Saturday, November 26, 2016

‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’ লক্বব ব্যবহার সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হেমায়েত উদ্দীন ওরফে কাযযাবুদ্দীন তার গোমরাহী মূলক রেসালা “ভ্রান্ত মতবাদে” লিখেছে, “………….. উনার ব্যবহৃত এসব খিতাবের মধ্যে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বহির্ভুত অনেক দাবিও এসে গেছে। যেমন- ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন বা ছিদ্দীক্বগণ উনাদের ইমাম। এই ছিদ্দীক্বীনদের মধ্যে রয়েছেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনিও, যাঁর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে।”
মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
জাহিল কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, তার উক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে যে, সে আসলেই আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল। কারণ একথা সবারই জানা যে, ওলীগন উনাদের লক্ববসমূহ উনাদের প্রত্যেকের যামানার জন্যেই খাছ। উনাদের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কেউ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন না। এ প্রসঙ্গে ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ‘মাকতুবাত শরীফ-এ’ লিখেছেন, গাউছূল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে বলেছেন, “সমস্ত ওলীগণ উনাদের গর্দানের উপর আমার কদম”, এটা হযরত বড়পীর ছাহেব উনার যামানার জন্যেই খাছ। কারণ একথা যদি আম বা ব্যাপক অর্থে ধরা হয়, তবে উনার পূর্বে রয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, আর পরে রয়েছেন হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। এখন উনাদের গর্দানের উপরও কি হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কদম মুবারক? একথা যদি কেউ বিশ্বাস করে তবে তার ঈমান থাকবে কি? অতএব, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, “ওলীগণ উনাদের লক্বব মুবারক উনাদের প্রত্যেকের যামানার জন্যই খাছ।” সুতরাং অনুরূপ “ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন” লক্বব মুবারকও উনার যামানার জন্যে খাছ।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীন যদি লক্ববের ব্যবহার আম বা ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করে থাকে, তবে তো তার ফতওয়া মুতাবিক পূর্ববর্তী অনেক ইমাম-মুজতাহিদ ও তার মুরুব্বীসহ বহু দেওবন্দীই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনাদের থেকে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করার কারণে কাফির সাব্যস্ত হয়। যেমন- হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য লক্বব মুবারকের মধ্য হতে একখানা লক্বব রয়েছে, “ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন”। কাযযাবুদ্দীনের মতে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি কাফির? কারণ তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “যুবদাতুল আছার”-এর ৪০ পৃষ্ঠায়, গাউছূল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে “ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন” বলে উল্লেখ করেছেন। কাযযাবুদ্দীনের মতে কি উনারা উভয়ে কাফির? নাঊযুবিল্লাহ!
গাউছূল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য লক্বব মুবারকের মধ্য হতে একখানা মশহুর ও গ্রহণযোগ্য লক্বব হচ্ছে, “সাইয়্যিদুল আউলিয়া” কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মুতাবিক হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাফির। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি করেছেন। কেননা “সাইয়্যিদুল আউলিয়া” অর্থ হচ্ছে সমস্ত ওলী উনাদের সর্দার। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ উনারাও ওলীগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। কাযযাবুদ্দীন এক্ষেত্রে কি জবাব দিবে?
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য লক্বব মুবারকের মধ্য হতে একখানা লক্বব হচ্ছে “ইমামুল মুহাদ্দিছীন” অর্থাৎ সমস্ত মুহাদ্দিছগণ উনাদের ইমাম। কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মুতাবিক ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাফির। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ মুহাদ্দিছগণ উনাদের মধ্যে অনেক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারাও রয়েছেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি ইরশাদ করেন,
لكل نبى مـحدث ومـحدثى حضرت عمر بن الـخطاب عليه السلام
অর্থাৎ “প্রত্যেক নবী আলাইহিস সালাম উনার একজন “মুহাদ্দিছ” রয়েছেন, আমার “মুহাদ্দিছ” হচ্ছেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম।”
তবে কি কাযযাবুদ্দীনের মতে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকেও শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি করেছেন? কাযযাবুদ্দীন এর কি জবাব দিবে?
