Saturday, November 26, 2016

‘বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ’ সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা


আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হেমায়েত উদ্দীন ওরফে কাযযাবুদ্দীন তার কলঙ্কিত রেসালা “ভ্রান্ত মতবাদে” লিখেছে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত সম্পর্কে তিনি এত বাড়াবাড়ি করেছেন যে, আল বাইয়্যিনাত জুলাই ’৯৯ সংখ্যায় ১৩৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, আল্লামা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মছনবী শরীফকে যেমন ফার্সী ভাষায় কুরআন শরীফ বলা হয়, তদ্রুপ আল বাইয়্যিনাতও যেন ‘বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ।”
উক্ত বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কাযযাবুদ্দীন লিখেছে, “এক দিকে তিনি আল বাইয়্যিনাত পত্রিকাকে কুরআন শরীফ বলে আখ্যায়িত করেছেন, আবার আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার বিরোধিতা করলে ঈমান হারা হয়ে যাওয়ার ধারণা প্রদান করেছেন। এর অর্থ হলো তিনি এই পত্রিকাকে প্রকৃত অর্থেই কুরআনের সমতুল্য আখ্যায়িত করতে চান।”

মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ও মন্তব্য সম্পর্কে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীন এক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। কারণ সে আল বাইয়্যিনাত-এর উক্ত বক্তব্যকে স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থে কৌশলে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নামে চালিয়ে দিয়েছে। অথচ উক্ত বক্তব্যটি হচ্ছে একজন পাঠকের, যা “আপনাদের মতামত বিভাগে” (মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়) ‘পাঠকের মতামত’ হিসেবে পত্রস্থ হয়েছে। কাজেই পাঠকের বক্তব্যকে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা চরম জালিয়াতী ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, পাঠক তার মতামতে “আল বাইয়্যিনাত কে বাংলা ভাষায় কুরাআন শরীফ বলেছেন” এটা মূলতঃ রূপক অর্থেই বলেছেন। কারণ পাঠক তার উক্ত বক্তব্যের সাথে ‘মছনবী শরীফ’-এর উদাহরণ টেনে এনেছেন। পাঠক এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, মছনবী শরীফকে যে অর্থে “ফার্সী ভাষায় কুরআন শরীফ” বলা হয়, ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ও সে অর্থেই বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ।
অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এর মাধ্যমে মানুষ যেরূপ হক্ব মত হক্ব পথ পেয়ে থাকে, হালাল হারাম পার্থক্য করতে পারে, ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকে। অনুরূপভাবে ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এর মাধ্যমেও বর্তমানে মানুষ হক্ব মত হক্ব পথ পাচ্ছে, হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে, নিজ ঈমান আমল হিফাযত করতে পারছে এবং মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের পথ খুঁজে পাচ্ছে। সুবহানাল্লাহ!
আর তা সম্ভব হওয়ার কারণ হচ্ছে, ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এর প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে লিখা হয়। তাই এ অর্থে ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’কে “বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ” বলা অবশ্যই শরীয়তসম্মত।
স্মর্তব্য যে “আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিরোধিতা করলে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” এর দ্বারা এটা কখনো বুঝায় না যে, আল বাইয়্যিনাত প্রকৃত কুরআন শরীফ। কারণ শুধু আল বাইয়্যিনাত কেন, যে কোন কিতাবাদি, রেসালা বা পত্র পত্রিকাই হোক না কেন, এমনকি যদি এরূপ একটি পৃষ্ঠা হয় যেখানে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত বিষয়াদি উল্লেখ রয়েছ, তার বিরোধিতাও যদি কেউ করে, তবে সেও ঈমান হারা হয়ে যাবে। কারণ তার বিরোধিতা করার অর্থ হলো কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকে অস্বীকার করা। যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। নাঊযুবিল্লাহ!
তাই বলে কি কাযযাবুদ্দীন উক্ত পৃষ্ঠাকে প্রকৃত কুরআন শরীফ বলে আখ্যায়িত করবে? অথবা উক্ত কিতাবাদি, রেসালা. পত্র-পত্রিকা ও পৃষ্ঠা যাতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত বিষয়াদি লিখা হয়েছে, তা কি প্রকৃত অর্থে কুরআন শরীফ?
অতএব, যদি বলা হয যে, ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এর প্রতিটি সংখ্যার প্রতিটি বিষয়ই যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত, সেহেতু এর বিরোধিতা করার অর্থই হলো কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বিরোধিতা করা। তবে এক্ষেত্রে কেন এটা বুঝাবে যে, আল বাইয়্যিনাত শরীফ প্রকৃত অর্থেই কুরআন শরীফ?
মূলতঃ ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’কে কোথাও প্রকৃত অর্থে কুরআন শরীফ বলা হয়নি বরং রূপক অর্থেই বলা হয়েছে। কাযযাবুদ্দীন এরূপ একটি প্রমাণও দিতে পারবেনা যে, আল বাইয়্যিনাতকে সরাসরি অথবা প্রকৃত অর্থেই কুরআন শরীফ বলা হয়েছে। কাজেই কাযযাব্দ্দুীনের উক্ত মন্তব্য ও দাবি মিথ্যা, জালিয়াত, প্রতারণা ও জিহালতপূর্ণ বলে প্রমাণিত হলো।
কাযযাব্দ্দুীন তার মন্তব্যে আরো লিখেছে যে, “মছনবী শরীফ-এর উদাহরণ টানা হল একটি প্রতারণা মাত্র। নতুবা কেউ কখনও মছনবী শরীফকে প্রকৃতপক্ষে কুরআন শরীফ আখ্যায়িত করেননি এবং মছনবী শরীফ-এর বিরোধিতা করলে ঈমান হারা হতে হবে এমন কথাও কেউ বলেননি।”
কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, প্রকৃতপক্ষে কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যটিও একটি প্রতারণামাত্র। কারণ একজন সাধারণ লোকও জানে যে, আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মছনবী শরীফকে “ফার্সী ভাষায় কুরআন শরীফ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার প্রমাণ খোদ কাযযাবুদ্দীনের মুরব্বী শায়খুল হাদীছ নামধারী আজিজুল হক অনূদিত ‘বাংলা মছনবী শরীফ’-এই রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার আরেক মুরব্বী থানবীর ‘কলীদে মছনবী’তেও রয়েছে। যেমন- উক্ত কিতাবে উল্লেখ আছে, “এত বলিয়াও মছনবী শরীফ-এর বাস্তব আকৃতি ও গুণ সম্ভারের এই বর্ণনা মন হতে ছটাকও নহে। মছনবী শরীফ-এর এই বিরাটত্ব ও বিশালত্ব এবং প্রকাশভঙ্গির মাধুরী ও নিপুণতা আরও অসংখ্য গুণমালার ইঙ্গিত দানে প্রবাদ বাক্যের ন্যায় একটি বয়েত সর্বমুখে আবৃত্ত হয়,
مثنوی مولوی معنوی + ہست قران در زبان پہلوی
অর্থ: “দার্শনিক রুমীর মছনবী শরীফ ফার্সী ভাষায় কুরআন শরীফ। বাস্তবিকই মছনবী শরীফ-এর প্রশংসা এবং প্রকৃত আকৃতি যদি প্রকাশ পায় তবে এক মাত্র এই তুলনাটির মাধমেই প্রকাশ পাইতে পারে।” (মাওলানা রুমীর মছনবী শরীফ পৃষ্ঠা ৩৪, মৌলভী আজীজুল হক্ব অনূদিত, চক বাজার হামিদিয়া লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কাযযাবুদ্দীনের মুরব্বীরাই মছনবী শরীফকে কুরআন শরীফ-এর সাথে তুলনা করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই যে মছনবী শরীফকে প্রকৃতপক্ষে কুরআন শরীফ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং এর বিরোধিতা করলে ঈমান হারা হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন, তার প্রমাণও মৌলভী আজীজুল হক অনুদিত উক্ত কিতাবের ভুমিকাতে  রয়েছে। যে ভুমিকাটি স্বয়ং আল্লামা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতে লিখা। নিম্নে উক্ত ভুমিকাটি হুবহু উল্লেখ করা হলে,
بسم الله الرحمن الرحيم
هذا الكتاب الـمثنوى الـمعنوى وهو اصول اصول الدين فى كشف اسرار الوصول واليقين. وهو فقه الله الاكبر شرع الله الازهر وبرهان الله الاظهر. مثل نوره كمشكوة  فيها مصباح يشرق اشراقا انور من الاصباح وهو جنان الـجنان ذوالعيون والاعصان فيها عين تسمى عند ابناء السبيل سلسبيلا وعند اصحاب الـمقامات والكرامت خير مقاما واحسن مقيلا. الابرار منه يأكلون يشربون والاحرار منه يفرحون يطربون وهو كفيل مصر شراب للصابرين ودم وحسرة على ال فرعون والكافرين كما قال  يضل به كثيرا ويهدى به كثيرا وانه شفاء الصدور وجلاء الاحزان وكشاف القران وسعة الارزاق وطيب الاخلاق بايدى سفرة كرام بررة يـمنعون بان لايـمسه الا الـمطهرون تنزيل من رب العالـمين الا ياتيه الباطل من بين يديه  ولامن خلفه والله يرصده ويرقبه وهو خير حافظا وهو ارحم الراحمين وله القاب اخر لقبه الله تعالى بـها لا يسعها احاطة التحرير واقتصرنا على القليل  يدل على الكثير
অর্থ: এই মহাগ্রন্থ “মছনবী-মা’নবী” দুই দুই পঙক্তি বিশিষ্ট কাব্য আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান আলোচনায়। ইহা বাস্তব সত্য ও আল্লাহ পাক পর্যন্ত পৌঁছিবার রহস্য উদঘাটনে দ্বীন ইসলামের মৌলিক ভিত্তিসমূহের আলোচনায় লিখিত। ইহা মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত বৃহৎ ও সুগভীর জ্ঞানমালা, ইহা মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত উজ্জল পথ, ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া সর্ববিজয়ী প্রমাণ। ইহার আলো তেজময় উজ্জল প্রদীপরূপী। ইহা হইতে আলো বিচ্ছুরিত হইবে দীপ্ত প্রভাত অপেক্ষা অধিক। ইহা আধ্যাত্মিক উদ্যান-অন্তর জগতের স্বর্গ-বেহেশতী ঝরণা ও বৃক্ষ-লতায় সুসজ্জিত; যাহার মধ্যে “ছালছাবিল” নামক মনোরম প্রবাহীও রহিয়াছে। যাঁহারা আধ্যাত্মিক জগতের পদাধিকারী এবং সম্মানিত তাঁহাদের চিত্তবিনোদনের উত্তম ও সুন্দর ব্যবস্থা ও সামগ্রী রহিয়াছে ইহাতে। পবিত্র লোকগণ ইহাকে উপভোগ করিবেন এবং আনন্দ লাভ করিবেন। ইহা মিশরের নীল নদের ন্যায়; ইহা নেক লোকদের জন্য পানি এবং ফেরাউন গোষ্ঠি ও কাফিরদের জন্য রক্ত হইয়া যাইত। যেরূপ পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন, “অনেকের জন্য গোমরাহীর কারণ হইবে এবং অনেককে হেদায়েত দান করিবে।”
আমার এই গ্রন্থ অন্তর রোগে আরোগ্য দান করিবে, আভ্যন্তরীণ ময়লা পরিস্কার করিবে, কোরআনের সঠিক অর্থ উজ্জলরূপ প্রকাশ করিবে, রিজিকে প্রশস্ততা আনয়ন করিবে, চরিত্র নির্মল করিবে। ইহা পবিত্র হস্তে ধরিবার যোগ্য, অপবিত্র হাতের ছোঁয়াও নিষিদ্ধ। সারা জাহানের প্রভুর তরফ হইতে প্রদত্ত; অসত্য ও মিথ্যা কোন দিনই ইহাতে স্থান পায় নাই। আল্লাহ তায়ালা ইহাকে হেফাজত করিবেন; তিনি সর্বোত্তম হেফাজতকারী দয়ালু।
এই গ্রন্থের আরও অনেক গুণাবলী ও আখ্যা রহিয়াছে যাহা আল্লাহ তায়ালাই অবগত করিয়াছেন। আমি সামান্যের উপর ক্ষান্ত করিলাম যাহা অধিক্যের ইঙ্গিত বহন করে। (মিফতাহুল উলুম-শরহে মছনবী)
আল্লামা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত উপরোক্ত ভূমিকায় প্রদত্ত বক্তব্যের দ্বারা তিনি এটাই বুঝিয়েছেন মছনবী শরীফ প্রকৃতপক্ষেই কুরআন শরীফ। কারন কুরআন শরীফ যেরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, মছনবী শরীফও তদ্রুপ।
تـنـزيـل مـن رب الـعـالـمـيـن
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। (সূরা ওয়াক্বিয়াহ-৮০)
কুরআন শরীফ যেরূপ পবিত্রতা ব্যতীত স্পর্শ করা নিষেধ। মছনবী শরীফও তদ্রুপ।
