Monday, February 1, 2016

পীর হওয়ার পূর্ব শর্ত গুলো কি কি

* হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, "যে ব্যক্তি ফিকাহের ইলম হাসিল করল। কিন্তু তাসাউফের ইলম শিক্ষা করল না, সে ফাসেক। আর যে ব্যক্তি তাসাউফের ইলম হাসিল করল, কিন্তু ফিকাহের ইলম শিক্ষা করল না, সে জিন্দিক। তবে যে ব্যক্তি জাহেরী ও বাতেনী উভয় ইলম শিক্ষা করল। সেই সত্যিকারের হক্কানী আলেম। (মেশকাত শরিফের শরাহ মেরকাত, কাহেরার ১ খ. ৩১৩ পৃ. এবং বাইরুত ২ খ. ৪৭৮ পৃ.)
* হযরত জুনাইদ বোগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- "তুমি আলেম হয়ে সুফী হও,সুফী হয়ে আলেম হইয়োনা ধ্বংস হয়ে যাবে " ।


  • তাছাউফ নিয়ে হাফেজ ইবনে কাইয়্যূম রহমতুল্লাহি আলাইহি এর অভিমত- 
হাফেজ ইবনে কাইয়্যূম রহমতুল্লাহি আলাইহি  “আল ওয়াবিলুস’সায়্যিব মিনাল কালিমিত তায়্যিব” নামক কিতাবের ৬৯ পৃষ্ঠায় তাছাউফ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। তাঁর এ কিতাব সম্পূর্ণভাবে বুযুর্গগণের বিভিন্ন অবস্থা ও তাঁদের যিকির আযকার ও ওজীফার বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে। এ কিতাবের মধ্যে তিনি পীর ও শায়েখ হওয়ার জন্য এ শর্ত লিখেছেন যে, কেউ যদি কারো কাছে মুরীদ হতে চায় তাহলে সর্ব প্রথম তাকে লক্ষ করতে হবে, শায়েখ যেন
(১) যিকির কারী হন
(২) যিকির থেকে উদাসীন না হন
(৩) সুন্নতের অনুসারী হন
(৪) নফস পুজারী না হন
(৫) দ্বীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার হন। এমন শায়েখ যদি তুমি পাও তাহলে তাঁর আচলকে মজবুতভাবে ধরো।

এদেশের মানুষ সাধারণত ধর্মপরায়ণ । তাদের ধর্ম পরায়ণতার সুযোগ নিয়ে সমাজে বেশ কিছু ব্যবসায়ী পীরের আবির্ভাব ঘটেছে- যাদের ভিতর হক্কানী পীর (যারা আল্লাহর রাস্তায় সঠিক পথ প্রদর্শক)-এর দশটি আলামতের কোন একটিও পাওয়া যায় না ।

  • ইমাম গা্জ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি - 
১, একজন কামেল পীরের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো তাঁকে আল্লাহ্ তা’লার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা (কুরবত) ও রাসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নায়েব (প্রতিনিধি) হিসেবে দ্বীনের (ধর্মের) যাহেরী (প্রকাশ্য) এবং বাতেনী (আধ্যাত্মিক) জ্ঞানে একজন আলেম বা জ্ঞান বিশারদ হতে হবে। মোট কথা, ইসলামী জ্ঞানের সকল শাখায় তাঁর অগাধ জ্ঞান থাকতে হবে। তাঁকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কেও জানতে হবে।
২, দ্বিতীয়তঃ তাঁকে আরেফ বা ভেদের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞানী হতে হবে। তাঁর ইহ্সান অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, যেমন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো, আর যদি না দেখতে পাও তবে এটি জানো যে তিনি তোমাকে দেখছেন” (আল হাদীস)। একজন আরেফ তাঁর অন্তরে সাক্ষ্য দেবেন যে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর যাত মোবারক, গুণাবলী ও কর্মে এক ও অনন্য।
৩, তৃতীয়তঃ কামেল পীর তাঁর পীরের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যেই পরিশুদ্ধ। তাঁকে নফস তথা একগুঁয়ে সত্তার বিভিন্ন স্তর বা পর্যায়, রোগ ও ত্রুটি- বিচ্যুতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল হতে হবে। শয়তান কোন্কো ন্ পদ্ধতিতে কলব্ বা অন্তরে প্রবেশ করতে পারে তাও তাঁকে জানতে হবে। তাঁর মুরীদদের পরিশুদ্ধ করা এবং কামেলিয়াত বা পূর্ণতার পর্যায়ে উন্নীত করার সকল পদ্ধতিও তাঁর জানা থাকা প্রয়োজন।
৪, চতুর্থতঃ তরীকতের পথে অনুসারীদের পথ দেখানোর ক্ষেত্রে একজন কামেল পীরের প্রয়োজন তাঁর পীর কেবলার এজাযত বা অনুমতি।
৫, বস্তুতঃ একজন কামেল পীরের বৈশিষ্ট্য ও গুণ হলো তাঁকে দেখলেই আল্লাহর কথা স্মরণ হবে, তাঁর কথাবার্তা শুনলে ঈমান সজীব ও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

  • হযরত বড়পীর রহমতুল্লাহি আলাইহি পীর বা মুর্শিদের জন্য নিম্নোক্ত পাঁচটি গুণ থাকা অবশ্য কর্তব্য বলে বর্ণনা করেছেন।———
(১) শরীয়তে পরিপূর্ণ জ্ঞানসম্পন্ন আলেম হওয়া।
(২) ই’লমে হাকীকত সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান থাকা।
(৩) সাক্ষাত্ প্রার্থীর সাথে স্নিগ্ধ ও মার্জিত ব্যবহার এবং প্রফুল্ল বদন ও সন্তুষ্টচিত্তে দর্শন দান করা।
(৪) দীন-হীনদের সাথে কথায় ও কাজে নম্রতাপূর্ণ ব্যবহার করা।
(৫) ভক্তবৃন্দের অন্তরের ব্যাধিসমূহ নির্ধারণপূর্বক তা দূরীকরণের উপায় সম্বন্ধে অভিজ্ঞ হওয়া। নিজেকে রিয়া, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, গর্ব-অহমিকা ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখা, কর্তব্যকর্মে শৈথিল্য এবং আরামপ্রিয়তা দূরীভূত করা।


1 comment: