Monday, November 6, 2017

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে- বাতিল ফিরক্বার উত্থাপিত মিথ্যাচারিতার দলীল ভিত্তিক খণ্ডনমূলক জবাব (২)



বাতিল কর্তৃক হক্বের বিরোধিতা ও মিথ্যাচারিতা পূর্বেও ছিল কিনা? থেকে থাকলে কেন এবং কারা করেছে?
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মূলত, হক্ব-নাহক্বের এ দ্বন্দ্ব, অর্থাৎ নাহক্ব কর্তৃক হক্বের বিরোধিতা ও মিথ্যাচারিতা নতুন কোনো বিষয় নয়, বরং হক্ব-নাহক্ব-এর এ দ্বন্দ্ব প্রথম নবী ও রসূল আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময় থেকেই চলে আসছে। দাজ্জালে কাযযাবদের অগ্রণী মালঊন, গোমরাহ ও চির জাহান্নামী ইবলীসই এ বিরোধিতার প্রবর্তক। নাউযুবিল্লাহ!
আমরা দেখতে পাই আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার সম্মানিত নবী ও রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের প্রত্যেকেরই বিরোধিতা করেছে ওই ইবলীস শয়তানের অনুসারী ও গোলাম দাজ্জালে কাযযাবরা। শুধু তাই নয়; তারা প্রায় সত্তর হাজার হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
আর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিরোধিতা ও মিথ্যাচারিতার মাত্রা যে কোন্ পর্যায়ের ছিল তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। বস্তুতঃ সেই বিরোধিতার নযীর ইতিহাসে দ্বিতীয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। উনাকে বলা হয়েছে যাদুকর, জিনে ধরা, পাগল, ধর্মত্যাগী ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
ঠিক একইভাবে বিরোধিতার এ ধারাবাহিকতা বজায় ছিল হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে দুনিয়াতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম মানুষ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতিও। বাতিল, গোমরাহ, দাজ্জালে কাযযাব, খারিজী ও রাফিযীরা উনাদেরকে আখ্যায়িত করেছে ক্ষমতালোভী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ধ্বংস সাধনকারী, মুরতাদ, কাফির ইত্যাদি কুখ্যাতিতে। নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক! নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক! নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক!
শুধু যে মিথ্যা রচনা, অপবাদ আর অশালীন ভাষায় কুৎসা রটনা করেছে তাই নয়। তারা শহীদ করেছে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে, তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে, চতুর্থ খলীফা আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে, আমীরুল মু’মিনীন বেহেস্তের যুবক উনাদের সাইয়্যিদ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কলিজা মুবারক উনার টুকরা মুবারক, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নয়নের মণি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং ইমামুল মুসলিমীন হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
বাতিল, গোমরাহ দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতা এখানেই থেমে থাকেনি। তাদের বিরোধিতার এ ধারাবাহিকতা প্রলম্বিত হয়েছিল তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ ও হক্কানী রব্বানী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রতিও। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বিরোধিতা করেছে জগতখ্যাত আলিমে দ্বীন, সর্বশ্রেষ্ঠ ওলীয়ে কামিল, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার, তারা উনার লিখিত মহামূল্যবান কিতাব পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! তারা বিরোধিতা করেছে গাউছুল আ’যম, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার। নাউযুবিল্লাহ! বিরোধিতা করেছে সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার। নাউযুবিল্লাহ! বিরোধিতা করেছে ক্বাইয়্যূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার। নাউযুবিল্লাহ! বিরোধিতা করেছে আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার। নাউযুবিল্লাহ! বিরোধিতা করেছে শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার। নাউযুবিল্লাহ! বিরোধিতা করেছে হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাউযুবিল্লাহ! এবং বিরোধিতা করেছে গত শতকের মুজাদ্দিদ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার। নাউযুবিল্লাহ! 
আর বিশেষভাবে যিনি বিরোধিতার শিকার, তিনি হলেন আমাদেরই সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ইমামুল মুজতাহিদীন, ইমামুল আইম্মাহ, বাহ্রুল উলুম, হাকিমুল হাদীছ, ইমামে আ’যম ইমাম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনার সম্মানিত শান-মান প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “হযরত ইমাম ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এরূপ অবস্থায় আসতাম, যেরূপ চুড়–ই পাখি বাজ পাখির নিকট অবস্থান করে এবং নিশ্চয়ই ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন আলিম উনাদের মাথার তাজ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা ইবনে খাল্লেক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তারিখে খতীব বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি কি ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখেছিলেন? তদুত্তরে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, এরূপ একজন ব্যক্তি উনাকে দেখেছি যে, যদি তিনি এই স্তম্ভকে স্বর্ণের স্তম্ভরূপে প্রমাণ করতে চাইতেন, তবে যুক্তির মাধ্যমে তার প্রমাণ পেশ করতে পারতেন।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত ছুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ফিক্বহ তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করে, তার জন্য কুফায় গমন করা ও হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ উনাদের ছোহবত মুবারক লাভ করা আবশ্যক।” সুবহানাল্লাহ! (চলবে ইনশাআল্লাহ)

No comments:

Post a Comment