لا يـمسه الا الـمطهرين
অর্থাৎ পবিত্রতা ব্যতীত স্পর্শ করা নিষেধ। (সুরা ওয়াক্বিয়াহ-৭৯)
কুরআন শরীফ স্বীকার ও অনুসরণ করার কারণে যেরূপ হিদায়াত লাভ হয় এবং অস্বীকার ও বিরোধিতা করার কারণে গোমরাহ বা বেঈমান হয়, মছনবী শরীফও তদ্রুপ।
يضل به كثيرا ويهدى به كثيرا
স্বীকার ও অনুসরণ করলে হিদায়েত পাবে আর অস্বীকার, বিরেধিতা করলে গোমরাহ ও ঈমান হারা হবে।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ – ২৬)
স্বর্তব্য যে,শুধু মছনবী শরীফই নয় পূর্ববর্তী আরো অনেক কিতাবকেই কুরআন শরীফ-এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “ফতহুল ক্বাদীরে” “কাশফুয্ যুনূন” এর বরাত দিয়ে লিখা হয়েছে যে,
قال فى كشف الظنون ان الـهداية كالقران قد نسخت ماصنفوا قبلها فى الشرع من كتب فاحفظ قواعدها واسلك مسالكها يسلم مقالك من زيغ ومن كذب
অর্থাৎ “কাশফুয্ যুনূন” কিতাবে উল্লেখ আছে, নিশ্চয়ই “হিদায়া শরীফ” কুরআন শরীফ-এর অনুরূপ।” হিদায়া শরীফ-এর পূর্বে শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কিত এরূপ কোন কিতাবই রচিত হয় নাই। সুতরাং তুমি এর মূলনীতিসমূহ মুখস্ত কর এর মাসয়ালাসমূহ অনুসরণ কর। তবেই তোমার কথা বক্রতা, অন্যায় এবং মিথ্যা থেকে নিরাপদ থাকবে।” (ফতহুল ক্বদীর ২য় জি: ১ম পৃষ্ঠা)
সুতরাং কাযযাবুদ্দীন যে লিখেছে, “মছনবী শরীফকে কেউ প্রকৃত পক্ষে কুরআন শরীফ আখ্যায়িত করেননি এবং মছনবী শরীফ-এর বিরোধিতা করলে ঈমান হারা হতে হবে একথাও কেউ কলেননি” তার এ বক্তব্য মিথ্যা ও জিহালত পূর্ণ বলে প্রমাণিত হলো।
কাযযাবুদ্দীন তার উক্ত মন্তব্যে সর্বশেষ যা লিখেছে তা হলো, “রূপক অর্থে আল বাইয়্যিনাত পত্রিকাকে কুরআন আখ্যায়িত করা কুরআনের সাথে জঘন্য ধরনের উপহাস। কেননা……..আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় উলামায়ে কিরাম সম্পর্কে এমন সব গালি-গালাজ লিখা হয় যা কোন ভদ্রতা ও শালিনতার আওতায় পড়েনা। উক্ত পত্রিকায় শাইখুল হাদীছ, মাসিক মদীনার সম্পাদক, চরমোনাইয়ের পীর ……, হাটহাজারীর মোহতামিমকে যেসব কুৎসিত গালি দেয়া হয়েছে। তার কয়েকটি নিম্নরূপ: উম্মতে মুহম্মদী থেকে খারিজ, মাওসেতুং ও গান্ধির ভাবশিষ্য, শয়তানের পোষ্যপুত্র, মুশরিক, মুনাফিক, ধোকাবাজ, ভ-, জাহিল, গোমরাহ, কাযযাব, কমীনী, যিনাখোর, নফসের পূজারী, মালাউন ইত্যাদি।” অর্থাৎ কাযযাবুদ্দীনের মতে যে পত্রিকায় উলামায়ে কিরাম ও নায়িবে নবীগণ উনাদেরকে গালি-গালাজ করা হয়, সে পত্রিকা আবার বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ হয় কি করে? কুরআন শরীফ-এ কি এরূপ গালি-গালাজ উল্লেখ আছে?
আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাব্দ্দুীন তার উক্ত বক্তব্য দ্বারা আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতি দু’টি তোহমত দিয়েছে। (১) আল বাইয়্যিনাতে গালি-গালাজ লিখা হয়। (২) উলামায়ে কিরাম বা নায়িবে নবীগণ উনাদেরকে গালি-গালাজ করা হয়া (নাঊযুবিল্লাহ)
প্রথম তোহমতের জবাবে বলতে হয় যে, মূলতঃ আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ কখনোই গালি-গালাজ লিখা হয়না। কাযযাবুদ্দীন যেহেতু আশাদ্দুদ দরজার জাহিল তাই গালি-গালাজ কোনটা সেটাই সে জানেনা, সে আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে গালি-গালাজ হিসেবে যে শব্দগুলো উল্লেখ করেছে সেগুলো যদি গালি-গালাজ হয় তবে বলতে হয় যে, কাযযাবুদ্দীনের মতে কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফ-এ গালি-গালাজ রয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ) কারণ উল্লিখিত শব্দগুলোর প্রায়গুলোই কুরআন শরীফ অথবা হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে,
‘উম্মতে মুহম্মদী থেকে খারিজ’
হাদীছ শরীফ-এর কিতাব ‘তিরমিযী শরীফ’-এর বাবুল ইসতিযান-এ রয়েছে,
لـيـس مـنـا مـن تـشـبـه بـغـيـرنـا
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি বিধর্মীদেরকে অনুসরণ করে সে আমার উম্মত নয়। (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনু মাজাহ, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল)
অর্থাৎ কাযযাবুদ্দীনের কথিত নায়িবে নবীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিধর্মীদেরকে অনুসরণ করেছে এবং করছে। যেমন মাওসেতুং-এর লংমার্চ, গান্ধির হরতাল, আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র, হিন্দুদের কুশপুত্তলিকাদাহ ইত্যাদি। তাই তারা ‘উম্মতে মুহম্মদী থেকে খারিজ’।
‘ধোকাবাজ’
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
مـن غـش فـلـيـس مـنـا
অর্থাৎ ধোকাবাজ আমার উম্মত নয়। (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল)
কাযযাবুদ্দীনের কথিত নাযিবরা ইসলামী লেবাস পরে ইসলামের কথা বলে এবং নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে হারামকে হালাল, হালালকে হারাম বানিয়ে মানুষদেরকে ধোকা দিচ্ছে। যেমন মাহিউদ্দীন তার পত্রিকায় প্রথমে নারী নেতৃত্বকে হারাম বলে ফতওয়া দেয়। পরে আবার হালাল বলে ফতওয়া দেয়। নামধারী আলিম তথা আলিমে ‘ছূ’ মাসিক মদীনা সম্পাদক তার পত্রিকা মাসিক মদীনা জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যার, ১১০, ১১১ পৃষ্ঠায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছে-
মুহম্মদ আবূ জাফর সালেহ, লাকসাম, কুমিল্লা
প্রশ্নঃ কোরআন এবং হাদীসের বিধান অনুযায়ী নারী নেতৃত্ব হারাম। অন্যান্য সংগঠনের সাথে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা নারীর সাথে একমত পোষণ করে রাষ্ট্রীয় কোন আইন করতে পারবেন কিনা?
