্ঞাসাকারীর জিজ্ঞাসা শেষ হয়ে গেল। সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, মুহিউদ্দীন হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হে ব্যক্তি তোমার কি আর কিছু জানার নেই? জিজ্ঞাসাকারী বলল, না। তখন গাউছুল আ’যম, মুহিউদ্দীন, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন দেখ, তুমি যা বললে, আমি তারও উপরে, তারও উপরে আমার মাক্বাম।
সুতরাং যারা মনে করে যে, গাউছুল আ’যমই হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্বশেষ মাক্বাম এবং এই লক্বব আর কেউই ব্যবহার করতে পারবেনা, তারা মূলতঃ গ-মূর্খ এবং গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুহব্বতের, অনুগ্রহভাজনের একান্তই অনুপযুক্ত। ……………।”
আল বাইয়্যিনাত-এর উক্ত বক্তব্য দ্বারা মূলতঃ এটাই বুঝানো হয়েছে যে, বড় পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাক্বাম ‘গাউছূল আ’যম’ পর্যন্তই শেষ নয়, এরও অনেক অনেক ঊর্ধ্বে উনার মাক্বাম। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ‘গাউছুল আ’যম লক্ববের ঊর্ধ্বে’ একথার দ্বারা বড় পীর ছাহেব উনার মাক্বামের ঊর্ধ্বে বুঝায় কি করে? এটা কাযযাবুদ্দীনের সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যা ও জালিয়াতি নয় কি?
তাছাড়া মুরীদানরা যদি মনে করেন যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাক্বামের ঊর্ধ্বে। কাযযাবুদ্দীন কি কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর দলীলের দ্বারা প্রমাণ করতে পারবে যে, মুরীদানদের এ মনে করাটা শরীয়ত বিরোধী। মূলতঃ সে কস্মিনকালেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা। কারণ কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর কোথাও একথা উল্লেখ নাই যে, বড়পীর ছাহেব উনার মাক্বামের ঊর্ধ্বে আর কেউ যেতে পারবেননা। যদি বড় পীর ছাহেব উনার মাক্বামের ঊর্ধ্বে কেউ যেতেই না পারেন তবে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে কাযযাবুদ্দীন কি ফায়ছালা দিবে? ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি তো ওলী হিসেবেই পৃথিবীতে আগমন করবেন।
তাই মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে গাউছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে বড় ওলীআল্লাহ হতে পারবেন না, কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তা প্রমাণ করার জন্য কুমন্ত্রক কাযযাব উদ্দীনের কাছে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করা হল।
দ্বিতীয়তঃ ইলমে তাছাউফ তথা ওলীআল্লাহ হওয়ার তর্জ-তরীক্বায় একটি প্রাথমিক ও মূল আদব হচ্ছে, প্রত্যেক মুরীদ তার পীর ছাহেব বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সবচেয়ে বড় জানবে এবং এ বিষয়ে সব ইমাম-মুজতাহিদ তথা আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা সকলেই একমত। যেমন, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় ‘মাকতুবাত শরীফ’-এ বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরেই মুরীদ স্বীয় পীর ছাহেব বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সবচেয়ে বড় বুযূর্গ মনে করবে।”
এমনকি কাযযাবুদ্দীনগংদের গুরু, যাকে তারা প্রায় তাদের নবী হিসেবে মানে, সেই থানবীও এ বিষয়ে তা’লীম গ্রহণ করেছে, প্রচার করেছে। থানবী তার নিজের লেখনীতে “(থানবীর নির্বাচিত ঘটনাবলী” -ক্বারী আবুল হাসান, দেওবন্দ) নিম্নোক্ত ঘটনা সংকলন করেছে-
“……….হযরত সাইয়্যিদ আহমদ রেফায়ী উনার মর্যাদা
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (তিনি বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমসাময়িক বুযূর্গ ছিলেন) উনার কাছে উনার এক মুরীদ জিজ্ঞাসা করল যে, আপনার মর্যাদাও কি বড় পীর ছাহেব উনার সমান? তিনি বলেন, তোমার শায়খ উনাকে বড় পীর ছাহেব উনার উর্ধ্বে মনে কর। মুরীদ বলল, তাহলে কি আপনি কুতুব? তিনি আবার বললেন, “তোমার পীর উনাকে কুতুবেরও উর্ধ্বে মনে কর ………..।” এখন থানবীর কিতাবে উপরোক্ত ঘটনা সংকলনের দ্বারা কি তাহলে এই প্রমাণিত হয়না যে, থানবী স্বীয় মুরীদদের কাছে নিজেকে গাউছূল আ’যম’ সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়েও বড় প্রতিভাত করেছে।
অথবা, থানবী নিজেই যে কোন মুরীদের জন্য তার পীর ছাহেব উনাকে গাউছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়েও বড় মনে করার সুপারিশ করেছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে কুমন্ত্রক কাযযাবুদ্দীন নিজের গুরুর মতেই এখন কিরূপ বাতিল ও জাহিল বলে প্রতীয়মান হলো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কাযযাবুদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা জালিয়াতপূর্ণ, প্রতারণামূলক, মনগড়া, স্ববিরোধী, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন।

No comments:

Post a Comment