Monday, February 1, 2016

ওলীগনের শাফায়াত সম্পর্কে



আল্লাহর একজন বিশিষ্ট ওলী ছিলেন ওয়াইছ করনী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন একজন তাবেয়ী। তার সম্পর্কে কিছু হাদিস :

  • হযরত ওমর (রা.) বলিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছি, নিশ্চয়ই , অনুগতদিগের (খায়রুত্তাবেয়ীন) মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যাহার নাম উয়ায়ছ। তাহার মা আছে এবং তাহার শরীরে একটি শ্বেত চিহ্ন আছে। তোমরা (তাহার সংগে দেখা করিয়া) অনুরোধ করিবে যেন সে তোমাদের ক্ষমার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে। (মুসলিম শরীফ ৬২৬০/ মিশকাত ৬০০৬)
  • হযরত উমর বিন খাত্তাব হইতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলিয়াছেন, “নিশ্চয়ই ইয়েমেন হইতে আপনাদের নিকট এক লোক আসিবে যে উয়ায়ছ নামে অবিহীত। সে তাহার মাতার জন্য ইয়েমেন ত্যাগ করিতে পারে না। তাহার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল। সে আল্লাকে ডাকিল, তাহার শ্বেত রোগ এক দিরহাম পর্যন্ত ব্যতীত দূর হইয়া গেল। আপনাদের মধ্যে যে কেহ তাহার সাক্ষাত পাও তাহাকে অনুরোধ করিবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে । (মুসলিম শরীফ ৬২৫৯/ মিশকাত শরীফ ৬০০৬)
  • রাসূলল্লাহ  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলিলেন, উয়ায়ছ ইবনে আমর মুজাহিদগণের সাহায্যার্থে আগমনকারী ইয়েমেনবাসীদের সহিত তোমাদের নিকট আসিবে। সে মুজার গোত্রের কারণ শাখার অন্তর্ভুক্ত। তাহার ধবল রোগ ছিল। (আল্লাহর নিকট দোয়া করিবার কারণে) এক দিরহাম পরিমান স্থান ব্যতীত সে উহা হইতে আরোগ্য লাভ করে। তাহার মাতা আছে। সে তাহার মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করে। সে আল্লাহর নিকট শপথ করিলে, আল্লাহ তাহা পূরণ করে। তাহার দ্বারা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা করাইতে সক্ষম হইলে তাহা করাইবে। (মিশকাত শরীফ)


হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের এক বিশেষ ওলী আল্লাহর সুপারিশ করা সম্পর্কে ইরশাদ করেন, "হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল জাদয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের এক ব্যক্তির সুপারিশে বনী তামীম গোত্রের লোক সংখ্যা হতেও অধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।"

  • তথ্যসূত্রঃ- সুনানে তিরমিযী শরীফ,
  • সুনানে ইবনে মাজাহ, 
  • মিশকাত শরীফ৫৩৬১, 
  • সুনানে দারেমী

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন," হযরত উয়ায়ছ করণীর শাফায়াতে রাবী ও মুজার গোত্রের মেষের পশম সমপরিমান লোক বেহেশতে যাইবে।
(মিশকাত শরীফ)

  • হযরত আবি মাসউদ-উল-আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আ অহু  হতে বর্নিতঃ রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“আমার উম্মতের ভিতর এক ব্যক্তি, যাহাকে লোকে উয়ায়েছ ইবনে আবদুল্লাহ্ করণী বলে, তাহার প্রার্থনায় অবশ্যই রাবিয়া ও মুজার এই দুই গোত্রের বকরীর পশমের সংখ্যক গুনাহ্গার উম্মতের গুনাহ্ মাফ হইবে।” (শওয়াহেদুন-নবুওয়াত/মছনবী রহীম)

  • হযরত আনাস রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ম ফরমায়েছেন, কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোক সুপারিশ করবে।

(১) নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম ।
(২) উলামায়ে কিরাম (বা আউলিয়া কেরাম)
রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৩) শহীদ গন।"
[সুনানে ইবনে মাজাহ
শরীফ, মিশকাত শরীফ ৫৩৭০]

এই হাদিসটার সনদ দিতে গিয়ে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন," হাশরের মাঠে পিয়ারা নবীর নির্দেশে নবীগণ তাদের উম্মতদের, আউলিয়াগণ তাদের মুরিদদের এবং শহীদগণ তাদের মা-বাবার জন্য সুপারিশ করবে। (মসনদে গোয়ারভী শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬২)

  • অপর হাদিসে আছে :- "যখন আল্লাহর অলীগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেল , তখন তাদের মুমীন ভাইদের জন্য তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে "হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত , আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সত্কাজ করত "। তখন আল্লাহ বলবেন "যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস । তাদের মুখমন্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে " । অতঃপর তারা (অলীগণ) সেখানে জাহান্নামীদের নিকট যাবেন । এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে । এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে । (সহীহ বুখারী , খন্ড ২ পৃষ্ঠা ১১০৭ । হাদীস নং ৭০০১)


  • সহিহ হাদিসে বর্নিত :-

আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ (ওলীগন) তাদের ঐ সমস্ত মুমীন ভাইদের জন্য শুপারিস করবে যারা জাহান্নামে পড়ে থাকবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য আল্লাহর দরবারে এমনভাবে আবদারের পর আবদার করতে থাকবে, যে রকম আবদার কোন ব্যক্তি তার নিজ হক আদায়ের জন্যও সাধারণত করে না । এবং তারা আল্লাহর দরবারে আবেদন করবেন হে আমাদের রব এ সমস্ত লোক আমাদের সাথে রোজা রাখত, নামাজ পড়ত, হজ্ব করত ।

(সহীহ মুসলিম । খন্ড ১
পৃষ্ঠা ১০৩ হাদিস ১৮৩)

  • আরো বর্নিত আছে :-হযরত আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আছেন যারা একটি বিরাট দল এর (বা তাদের সকল সমর্থক ও অনুসারীদের) জন্য সুপারিশ করবে । আর কিছু লোক আছেন যারা একটি দলের (বা আত্তীয় স্বজনদের) জন্য সুপারিশ করবে । আর কিছু লোক আছে যারা এক এক জনের জন্য সুপারিশ করবে । এভাবে তারা সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে ।


[আল হাদিস, তিরমীযি খন্ড ২ পৃঃ ৬৭ , হাদিস ২৪৪০,
মিশকাত শরীফ ৫৩২৬]

No comments:

Post a Comment