উত্তর (১) “ইসলামের নারী নেতৃত্ব হারাম” এ ফতওয়া কে কোথায় কোন ভিত্তিতে দিলেন, তা আমাদের জানা নাই।
(২) তাছাড়া এমন একটা ঢালাও বক্তব্যের পিছনে দলীল কি, তাও জানবার সুযোগ আমাদের হয়নি। পারস্য সাম্রাজ্যের সিংহাসনে পরলোকগত বা নিহত সম্রাটের এক কন্যার অভিষেক হওয়ার সংবাদ হযরত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শোনানোর পর তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, “সে জাতির কল্যাণ হতে পারে না যে জাতির নেতৃত্ব নারীর হাতে অর্পিত হয়।
এই হাদীছখানার পরিপ্রেক্ষিতে ফেকাহবিদগণ নারী নেতৃত্ব অনুত্তম সাব্যস্ত করেছেন। হারাম সাব্যস্ত করেন নাই। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ঈমানদার, সুস্থ মস্তিষ্ক, সুবিবেচক ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হওয়ার শর্ত আরোপ করেছেন। সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন নয়, ফাছেক বা প্রমাণিত দুষ্কৃতকারীকে ইসলামী রাষ্ট্রের যে কোন ধরণেরই দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। সুতরাং ইসলামের নামে ঢালাও ফতওয়া বা মন্তব্য করা কি ঠিক হবে?
(৩) অনেকে যুক্তি দেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা খলীফাকে নামাযে ইমামতি করতে হয়।…..সুতরাং অগ্রপশ্চাত বিবেচনা না করেই এক কথায় হারাম সাব্যস্ত করে কোরাস গাইতে থাকা ঠিক কিনা তা ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করি।
পাঠক আলোচ্য উত্তরের ১নং অংশে মাহিউদ্দীন বলেছে, “ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম’ এ ফতওয়া কে, কোথায়, কোন ভিত্তিতে দিলেন তা আমাদের জানা নেই।
পাঠক! “ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম” এ ফতওয়া কে কোথায় কোন ভিত্তিতে দিলেন, তার অন্য কোন জবাব না দিয়ে মাহিউদ্দীনের দেয়া জবাবই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরছিঃ
মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন তার মদীনা পত্রিকার জানুয়ারী/৮৯ ঈসায়ী সংখ্যার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছে-
মুহম্মদ আব্দুল হাই, তাড়াইল বাজার কিশোরগঞ্জ
প্রশ্নঃ কোন মহিলাকে মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বানানো শরীয়তসম্মত কিনা? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তরঃ “কোন মুসলিম শাসনকর্তা যদি ইসলামী অনুশাসন অনুসরণ করতে যান তবে তার সর্বপ্রথম কর্তব্য দাঁড়ায় স্বীয় ইমামতিতে নামায প্রতিষ্ঠা করা ও জেহাদের নেতৃত্ব দেওয়া। এ দু’টি ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীর নেতৃত্ব চলেনা। একজন মহিলা যত বড় বিদূষী পূন্যবতীই হোননা কেন, উনার পক্ষে নামাযের ইমামতি করার প্রশ্ন আসেনা। সে মতে কোন নারীর ইসলামী দেশের সর্বোচ্চ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত নয়।
এক হাদীসে রয়েছে আল্লাহর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমাদের শাসকগণ যখন হবে কৃপণ আর শাসন ক্ষমতা গিয়ে পড়বে নারীদের হাতে তখন দুনিয়ার পৃষ্টদেশ অপেক্ষা অভ্যন্তরভাগই তোমাদের জন্য অধিক মঙ্গলজনক বলে বিবেচিত হবে।
হযরত রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কালে পারস্য সম্রাট কিসরার এক কন্যাকে সিংহাসনে বসানো হয়েছিল। এ সংবাদ শুনে আল্লাহর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মন্তব্য করেছিলেন, যে জাতি তাদের শাসনকর্তৃত্ব নারীদের হাতে তুলে দেয়, তাদের কখনও মঙ্গল হতে পারে না।”
উপরোক্ত দু’টি হাদীছ শরীফই ছহীহ্ এবং হাদীছ শরীফ-এর প্রায় সব কয়টি বিখ্যাত কিতাবে রয়েছে। যেহেতু তারা নিজেদের স্বার্থে হারামকে হালাল করে তাই তারা ‘ধোকাবাজ’।
‘মুশরিক’
কুরআন শরীফ-এ অসংখ্য স্থানেই ‘মুশরিক’ শব্দ উল্লেখ আছে। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,
انـما الـمشركون نـجس
অর্থাৎ ‘মুশরিক’রা নাপাক। কাযযাবুদ্দীনের কথিত নায়িবরা ‘মূর্তি’ বানিয়ে সেটাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে অর্থাৎ কুশপুত্তলিকা দাহ করে হিন্দু ও খ্রীষ্টানদের ন্যায় শিরক করেছে। তাই তারা ‘মুশরিক’। (সূরা তাওবা: আয়াত শরীফ – ২৮)
‘মুনাফিক’
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অসংখ্য স্থানেই ‘মুনাফিক’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। যেমন কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
ان الـمنا فقين فى الدرك الاسفل من النار
অর্থাৎ মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের অতল দেশে। (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ – ১৪৫)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
علامة الـمنافق ثلاثة
অর্থাৎ মুনাফিকের আলামত তিনটি। মিথ্যা বলা, আমানতের খিয়ানত করা ও ওয়াদা খিলাফ করা। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত শরীফ)
কাযযাবুদ্দীনের কথিত নায়িবরা যেহেতু ‘নেফাক্বী খাছলতে পরিপূর্ণ’। তাই তারা মুখে বলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত ক্ষমতার উৎস, আবার গণতন্ত্রকে অনুসরণ করে প্রমাণ করছে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। (নাঊযুবিল্লাহ) তাই তারা মুনাফিক অর্থাৎ নেফাকী খাছলতের অধিকারী।
‘জাহিল’
কুরআন শরীফ-এ ‘জাহিল’ শব্দটিও বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,
واذا خاطب هم الجاهلون قالوا  سلما
অর্থাৎ জাহিলরা যখন খিতাব করবে তখন বলবে সালাম। (সূরা ফুরক্বান: আয়াত শরীফ – ৬৩)
আর স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবূল হেকামকে সত্য অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান এবং হক্বের বিরোধিতা করার কারণে ‘আবূ জাহিল’ উপাধি দিয়েছেন। কাযযাব্দ্দুীনের কথিত উলামারাও যেহেতু সত্যকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করছে এবং হক্বের বিরোধিতা ও সমালোচনা করছে তাই তারাও জাহিল বা আবূ জাহিল।
‘গোমরাহ’
কুরআন শরীফ-এর প্রথম সূরা ফাতিহাতেই ‘গোমরাহ’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
ولا الضالين
অর্থাৎ আমাদেরকে গোমরাহ বা নাছারাদের পথ দিবেন না। (সূরা ফাতিহা: আয়াত শরীফ – ৭)
কাযযাবুদ্দীনের কথিত মৌলভিরা যেহেতু ইসলামকে বাদ দিয়ে আজ ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করছে এবং মনগড়া কথা বলছে ও মনগড়া আমল করছে, তাই তারা গোমরাহ।
‘কাযযাব’
কুরআন শরীফ-এর অসংখ্যা স্থানে ‘কাযযাব’ শব্দটি উল্লেখ আছে। যেমন, কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
لعنت الله على الكاذبين
