Saturday, November 26, 2016

হাবীবুল্লাহ লক্বব ব্যবহার করা সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা


আশাদ্দুদ দরজার জাহিল, চরম বেয়াদব কাযযাবুদ্দীন তার ভ্রান্ত রেসালা “ভ্রান্ত মতবাদে” লিখেছে, “তার খেতাবের মধ্যে জঘন্য বেয়াদবী সূচক খেতাবও রয়েছে যেমন, তিনি “হাবীবুল্লাহ” খেতাব ব্যবহার করেছেন। অথচ হাবীবুল্লাহ বলতে একমাত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই সকলে বুঝে থাকেন। এখন নিজের  জন্য এই খেতাব ব্যবহারকে হয় জঘন্য বেয়াদবী বলতে হবে নতুবা বলতে হবে তিনি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমান মাক্বাম বা মর্যাদার দাবি করছেন, যা হবে কুফরীর পর্যায়ভূক্ত ……।”
মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাবুদ্দীন তার উপরোক্ত জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন বক্তব্য দ্বারা প্রথমতঃ যে বিষয়টি প্রমাণ করেছে তাহলো, তার নিজের ফতওয়া মতেই সে নিজে ও তার সকল দেওবন্দী মাওলানারা শুধু রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমান মাক্বাম বা মর্যাদার দাবিই করেনি বরং আল্লাহ পাক উনার সমান মাক্বাম বা মর্যাদার দাবি করেছে অর্থাৎ ‘আল্লাহ’ দাবি করেছে। এখন দেওবন্দীরা প্রশ্ন করতে পারে যে, এটা কিভাবে?

