Saturday, November 26, 2016

রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা উনার সম্পর্কে মিথ্যাচারিতা


ভ্রান্ত রেসালা “….. ভ্রান্ত মতবাদ”-এর লেখক ‘হেমায়েত উদ্দীন ওরফে কাযযাবুদ্দীন’ লিখেছে “রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা উনি নাকি “তাঁতী ও সূতা ব্যবসায়ী ছিলেন।” নাঊযুবিল্লাহ!
মিথ্যাচারিতার খণ্ডমূলক জবাব
কাযযাবুদ্দীনের পক্ষেই এরূপ ডাহা মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা সম্ভব। রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা তিনি অতি উঁচু স্তরের একজন খালিছ ওলীআল্লাহ। তিনি ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত প্রজ্ঞাবান মানুষ এবং সূক্ষ্মদর্শী আলিমে দ্বীন। তিনি ছিলেন সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এবং হক্ব প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠার এক অনন্য পুরুষ। উনার প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্বের আলোয় মানুষ মিথ্যাকে ঘৃণা করতে শিখেছে। মহান আল্লাহ পাক উনার মত এবং উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে দায়িম-ক্বায়িম হতে মানুষকে তিনি প্রেরণা যুগিয়েছেন। তিনি ছিলেন কুতুবুয যামান, আরিফ বিল্লাহ, লিসানুল হক্ব, আওলাদে রসূল। আজীবন তিনি সুন্নতের উপর পরিপূর্ণরূপে অধিষ্ঠিত ছিলেন। জীবন মুবারকের সময়গুলো তিনি অবিরাম ব্যয় করেছেন সত্য প্রতিষ্ঠার জিহাদে। এ জিহাদ তিনি করেছেন কথায়, কাজে, আমলে ও আচরণে। সূক্ষ্মদর্শী মানুষ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে উনার কামালতপূর্ণ উদারতা, অন্তরের বিশালতা, চরিত্রের মাধুর্যতা, অন্তর দৃষ্টির গভীরতা, হৃদয়ের নির্মলতা, বদন্যতা, সৌজন্য ও দানশীলতা উপলব্ধির উপায় ছিলোনা। হিদায়েতপূর্ণ মানুষ ও সমাজ নির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা এই ক্ষণজন্মা ওলীআল্লাহ আচরণ ও বিচরণে ছিলেন দৃঢ়চেতা ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এক কামিয়াব মানুষ। দানশীল এই ওলীআল্লাহ তিনি ছিলেন ফুরফুরা শরীফ-এর হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট খলীফা। অবশ্য তিনি আরো কয়েকজন প্রখ্যাত মুর্শিদ উনাদের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। উনার কামালত ও অধিষ্ঠিত মাক্বাম বিশালতায় পরিপূর্ণ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পারিবারিক সূত্রে উনাকে পরিমিত স্বচ্ছলতা দান করেছিলেন। আর্থিক স্বচ্ছলতার কারণে অত্যাবশ্যক না হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্বের মানুষ হিসাবে উচ্চ শিক্ষালাভের পর তিনি চাকুরীতে যোগ দেন। উনার প্রথম কর্মস্থল ছিল দার্জিলিং। তারপর আসাম এবং বিভিন্ন স্থানে সততা, সুনাম ও সাফল্যের সাথে উনার কর্মজীবন অতিবাহিত হতে থাকে। মেয়াদপূর্ণ হবার পূর্বেই এক পর্যায়ে তিনি চাকুরী ছেড়ে দেন। উনার পূর্বপুরুষ ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনিও উনাদের অনুসারী ছিলেন। তবে তিনি ওভার ক্লাশ ওয়ান গভর্ণমেন্ট কন্ট্রাক্টর হওয়ার কারণে অল্প কিছু দিন করেছিলেন। কাযযাবুদ্দীন তার হীন ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থে অসৎ উদ্দেশ্যে বলেছে, “তিনি তাঁতী ও সূতা ব্যবসায়ী ছিলেন।” সামান্য ক্ষুদ-কুড়োর লোভে ইহুদী-নাছারাদের কাঙ্খিত স্বার্থ পূরণের নেপথ্য যোগানদার মাদরাসায় কেবলমাত্র সিলেবাসের স্বল্প বিদ্যা রপ্তকারী এই মুনাফিক কাযযাব মিথ্যা বলায় তার খান্দান ও কুচক্রী গোষ্ঠীর ক্রণিক ব্যারামে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও তার অন্ধকারাচ্ছন্ন মন ও মগজে সত্যের আলো পৌঁছার সম্ভাবনা তিরোহিত, তবু প্রতিষ্ঠিত সত্য বিষয়গুলো তাকে জানানো দরকার। অবশ্য আল বাইয়্যিনাতের সুবাদে এসব তার অজানা থাকার কথা নয়।
কুতুবুয যামান, আরিফ বিল্লাহ, লিসানুল হক্ব, ফখরুল আউলিয়া, মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম তিনি ১২৭৫ শামসী (১৯০৮ ঈসায়ী) সালে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জিলার আড়াইহাজার থানাধীন প্রভাকরদী শরীফ গ্রামের সাইয়্যিদ পরিবারের পূণ্য ভূমিতে জন্ম গ্রহণ করেন। উনার পিতা-মাতা উভয়েই ছিলেন খাছ ওলী। সিলসিলা পরম্পরায় পিতা-মাতার দিক থেকে তিনি ছিলেন যথাক্রমে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের সাথে সম্পৃক্ত। রক্ত মুবারকের ধারাবাহিকতায় সঙ্গত কারণেই তিনি আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাইশী এবং এ কারণেই তিনি আওলাদে রসূল, অর্থাৎ সাইয়্যিদ।