অর্থাৎ কাযযাব তথা মিথ্যাবাদীদের প্রতি আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ – ৬১)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون
অর্থাৎ আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক দাজ্জালে কাযযাব বের হবে। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এর ব্যাখ্যায় বলা হয় যে, দাজ্জালে কাযযাব হলো উলামায়ে ‘ছূ’ অর্থাৎ যারা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করে এবং দুনিয়াবী স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে প্রকাশ্যে হারাম কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেনা।
কাযযাবুদ্দীনের কথিত দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা যেহেতু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করছে এবং অতি তুচ্ছ এম,পি বা মন্ত্রি পদের জন্য বেপর্দা ও ছবি তোলার ন্যায় কাট্টা হারাম কাজে লিপ্ত হচ্ছে, তাই তারা দাজ্জালে কাযযাব।
‘যিনাখোর বা ব্যাভিচারী’
এ শব্দটিও কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর বহু স্থানে উল্লেখ আছে। যেমন কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
الزانية والزانى فاجلدوا كل زاحد منها ماة جلد
অর্থাৎ যিনাকারিণী ও যিনাকারী প্রত্যেককে একশত দোররা মারতে হবে। (সূরা নূর: আয়াত শরীফ – ২)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
الـعـيـنـان ونـاهـمـا الـنـظـر
অর্থাৎ চোখের যিনা হচ্ছে দেখা। অর্থাৎ বেগানা মহিলাকে দেখা বা বেপর্দা হওয়াও এক প্রকার যিনা। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কাযযাবুদ্দীনের কথিত শ্রদ্ধেয়, অতি শ্রদ্ধেয় মৌলভীরা যেহেতু বেপর্দা হয় বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত, কথা-বার্তা ও উঠা-বসা করে তাই তারা যিনাখোর বা যিনাকারী।
‘নফসের পূজারী’
‘নফসের পূজারী’ অর্থাৎ নফসের অনুসরণকারী। একথাটি কুরআন শরীফ-এ রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان امره فرطا
অর্থাৎ তোমরা ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করো না যে ব্যক্তির ক্বলব বা অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল। সে মূলতঃ নফসের অনুসরণ করে, তার কাজগুলো শরীয়ত বিরোধী।” (সূরা কাহাফ: আয়াত শরীফ – ২৮) অর্থাৎ যার ক্বলবে যিকির জারী নেই সে ব্যক্তিই শরীয়ত বিরোধী কাজ করে এবং সে ব্যক্তিই নফসের অনুসরণ করে বা নফসের পূজারী।
কাযযাবুদ্দীনের কথিত নায়িবদের কারো ক্বলবেই যিকির জারী নেই, তাই তারা সর্বদা শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত এবং প্রতি নিয়ত নফসের অনুসরণ করছে তাই তারা নফসের পূজারী।
‘মালউন’
‘মালউন’ যারা লা’নতপ্রাপ্ত তারাই মূলতঃ ‘মালউন’। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর বহু স্থানেই তা উল্লেখ আছে। যেমন, কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة
অর্থাৎ নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে কষ্ট দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ‘লা’নতপ্রাপ্ত’ বা মালউন।” (সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ – ৫৭)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
لعن الله الناظر والـمنظور اليه
অর্থাৎ, যে পুরুষ বেগানা মহিলাকে দেখে এবং যে মহিলা বেগানা পুরুষের সাথে দেখা দেয় তারা উভয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে লা’নতপ্রাপ্ত বা মালউন। (বাইহাক্বী, মাযহারী)
কাযযাবুদ্দীনের কথিত সর্বজনমান্য নায়িবরা যেহেতু মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ অহরহ অমান্য করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তাই তারা আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে লা’নতপ্রাপ্ত বা মালউন।
অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ কাযযাবুদ্দীনের কথিত নায়িবদের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে তাদের ক্ষেত্রে যে বিশেষণগুলো যুক্ত করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে। এখন কাযযাবুদ্দীনের মতে যদি এগুলো গালি-গালাজ হয়, তবে সে কি এটাই প্রমাণ করছেনা যে, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা গালি-গালাজ করেছেন? (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)
মূলতঃ যারা দলীল পাওয়ার পরও জেনে শুনে হক্বকে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করে, হক্বের বিরোধিতা করে, দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কথা ও কাজে মশগুল থাকে তাদের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরা বা তাদের মধ্যে যে সকল বদ স্বভাব, বদ খাছলত রয়েছে সেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেয়া গালিগালাজ নয়। বরং এটি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই সুন্নত এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এরই শিক্ষা।
যেমন মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি “সূরা ক্বলম”-এর ১০, ১১, ১২ ও ১৩নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
ولاتطع كل حلاف مهين. هماز مشاء بنميم. مناع للخير معتد اثيم. عتل بعد ذلك زنيم
অর্থাৎ “তোমরা আনুগত্য করবেনা এরূপ ব্যক্তির যে (১) অধিক শপথকারী (২) লাঞ্ছিত, (৩) পরনিন্দাকারী, (৪) ঘুরে ঘুরে গীবতকারী (৫) চোগলখোর (৬) সৎ কাজে বাধা দানকারী (৭) সীমালঙ্ঘনকারী (৮) পাপিষ্ঠ (৯) বদ চরিত্র (১০) উপরন্তু সে অবৈধ সন্তান।”
মহান আল্লাহ পাক উক্ত আয়াত শরীফসমূহে উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন, হক্বকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানকারী, হক্বের বিরোধিতা ও অপপ্রচারকারী ওলীদ বিন মুগীরার দশটি খারাপ বৈশিষ্ট্য প্রকাশের অনিবার্য প্রয়োজনে দশটি মন্দ বিশেষণ উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, দশটি বদ বৈশিষ্ট সম্পর্কে যখন আয়াত শরীফ নাযিল হয় তখন পাপাত্মা, কুলাঙ্গার মুগীরা স্পষ্টভাবে বুঝে নেয় যে, নয়টিই তার নিজের মধ্যে রয়েছে, কিন্তু অবশিষ্ট অর্থাৎ সে সত্যিই অবৈধ সন্তান কিনা সেটা জানার জন্যে সরাসরি তার মাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তার মা তার স্বামীর অক্ষমতা হেতু অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ মেলামেশার কথা এবং তার মাধ্যমে মুগীরার জন্মের কথা স্বীকার করে। এতে কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত দশটি বদ বিশেষণই তার সাথে প্রযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়।
