Saturday, November 26, 2016

মু’তাযিলা আক্বীদা সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মহা কাযযাব সুলাইমান আলী ওরফে মুসাইলাম তার বিভ্রান্তিকর রেসালা “আদ-দ্বীনে” আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “… যারা মু’মিন থেকে কোন গুনাহের কাজ সংঘটিত হলেই দ্বীনের থেকে খারিজ বা কাফের হয়ে যায় মনে করে …. তারাই গুমরাহ ফেরক্বা।
… অতএব, মীলাদ ক্বিয়াম অস্বীকার করা, লংমার্চে নেতৃত্ব দেয়া, হরতাল করা, ছবি তোলা, মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি জনাব … সাহেবের দৃষ্টিতে হারাম বা গুনাহে কবীরাহ। আর এ গুনাহে লিপ্ত হওয়াকে কুফরী বা দ্বীন থেকে খারিজ হওয়ার ফতোয়া প্রদান করাই প্রমাণ করে যে, তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নন বরং তিনি মু’তাযিলা বা খারিজী ফিরকার অনুসারী তথা বাতেল ফেরক্বার অন্তর্ভুক্ত।” নাঊযুবিল্লাহ!

মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
মহা কাযযাব মুসাইলাম-এর উপরোক্ত জিহালতপূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারিতামূলক বক্তব্যের জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে শুকরিয়া জানাই এজন্য যে, মহা কাযযাব মুসাইলাম মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ অস্বীকার করা, লংমার্চ করা, হরতাল করা, ছবি তোলা, মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি কাজগুলোকে হারাম কাজ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। অর্থাৎ সে তার উক্ত বক্তব্যের দ্বারা এটাই বুঝাতে চাচ্ছে যে, তার কথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী ও মাওলানারা উল্লিখিত হারাম কাজগুলো করে কবীরা গুনাহ করেছেন কুফরী করেননি। এতে কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, মহা কাযযাব মুসাইলামও স্বীকার করল যে, মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ অস্বীকার করা, লংমার্চে নেতৃত্ব দেয়া, হরতাল করা, ছবি তোলা, মহিলাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা হারাম ও কবীরা গুনাহ।
দ্বিতীয়ত বলতে হয় যে, আর যদি মহা কাযযাব মুসাইলাম-এর মতে উক্ত আমলগুলো শুধুমাত্র রাজারবাগ শরীফ-এর দৃষ্টিতে হারাম হয় এবং তাদের অর্থাৎ মুসাইলাম ও তার মুরুব্বীদের দৃষ্টিতে হারাম না হয় বরং জায়িয হয়, অর্থাৎ মহা কাযযাব মুসাইলাম ও তার কথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী ও মাওলানারা যদি উক্ত কাজগুলোকে জায়িয মনে করে থাকে। তবে তো রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ফতওয়াই সঠিক বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতসম্মত। কারণ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া ও আক্বীদা মুতাবিক হারাম বা কবীরা গুনাহকে জায়িয মনে করা কুফরী।
তৃতীয়ত বলতে হয়ে যে, মহা কাযযাব মুসাইলাম যে লিখেছে, “রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হারাম বা কবীরা গুনাহের কাজ করাকে কুফরী মনে করেন।” তার এ বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং বিভ্রান্তিকর ও কল্পনাপ্রসূত। কারণ চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি মহা কাযযাব মুসাইলাম কেন তার সিলসিলার সকলেই যদি ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করে, তবুও এরূপ একটি প্রমাণও পেশ করতে পারবে না যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অনুরূপ আক্বীদা পোষণ করেন। শুধু এ বিষয়ে কেন, আল্লাহ পাক উনার রহমতে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বীদাই পোষণ করেন। যার কারণে মহা কাযযাব মুসাইলাম ও তার গুরুরা শত চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন একটি আক্বীদাকেও কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ প্রমাণ করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেওনা।
মূলত উল্লিখিত বিষয়ে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আক্বীদা হলো “হারাম কাজকে হারাম মনে করে করা কবীরা গুনাহ ও ফাসিকী। আর হারাম কাজকে হালাল মনে করে করা কুফরী।” এর প্রমাণ রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বহু সংখ্যায় এবং উনার বহু ওয়াজ শরীফ-এর ক্যাসেটে রয়েছে।
অতএব, মহা কাযযাব মুসাইলাম-এর গুরু কথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী ও মাওলানারা যেহেতু লংমার্চ, হরতাল, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, কুশপুত্তলিকা দাহ করা ইত্যাদি হারাম কাগুলোকে হালাল মনে করেই করে থাকে তাই বলা হয়েছে যে, তাদের উল্লিখিত আমলগুলো কুফরী হয়েছে। তারা যে উল্লিখিত হারাম কাজগুলোকে হালাল মনে করে থাকে তার লিখিত দলীলও আমাদের নিকট রয়েছে। তারা উল্লিখিত আমলগুলোকে শুধু জায়িয বা হালাল মনে করে তাই নয় বরং কোন কোনটাকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিহাদ ও আমলের সাথেও তুলনা করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!। যেমন, তারা কাট্টা কাফির মাওসেতুংয়ের লংমার্চকে তাবুকের জিহাদের সাথে এবং খ্রিস্টান ও হিন্দুদের আমল কুশপুত্তলিকা দাহ করাকে খেজুর গাছ পোড়ানোর সাথে তুলনা করে এগুলোকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। (তথ্যসূত্র: মাসিক রাহমানী পয়গাম)
কাজেই মহা কাযযাব সুলাইমান আলী ওরফে মুসাইলমাতুল কাযযাব রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মু’তাযিলা আক্বীদা পোষণ করার যে তোহমত দিয়েছে, তা ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও কল্পনা প্রসূত বলে প্রমানিত হলো। সাথে সাথে এটাও প্রমানিত হলো যে, মহা কাযযাব মুসাইলামই হাক্বীক্বত মু’তাযিলা। কারণ হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, “যখন কাউকে মু’তাযিলা বা কাফির তোহমত দেয়া হয় তখন সেটা আকাশের দিকে উঠে। আল্লাহ পাক তিনি আকাশের দরজা বন্ধ করে দেন। অতঃপর তা যমীনের দিকে নামে। আল্লাহ পাক তিনি যমীনের দরজাও বন্ধ করে দেন। তখন তা যাকে বলা হয়েছে সে যদি সত্যিই তা হয়ে থাকে তবে তার উপর পড়ে। আর যদি সে তা না হয় তবে যে তোহমত দিয়েছে তার উপরই পড়ে।” যেহেতু অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মু’তাযিলা আক্বীদা পোষণ করেন না। তাই উনার প্রতি মু’তাযিলা হওয়ার মিথ্যা তোহমত দেয়ার অর্থ হলো মহা কাযযাব সুলাইমান আলী নিজেই মু’তাযিলা হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ তার ফতওয়া তার উপরই বর্তিয়েছে। তাই কথায় বলে, “উপর দিকে থুথু দিলে তা নিজের গায়েই পড়ে।”

No comments:

Post a Comment