পথভ্রষ্ট ও গোমরাহীতে নিমজ্জিত মানুষকে হিদায়েত দানের লক্ষ্যে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাঁজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী সানজারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিভিন্ন দেশ হিজরত ও ছফর শেষে মহান আল্লাহ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সদয় নির্দেশে ছয়শত হিজরীর কাছাকাছি সময়ে আজমীর শরীফ আসেন। উনারই অন্তরঙ্গ সঙ্গী হিসাবে ঐ যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবূ বকর মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও আজমীর শরীফ-এ তাশরীফ আনেন। ইসলাম প্রচারের কাজে নিমগ্ন হয়ে তিনি আজমীর শরীফ-এ থেকে যান এবং সেখানেই ইন্তিকাল করেন। উনারই অধস্থন মুবারক সন্তান হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এগারশত হিজরীর শেষার্ধে হিদায়েতের আলো নিয়ে চট্টগ্রাম আগমন করেন। উনারা ছিলেন দু’ভাই। চট্টগ্রামে সাময়িক অবস্থানের পর উভয়েই নারায়ণগঞ্জ জিলার সোনারগাঁও-এ চলে আসেন। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেখানেই হিদায়েতের কাজে ব্যাপৃত থাকেন এবং ইন্তিকাল করেন। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সোনারগাঁও-এ অল্প কিছু দিন অবস্থানের পর একই জিলার আড়াইহাজার থানাধীন যে জনপদে এসে হিদায়েতের কেন্দ্রভূমি গড়ে তুলেন, তারই বর্তমান নাম “প্রভাকরদী।”
হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলা উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পুত্র হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মালা উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার পুত্র হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ এলাহী বখশ রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার পুত্র হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ ওয়ালী বখশ রহমতুল্লাহ আলাইহি এবং উনার পুত্র আলোচ্য হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। কাযযাবুদ্দীন যদি এর সত্যতা পরীক্ষা ও প্রমাণ করতে চায়, তবে সে যেন প্রভাকরদী “সাইয়্যিদ বাড়ী” গিয়ে সংশ্লিষ্ট মাজার শরীফ-এর সামনে উৎকীর্ণ আলোচ্য ওলীআল্লাহগণ উনাদের “নাম ফলক” দেখে আসে।
হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বুযূর্গ পূর্বপুরুষগণ উনাদের বেলায়েত ও কামালতের প্রভাব এতো গভীর ও ব্যাপক যে, আজ অবধি তা পূর্ণমাত্রায় বহমান। বংশ পরম্পরায় এমন সাইয়্যিদ পরিবারের সন্তানগণ যে মাদারজাদ ওলী হবেন, মিথ্যা দূরীভূত করে সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন এবং কাযযাবুদ্দীনদের ইসলাম পরিপন্থী কায়েমী স্বার্থের মুখোশ উন্মোচন করবেন, এটাই তো মহান আল্লাহ পাক উনার অমোঘ বিধান।
তাঁত ও সূতার ব্যবসা হারাম নয়। বৈধ প্রক্রিয়ায় করলে একান্তভাবেই হালাল। হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পূর্বপুরুষগণ এই ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু কথা হলো, বংশগতভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম,  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত মহান ওলীআল্লাহ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে (যিনি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বুযূর্গ পিতা এবং আওলাদে রসূল) হীন ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থে ডাহা মিথ্যায় “তাঁতী ও সূতা ব্যবসায়ী” অপবাদ দিয়ে কাযযাবুদ্দীন জাহান্নামে যাবার পোক্ত দলীল খরিদ করেছে। মাদরাসায় নেসাবী কিছু পড়া লেখা করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে আওলাদে রসূল উনাকে মিথ্যাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রাণপণ প্রয়াসের কারণে জাহান্নামে বসবাসের শাস্তি তার জানা নেই। পরিত্রাণের জন্য জরুরী মনে করলে সে এখনই খালিছ তওবার পথ বেছে নিতে  পারে।

No comments:

Post a Comment