জাহিল কাযযাবুদ্দীনের নিকট প্রশ্নঃ সে কি এখন বলবে যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে গালি-গালাজ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! যদি এগুলো গালি-গালাজ না হয়, তবে আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর উল্লিখিত বিশেষণগুলো কেন গালি-গালাজ হবে? উক্ত বিশেষণগুলোর প্রতিটিই তো কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে। তবে কি কাযযাবুদ্দীনের মতে মিথ্যাবাদীকে কাযযাব, গোমরাহকে গোমরাহ, জাহিলকে জাহিল, মুশরিককে মুশরিক, মুনাফিককে মুনাফিক ও লা’নতপ্রাপ্তকে মালউন বলা যাবেনা? কেউ যদি তা বলে তবে কি সেটা গালি-গালাজ হবে? যদি এগুলো গালি-গালাজই হয় তবে এগুলো কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হলো কেন? কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ ব্যক্ত হওয়ার অর্থ কি এই নয় যে, উল্লিখিত বিশেষণগুলো গালি-গালাজ নয়।
অতএব, কাযযাবুদ্দীন আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর প্রতি যে তোহমত দিয়েছে, ‘আল বাইয়্যিনাতে গালি-গালাজ লেখা হয়’ তা মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, কলপনাপ্রসূত ও জিহালতপূর্ণ বলে প্রমাণিত হলো। আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ কারো হক্ব সমালোচনা করতে গিয়ে যে বিশেষণগুলো প্রকাশ করা হয় তাও সঠিক এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ সম্মত। মিথ্যা ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ বিরোধী কোন বিশেষণ আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ প্রকাশ করা হয়না। এ ব্যাপারে কাযযাবুদ্দীন গংদের প্রতি চ্যালেঞ্জ রইল যদি তাদের ক্ষমতা, সৎ সাহস ও ইলমের জোর থাকে তবে যেন কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দলীল দ্বারা লিখিতভাবে প্রমাণ করে যে, আল বাইয়্যিনাতে তার কথিত নায়িবদের ক্ষেত্রে যে বিশেষণগুলো ব্যক্ত করা হয়েছে তা মিথ্যা। এ ধরনের কোন দোষ তাদের মধ্যে নেই এবং উল্লিখিত বিশেষণগুলো কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ।
কাযযাবুদ্দীন আল বাইয়্যিনাতের প্রতি দ্বিতীয় যে অপবাদ বা তোহমত দিয়েছে তা হলো “আল বাইয়্যিনাতে উলামায়ে কিরাম বা নায়িবে নবীগণকে গালি-গালাজ করা হয়।” নাঊযুবিল্লাহ!
কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ বর্ণিত, যে বিশেষণগুলো কাযযাবুদ্দীন গালি-গালাজ বলে প্রচার করছে সেগুলো গালি-গালাজ নয় তা পূর্ববর্ণিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। কারণ সেগুলো যদি গালি-গালাজ হয় তবে কাযযাবুদ্দীনের মতে সাব্যস্ত হয় যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ গালি-গালাজ রয়েছে। উক্ত বিশেষণগুলো কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ থাকায় কেউ যদি বলে যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ গালি-গালাজ রয়েছে তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ উলামায়ে কিরাম বা নায়িবে নবীদের গালি-গালাজ করা হয়।” নাঊযুবিল্লাহ। কাযযাবুদ্দীনের একথাও ডাহা মিথ্যা। কারণ কাযযাবুদ্দীন যাদেরকে উলামায়ে কিরাম বা নায়েবে নবী বলে দাবি করছে, তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী নয়। কাযযাবুদ্দীন যেহেতু আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল, তাই সে জানেনা যে কে হক্কানী আলিম, আর কে নায়িবে নবী। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবীর সঠিক পরিচয় বা সংজ্ঞা তুলে ধরলেই সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হবে যে, কাযযাবুদ্দীনের দাবি সম্পূর্ণই মিথ্যা। অর্থাৎ তার উল্লিখিত ব্যক্তিরা আসলে হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী নয়।
তাই নিম্নে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী-এর পরিচয় তুলে ধরা হলো-
হক্কানী আলিম-এর পরিচয়
উল্লেখ্য, عَاَلِمٌ  (আলিমুন) শব্দটি বাবে  سمع يسمع  থেকে উদ্ভূত। উক্ত শব্দটি اسم فاعل বা কর্তৃবাচক। এর লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- একজন জ্ঞানী পুরুষ। আর ইস্তিলাহী বা পারিভাষিক অর্থে- আলিম তাকেই বলে, যিনি দ্বীনি ইলম তথা ইলমে মা’রিফাত ও ইলমে তাছাউফের অধিকারী। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি আলিম হতে হলে প্রথমতঃ তাকে ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টাই অর্জন করতে হবে।
কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
العلماء ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولادرهما وانما ورثوا العلم
অর্থঃ “নিশ্চয়ই আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ। আর নিশ্চয়ই নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইলম রেখে গেছেন।” (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারিফুস্ সুনান, উরফুশ শাযী, বযলুল মাজহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
উল্লেখ্য যে, নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ ওয়ারিছ উনারা স্বত্ব হিসেবে দু’প্রকার ইলম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ।
যে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
العلم علمان فعلم فى القلب فذاك العلم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم
অর্থঃ “ইলম দু’প্রকার। (১) ক্বলবী ইলম (ইলমে তাছাউফ) যা উপকারী ইল্ম, (২) জবানী ইলম (ইলমে ফিক্বহ) যা আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, বাইহাক্বী, দাইলামী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্বীবী ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি সাল্লাম তিনি ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টিই রেখে গেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই নায়িবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলিম।
উপরোল্লিখিত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “মাকতুবাত শরীফ”-এ উল্লেখ করেন-
العماء ورثة الانياء : علمیکہ از انبیاء علیہم الصلوات والتسلیمات باقی ماندہ است دونوع است علم احکام وعلم اسرار وورث کسی ہست کہ اورا ہردونوع علم سہم بود نہ آ  نکہ اورا ازیک نوع نصیب بود نہ از نوع دیگر کہ آن منافی وراثت است چہ وراثت را  از جمیع انواع بر مورث نصیب است نہ از بعض وآنکہ اورا از معین نصیب است داخل غرما است کہ نصیب او بجنس حق او تعلق گرفتہ است.