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্যা লক্বব মুবারকের মধ্যে একখানা লক্বব হচ্ছে “ইমামে আ’যম”। অর্থাৎ সমস্ত ইমাম উনাদের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মুতাবিক ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাফির। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ তিনি ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের থেকেও শ্রেষ্ট হওয়ার দাবি করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! এর কোন সদুত্তর কাযযাবুদ্দীনের কাছে আছে কি? সদুত্তর থাকবেই বা কি করে? কাযযাবুদ্দীন যে নিজের মাযহাবের ইমামকেই কাফির বানিয়ে ফেললো। এতো গেল পূর্ববর্তী ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের ব্যাপার।
এবার কাযযাবুদ্দীনের মুরুব্বী দেওবন্দীদের ব্যাপারে আলোচনা করা যাক। কাযযাবুদ্দীনের মুরুব্বী তার কাছে নবীতুল্য থানবীর একটি লক্বব হচ্ছে “হাকীমুল উম্মাতিল মুহম্মদিয়া” অর্থাৎ সমস্ত উম্মতে মুহম্মদীর হাকীম। অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন- হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনিসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ, সকল ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, সকল তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ, সকল তাবে তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ, সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ওলী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা, এমনকি হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি।
তাহলে কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মুতাবিক থানবী বড় কাফির। কারণ প্রথমতঃ সে আল্লাহ হওয়ার দাবি করেছে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন ‘হাকীম’। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,  والله عليم حكيم অর্থাৎ “আল্লাহ পাক তিনি আলীম ও হাকীম।” (সূরা নিসা/২৬)
দ্বিতীয়তঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত সে সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম ও ওলী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের হাকীম বা শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
থানবীর এ ধরনের আরো বহু লক্বব রয়েছে, যা দ্বারা কায্যাবুদ্দীনের ফতওয়া মুতাবিক প্রমাণিত হয় যে, থানবী হযরত ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ উনাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি করেছে। যেমন- আ’যামুল মুফাস্সিরীন, আমীরুল মু’মিনীন ফিত্ তাফসীর ওয়াল হাদীছ ওয়াল ফিক্বাহ, আশরাফুল উলামাই ওয়াল আউলিয়াইল কামিলীন, রঈসুল মুফাস্সিরীন, তাজুল মুহাদ্দিছীন। (তথ্যসূত্র- আহকামুল কুরআন লি জাফর আহমদ ওছমানী, মুকাদ্দমায়ে ইলাউস্ সুনান, ইমদাদুল আহকাম, তাবলীগে দ্বীন, ফজলুল মাজহুদ, ইমদাদুল ফতওয়া, আত তানবীহুত ত্ববারী)
কাজেই কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মুতাবিক শুধু থানবীই নয় বরং কাযযাবুদ্দীনসহ যে বা যারা থানবীকে “হাকীমুল উম্মত” বলে প্রচার করে ও বিশ্বাস করে তারা সকলেই কাফির। এবার আমরা দেখতে চাই হেমায়েত উদ্দীন ওরফে কাযযাবুদ্দীন নিজের ও নিজের মুরুব্বীদের উপর দেয়া কুফরী ফতওয়া কি করে রদ করে।
প্রবাদ রয়েছে- “উপর দিকে থুথু দিলে নিজের গায়েই তা পরে।” কাযযাবুদ্দীন “ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন”-এর অপব্যাখ্যা করে যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে কাফির বানাতে গিয়ে সে নিজে ও তার মুরুব্বীরাই কাফির বলে সাব্যস্ত হলো।
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, “ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন” লক্বব মুবারক ব্যবহার করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা বহির্ভুত কোন বিষয় নয়। বরং তা অবশ্যই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা সম্মত। যদি তা “ফি যামানিহী” অর্থাৎ যার যার যামানার ক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয়। কেননা কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক যামানাতেই ছিদ্দীক্বগণ উনারা থাকবেন। এটা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। যেমন কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصادقين.
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং ছিদ্দীক্বগণ উনাদের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবা: আয়াত শরীফ – ১১৯)
এতে বুঝা গেল যে, প্রতি যামানাতেই পৃথিবীতে ‘ছিদ্দীক্বগণ’ থাকবেন। ছিদ্দীক্বগণ উনাদের যিনি প্রধান তিনিই হচ্ছেন সে যামানার “ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন।”

No comments:

Post a Comment