এর জবাব হলো, মূলতঃ “মাওলানা” বলতে প্রথমতঃ আল্লাহ পাক উনাকে আর দ্বিতীয়তঃ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই সকলে বুঝে থাকে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেকেই কালামে পাকে “মাওলানা” বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
انت مولنا فانصرنا على القوم الكافرين
অর্থাৎ “(হে আল্লাহ পাক!) আপনি ‘মাওলানা’ সুতরাং কাফিরদের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ – ২৮৬)
আর দরূদ শরীফ-এ তো সকলেই পাঠ করে থাকে যে,
اللهم صل على سيدنا مولنا حبيبنا صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ “আয় আল্লাহ পাক আমাদের সাইয়্যিদ ‘মাওলানা’ হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত-সালাম বর্ষণ করুন।”
হেমায়েত উদ্দীন উরফে কাযযাবুদ্দীন ও দেওবন্দী মৌলবীরা নিজেদের ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ খেতাব ব্যবহার করে শুধু রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমান মাক্বাম বা মর্যাদা নয় বরং আল্লাহ পাক উনার সমান মাক্বাম বা মর্যাদার দাবি করেছে। যার ফলে কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মতেই কাযযাবুদ্দীন নিজে ও তার দেওবন্দী মৌলবীরা চরম বেয়াদব ও কাট্টা কাফির বলে প্রমাণিত হয়।
দ্বিতীয়তঃ কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মতে, “হাবীবুল্লাহ” নাম ধারণকারী সকলেই বেয়াদব ও কাফির বলে সাব্যস্ত হয়। কারণ “হাবীবুল্লাহ” বলতে কাযযাবুদ্দীনের মতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয। তাই কাযযাবুদ্দীনের মতে “হাবীবুল্লাহ” নাম রাখা কুফরী। কারণ এতে রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাবি করা হয়। গোমরাহ আর মূর্খ কাকে বলে?
তৃতীয়তঃ কাযযাবুদ্দীনের মতে হযরত উছমান যিন্ নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি কাফির। নাঊযুবিল্লাহ!। কারণ সকলেই জানে যে, ‘গণী’ হলেন আল্লাহ পাক। কেননা কালামে পাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই নিজেকে ‘গণী’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
والله الغنى وانتم الفقراء
অর্থাৎ “আল্লাহ পাক ‘গণী’ আর তোমরা ফক্বীর।” (সূরা মুহম্মদ: আয়াত শরীফ – ৩৮)
অথচ দুনিয়ার সকলেই জানে যে, হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার অসংখ্য খিতাবের মধ্য হতে একখানা খিতাব বা লক্বব মুবারক হচ্ছে ‘গণী’। কাযযাবুদ্দীনের মতে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার সমান মাক্বাম মর্যাদা দাবি করার কারণে বেয়াদব ও কাফির। নাঊযুবিল্লাহ!
চতুর্থতঃ কাযযাবুদ্দীনের মতে, পূর্ববর্তী দু’জন মশহুর ‘ওলীআল্লাহ’ উনারা কাফির। উনাদের একজন হলেন, হযরত যুননুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর অপরজন হচ্ছেন, সুলতানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। কারণ উনাদের উভয়েরই লক্বব বা খিতাব মুবারক ছিল ‘হাবীবুল্লাহ’।
পঞ্চমতঃ কাযযাবুদ্দীনের ফতওয়া মতে, ‘হাবীবুল্লাহ’ খিতাব মুবারক ব্যবহার করলে যদি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমান মাক্বাম দাবি করা হয় তবে বলতে হবে যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই উম্মতকে এ মাক্বামে অধিষ্ঠিত করেছেন। কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
السخى حبيب الله ولوكان فاسقا
অর্থাৎ “দানশীল ব্যক্তি ‘হাবীবুল্লাহ’ যদিও সে ফাসিক হয়।” (লুগাতুল হাদীছ)
কি কাযযাবুদ্দীন? দানশীল ব্যক্তিকে ‘হাবীবুল্লাহ’ খিতাব দিয়ে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি দানশীলের মাক্বাম ও মর্যাদা নিজের সমান করে দিয়েছেন? নাঊযুবিল্লাহ!
তাছাড়া যারা সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করেন, উনারা সকলেই ‘হাবীবুল্লাহ’। কারণ ‘হাবীবুল্লাহ’ উনাকেই বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে মুহব্বত করেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকেই মুহব্বত করেন যিনি সুন্নতের পূর্ণ ইত্তেবা করেন। এটা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
قل ان كنتم تـحبون الله فاتبعونـى يـحببكم الله
অর্থাৎ “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করতে চাও তবে আমার ইত্তেবা কর। (যদি আমাকে ইত্তেবা কর) তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন।” (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ – ৩১)
অতএব, আমভাবে সমস্ত আউলিয়ায়ে কিরামগণই ‘হাবীবুল্লাহ’। তবে খাছভাবে প্রকাশ পেয়েছে হযরত যুন্নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সুলত্বনুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ক্ষেত্রে। উনাদের কপাল মুবারকে কুদরতীভাবে লিখা উঠেছিল,
هذا حبيب الله مات فى حب الله
অর্থাৎ “ইনি ‘হাবীবুল্লাহ’ ইনি আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে ইন্তেকাল করেছেন।” (তাযকেরাতুল আউলিয়া, মুঈনুল হিন্দ)
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব মুবারক ব্যবহার করা বেয়াদবী বা কুফরী নয়। কারণ স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দানশীলকে “হাবীবুল্লাহ” বলে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করেছেন। পৃথিবীর দু’জন শ্রেষ্ঠ, সর্বজনমান্য, অনুসরণীয় ও মক্ববুল ওলী আল্লাহ উনাদের লক্বব মুবারক ছিল ‘হাবীবুল্লাহ’। তবে কি আল্লাহ পাক উনার হবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা জানতেন না যে উম্মতের জন্যে ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব মুবারক ব্যবহার করা বেয়াদবী ও কুফরী বা এতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমান মাক্বাম বা মর্যাদা দাবি করা হয়? নাঊযুবিল্লাহ!
তাছাড়া ‘হাবীবুল্লাহ’ বলতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝালে যদি তা বেয়াদবী ও কুফরী হয় তবে তো মাওলানা, গণী, হাকীম লক্বব ব্যবহারকারীও বেয়াদব ও কাফির। কারণ মাওলানা, গণী ও হাকীম বলতে মানুষ আল্লাহ পাক উনাকেই বুঝে থাকে। সুতরাং কাযযাবদ্দীনের বক্তব্য মনগড়া, বানোয়াট, কল্পনা প্রসূত, বিদ্বেষমূলক, স্ববিরোধী, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক প্রমাণিত হলো।”

No comments:

Post a Comment