অর্থঃ “আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের ওয়ারিছ।”
এ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আলিম উনারাই, যাঁরা নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের রেখে যাওয়া ইলমে  আহকাম (ইলমে ফিক্বাহ) ও ইল্মে আসরার (ইলমে তাছাউফ) উভয় প্রকার ইলমের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইলমের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশীদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।”
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মিশকাত শরীফ-এর বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফ”-এ উল্লেখ করেন যে, মালিকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলেন, তিনি মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলিম।”
অর্থাৎ যে ইলমে ফিক্বাহ শিখলো, কিন্তু ইলমে তাসাউফ শিখলোনা, সে হচ্ছে ফাসিক। আর যে বলে আমি মা’রিফাত করি বা ইলমে তাসাউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ স্বীকার করেনা, সে হচ্ছে যিন্দিক্ আর যিনি উভয়টাই শিক্ষা করলেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী আলিম।
আলিম কাকে বলে?
আলিম ঐ ব্যক্তিই যাঁর অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক উনার ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
انما يحشى الله من عباده العلماء
অর্থাৎ-“নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণ উনারাই আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হাম্বলী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন, শায়খুল মুহাদ্দিছীন হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে। তিনি এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশি খোদাভীতি রয়েছে তিনি তত বড় আলিম।” উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে খুলাছা”য় উল্লেখ আছে যে,
“العلماء” سےاصطلاحی عالم یعنی کتابین پرہ لینے والے مراد نہیں. بلکہ کبریائے ذات وعظمت صفات کونور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے والے اسلئے کہ اصحاب رسول صلی اللہ علیہ وسلم وارباب ولایت وقبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی گو اونکا علم نافع اعلی درجہ کاتھا
অর্থ: উক্ত আয়াত শরীফ-এ العلماء শব্দ দ্বারা কিতাবসমূহ পাঠকারী তথা (দাওরা বা টাইটেল পাশকারীদেরকে) বুঝানো হয়নি। বরং কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত “আলিম” উনারাই, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাতসমূহকে ঈমান ও মারিফতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন।
কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয়তম ছাহাবী আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও (পরবর্তী) বিলায়েত প্রাপ্ত ও মকবুল ওলীআল্লাহগণ উনারা কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশ আলিম ছিলেন না। তথাপিও উনারা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইলমের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ উনারাই কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন।
উল্লিখিত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এ উল্লেখ করেন,
عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية وقال احمد بن صالـح الـمصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانـما العلم نوريـجعله الله تعالى فى القلب
অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয় বরং যার মধ্যে আল্লাহভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর আহমদ বিন ছালেহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইলম হচ্ছে নূর বা জ্যোতি স্বরূপ। মহান আল্লাহ পাক তিনি তা মানুষের অন্তকরণে দান করেন।”
উক্ত “তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এ উল্লিখিত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে,
قال سفيان الثورى….. العلماء ثلاثة عالم بالله وعالم بامر الله وعالم بالله ليس بعالم بامر الله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامر الله الذى يخشى الله تعالى ويعلم الحدود والفرائض
অর্থঃ “হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমত্ল্লুাহি আলাইহি তিনি বলেন, আলিমগণ উনারা তিনভাগে বিভক্ত। (১) আলিম বিল্লাহ অর্থাৎ যারা শুধু মহান আল্লাহ পাক উনাকেই জানেন। কিন্তু উনার হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলিম বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানেন, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহভীতি নেই। (৩) আলিম বিল্লাহ্ ওয়া বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যাঁরা মহান আল্লাহ পাক ও উনার শরীয়তের হুকুম-আহ্কাম ও ফারায়িজ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন। (উনারাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম।)
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
من ارباب العلم؟ الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الطمع
অর্থঃ “(আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কা’ব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইল্মের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পুনরায় জিজ্ঞেসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্)
বিশিষ্ট তাবিয়ী, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন,
انـما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب فى الاخرة والبصير بذنبه والـمداوم على عبادة ربه والوارع والكاف عن اعراض الـمسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لـجماعتهم
অর্থঃ “ফক্বীহ্ বা আলিম হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন গুনাহের প্রতি সতর্ক, মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং উনার অধীনস্থদের নছীহত করেন।”
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী পীর ছাহেব বা মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী আমল করেন। অর্থাৎ নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তিনিই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।
কাযযাবুদ্দীন যাদেরকে উলামায়ে কিরাম বা নায়িবে নবী বলে মুখে ফেনা তুলছে তাদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলী আছে কি? মূলতঃ তাদের কারো মধ্যেই উল্লিখিত গুণাবলীর কোনটাই নেই। যেমন প্রথমতঃ তারা অনেক বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ আক্বীদা পোষণ করে থাকে। তারা বিশ্বাস ও প্রচার করে থাকে যে, (১) মহান আল্লাহ পাক তিনি নূর বা আলো, (২) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরি নন বরং মাটির তৈরি, (৩) হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল বা লগজেশ করেছেন। (৪) হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াতের কাজ বন্ধ করে মহান আল্লাহ পাক উনার গজবে পড়েছেন, (৫) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের ইজতিহাদ ভুল ছিল, (৬) মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মতই সাধারণ মানুষ, (৭) নিয়ত করে মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, (৮) মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ করা বিদয়াত ও শিরক, (৯ ফরয নামাযের পর মুনাযাত করা বিদয়াত, (১০) ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া জায়িয। নাঊযুবিল্লাহ! এ ধরনের আরো বহু কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বিরোধী আক্বীদায় তারা বিশ্বাসী। যাদের আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়, তারা আলিম বা নায়িবে নবী হওয়া তো দূরের কথা তাদের জন্য মু’মিন-মুসলমান থাকাই তো দুষ্কর।
দ্বিতীয়তঃ তারা কেউ ইছলাহপ্রাপ্ত নয়। যার কারণে তাদের মধ্যে খোদাভীতি বা তাক্বওয়াও নেই কারণ তারা যৎসামান্য ইলমে জাহির বা ইলমে ফিক্বাহের অধিকারী হলেও তারা মূলতঃ ইল্মে তাছাউফ থেকে পরিপূর্ণরূপেই শূন্য। তাই তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে হারাম নাজায়িয বা শরীয়তবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে পারেনা, বরং অহরহ হারাম, নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে মশগুল থাকে। যেমন- বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা ইত্যাদি। যাদের মধ্যে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি নেই, তারা কি করে আলিম বা নায়িবে নবী হতে পারে?
