Monday, February 1, 2016

পীর-ওলি-আউলিয়া কারা ?



ওলি আরবী শব্দ যার অর্থ অভিভাবক বা মুরুব্বী, বন্ধু। আরবী ভাষায় “আউলিয়া” শব্দটি “ওলি’র বহুবচন। ‘ওলি’ অর্থ বন্ধু,মিত্র বা অনুসারি। কখনো শব্দটির অর্থ হয় শাসক,অভিভাবক বা কর্তা। (তথ্যসূত্রঃ আরবী-বাংলা অভিধান,প্রকাশনায় ইসলামিকফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)। 
প্রসিদ্ধ আরবী-ইংরেজী অভিধান “আল মাওয়ারিদ” অনুসারে ওলি শব্দের অর্থঃ guardian, patron, friend companion ইত্যাদী।পবিত্র কোরআনে “ওলি” এবং “আউলিয়া” এ উভয় শব্দটির ব্যবহার হয়েছে অসংখ্য বার।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,


  • ” আলা ইন্না আওলিয়া আল্লাহি লা খাওফুন আ ’লাইহিম ওয়া লাহুম ইয়াহ্ঝানুন। আল্লাযীনা আ ’মানূ ওয়া কানূ ইয়াত্তাকানূন।” অর্থ- “জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহর ওলিদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। 

সূরা ইউনুস ১০: ৬২- ৬৩।

  • ”নিশ্চয়ই তোমাদের ওলি হলেন আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আর ঈমানদার লোকেরা- যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দিয়ে দেয়, এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত বাধ্যগত থাকে। যারা ওলি মানে আল্লাহকে এবং আল্লাহর রসুলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে, তারাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই থাকবে বিজয়ী”। (সূরা আল মায়িদা,আয়াত-৫৫-৫৬)”

এ দুটি আয়াত থেকে জানা গেল, সকল মুমিনই আল্লাহর অলি, যারা সালাত কায়েম করে,যাকাত প্রদান করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর অনুগত থাকে তারাই ওলি॥

”সকল মুমিনই আল্লাহ রহমানের অলি। (ইমাম তাহাবী ”আল আকীদা” গ্রন্থ)” 
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
“ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মু মিনীন” – আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৮। 
“ওয়াল্লাহু
ওয়ালীউল মুত্তাকীন “- আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু। সূরা জাসিয়া ৪৫ :১৯।” 
আয়াতে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ্তা’ লা তাঁর আওলিয়া বা বন্ধুদের প্রসংঙ্গে বলছেন, যে, তাঁর যারা বন্ধু তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। কারা তাঁর সেই বন্ধু?
আল্লাহ তায়ালা বলছেন যারা ঈমান আনবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে তারাই হবে তাঁর বন্ধু। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন , “তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩।
” তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। সুতারং মুত্তাকী বা আমরা প্রচলিত ভাষায় যাকে বলি পরহেজগার সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন। আবার এই মুত্তাকীদের মধ্যে যিনি অধিক মুত্তাকী তিনি আবার আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। এই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিটিই আল্লাহর বন্ধু সে কথাটিই আল্লাহ তায়ালা সূরা ইউনুসের ৬৩নং এবং সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে বলেছেন।
আল্লাহ তায়ালা কাকে তাঁর বন্ধু হিসাবে গ্রহন করবেন বা করেছেন তা কিভাবে জানা যায় ? অর্থাৎ আল্লাহ এবং তার রাসুলের দেওয়া সঠিক পথে যারা থাকবে তারাই ওলি। তাহলে আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হওয়ার দাবীদার ব্যক্তিটি কিভাবে জানতে পারবেন,
এই বিষয়ে আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেন-
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভকরতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তারপা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা- দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। [বুখারী: ৬৫০২]
উপরোক্ত হাদিস খেকে দুটি বিষয় প্রতিয়মান হয়;ওলি হতে হলে ফরজ হকুম আহকাম পালনের পাশাপাশি যিনি নফল ইবাদত করবেন তিনি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু আর আল্লাহর বন্ধু কে? 
সুতরাং ওলি কে? তার সহজ উত্তর যারা ঈমান আনবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে তারাই হবে তাঁর বন্ধু। 
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন , “তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩।


No comments:

Post a Comment