তৃতীয়তঃ তাদের অধিকাংশ আমলগুলোই শরীয়ত ও সুন্নতের খিলাফ। অর্থাৎ সর্বদাই তারা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াত বা সুন্নত পরিপন্থী কাজে মশগুল। যেমন- পর্দা করা ফরয, তারা বেপর্দা হয়। নারী নেতৃত্ব মানা হারাম, তারা নারী নেতৃত্ব মেনে চলে। কুশপুত্তলিকা দাহ করা বা মূর্তি বানানো হারাম, তারা তা করে। অনুরূপভাবে তাদের টুপি থেকে শুরু করে সেন্ডেল, পোশাক-পরিচ্ছদ, চলা-ফেরা, উঠাবসা, কথা-বার্তা চাল-চলন সবই সুন্নতের খিলাফ। অতএব, যারা ইলম অনুযায়ী আমল করেনা অর্থাৎ শরীয়তবিরোধী বা হারাম কাজে মশগুল এবং সুন্নতের পায়রবী করেনা তারা কি করে হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী হতে পারে?
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ তথা কুফরী আক্বীদা পোষণ করার পরও শরীয়তবিরোধী তথা হারাম নাজায়িয কাজে প্রকাশ্যে মশগুল থাকার পরও সুন্নতের খিলাফ আমল করার পরও যদি তারা হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী হয়, তবে ৭২টি বাতিল ফিরক্বা, কাদিয়ানী, বাহাই কি দোষ করেছে? এরা কেন কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে বাতিল? এত সব হারাম ও শরীয়তবিরোধী কাজ প্রকাশ্য করার পরও যদি কাযযাবুদ্দীনের দৃষ্টিতে তারা আলিম ও নায়িবে নবী থেকে যায়, তবে হাদীছ শরীফ-এ যাদেরকে উলামায়ে ‘ছূ’ বা ভণ্ড আলিম বলা হয়েছে তারা কারা? এর কোন জবাব কাযযাবুদ্দীনের নিকট আছে কি? মূলতঃ এর কোন জবাবই কাযযাবুদ্দীনের নিকট নেই। কারণ উলামায়ে ‘ছূ’দের পরিচয় তুলে ধরলেই কাযযাবুদ্দীন নিজ ফাঁদে নিজে আটকা পড়ে যাবে।
কাযযাবুদ্দীন যদি তার দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে তাকে প্রথমতঃ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী কারা তার পরিচয় তুলে ধরতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ হাদীছ শরীফ-এ যাদেরকে উলামায়ে ‘ছূ’ বলা হয়েছে তারা কারা? অর্থাৎ তাদের পরিচয় তুলে ধরতে হবে। এরপর কাযযাবুদ্দীনের কথিত মৌলভীরা যদি হক্কানী আলিমের সংজ্ঞায় পড়ে, তবে তারা হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী। আর তখনই মূলতঃ প্রমাণিত হবে যে, আল বাইয়্যিনাত হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবীদের সমালোচনা করে কিনা?
আর যদি তার কথিত ব্যক্তিরা উলামায়ে ‘ছূ’র সংজ্ঞায় পড়ে তবে তারা উলামায়ে ‘ছূ’ বা ভণ্ড দুনিয়াদার। আর তখন প্রমাণিত হবে যে, আল বাইয়্যিনাত কোন হক্কানী-রব্বানী আলিম-এর সমালোচনা করে না বরং উলামায়ে ‘ছূ’ বা দুনিয়াদারদের সমালোচনা করে। সাথে সাথে কাযযাবুদ্দীন আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতি যে তোহমত দিয়েছে তাও মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
তবে সংক্ষেপে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে উপরে হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী উনাদের যে পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, তার সাথে কাযযাব্দ্দুীনের কথিত ব্যক্তিদের কোনই মিল নেই বরং সম্পূর্ণ খিলাফ। তাই প্রমাণিত হলো যে, তারা উলামায়ে ‘ছূ’ বা ভণ্ড দুনিয়াদার। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, আল বাইয়্যিনাত কোন হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী উনাদের সমালোচনা করেনা বরং উলামায়ে ‘ছূ’ বা ভণ্ড দুনিয়াদারদের সমালোচনা করে। আর উলামায়ে ‘ছূ’ বা ভণ্ড দুনিয়াদারদের সমালোচনা করা বা তাদের সত্যিকার বিষয়গুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার সুন্নত, উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত এবং বহু ফযীলতের কারণ। এদিকে ইঙ্গিত করেই হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
ایک زمانہ بد نام علماء سوء + بہتر از شصست سال طاعت بے ریا
অর্থাৎ “কিছুক্ষণ সময় উলামায়ে ‘ছূ’ বা ভণ্ড তথা দুনিয়াদারদের দোষত্রুটি বা বদ বিশেষণগুলো বর্ণনা করে দেয়া ষাট বৎসর বেরিয়া (নফল ইবাদত) থেকে উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (তালবীসে ইবলীস)
মূলকথা, ভালভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বাইরে কিছুই লিখা হয় না। বরং প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত। তাই হক্ব তালাশী অনেক পাঠক আল বাইয়্যনাত শরীফ-এর প্রশংসা করতে গিয়ে রূপক অর্থে আল বাইয়্যিনাত শরীফকে বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থৎ কুরআন শরীফ যেরূপ মানুষের ঈমান- আক্বীদা ও আমলকে দুরস্ত করে হক্ব পথ দেখায় এবং নাহক্ব থেকে ফিরিয়ে রাখে, আল বায়্যিনাত শরীফও তদ্রুপ মানুষের ঈমান আক্বীদা ও আমলকে দুরস্ত করছে হক্ব পথ দেখাচ্ছে এবং নাহক্ব শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে মানুষকে হিফাযত করছে। তাই এ অর্থে আল বাইয়্যিনাত শরীফকে বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ বলা অবশ্যই শরীয়তসম্মত। কারণ এ অর্থে মছনবী শরীফ ও হিদায়া শরীফকেও কুরআন শরীফ বলা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment