Saturday, November 26, 2016

বাবরী মসজিদ, ফতওয়া নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা


মহা কাযযাব তার ভ্রান্ত রেসালা ‘আদ দ্বীনে’ রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার প্রতি আরেকটি তোহমত দিয়েছে যে, … বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা, ইহুদী, মহিলা কর্তৃক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ব্যঙ্গ পোস্টারিং করা, ইরাক ও আফগান যবর দখল করা ও গণহত্যা চালানো এবং আদালত কর্তৃক সবধরনের ফতওয়া নিষিদ্ধ করণের কোন প্রতিবাদ নাকি রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষ থেকে করা হয় নাই।” নাঊযুবিল্লাহ
মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব
মহা কাযযাব মুসাইলামের উপরোক্ত তোহমতের জবাবে বলতে হয় যে, ক্বওমী বা খারিজী বলে একটি ধারা এদেশে বিরাজমান। হালে এ ধারাটির তবিয়ত দেখে প্রতিভাত হয় যে, ঐ প্রবাদ এদের জন্য যথাযথভাবে প্রযোজ্য-‘আলিমরা মাটির নিচে গেছে আর মুর্খরা সব জায়গা দখল করে নিয়েছে।’

উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ-এর বিরোধীতাকারীরাও যেমন লুকিয়ে লুকিয়ে কুরআন শরীফ শুনতো তেমনি আল বাইয়্যিনাত বিরোধী খারিজী ও ওহাবীরাও ঠিকই চুপে চুপে আল বাইয়্যিনাত পড়ে থাকে। ছাত্ররা তো বটেই উস্তাদরাও খুবই গুরুত্ব সহকারে পড়ে থাকে। তাতে উস্তাদরা আগেই বুঝে থাকে যে আল বাইয়্যিনাত-এর দলীল তথা ইলম এর কাছে তাদের ইলম সমুদ্রের তুলনায় সূচাগ্রের নগন্য ফোটাও নয়। অতএব, সেক্ষেত্রে যা হচ্ছে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ছাত্ররা আল বাইয়্যিনাত-এর দলীলের দিকে ঝুঁকছে, এমনকি তৎপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ খারিজী আক্বীদার বিপক্ষে প্রশ্নও তুলছে।
বিশেষ করে বাইয়্যিনাত-এর দলীল সমৃদ্ধতা খারিজী উস্তাদদের গুটি কয়েক দলীলের উদ্ধৃতিকে চরমভাবে উপহাস করছে। এমতাবস্থায় খারিজী উস্তাদরা নিজেদেরকে একান্ত অসহায় মনে করছে। এর ফলে তারা স্বীয় মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এখন দুষ্ট বুদ্ধির আশ্রয় নিয়েছে।
এ লক্ষ্যে এখন প্রায় সব খারিজী উস্তাদরা একজোট হয়েছে যে, তারা তাদের ছাত্রদের মাথায়, মনে-মগজে বদ্ধমূলভাবে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার নাহক্ব বিরোধিতা ঢুকিয়ে দিবে। আর এজন্য নীতিহীনতা, ভ্রষ্টতা, শঠতা, কুটকৌশল, ছলনার ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হলেও নির্দ্বিধায় তারা তাই করবে।
মহা কাযযাব সুলাইমানের উপরোক্ত বক্তব্যে এ বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। যেমন সে বলেছে যে, “রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে এত এত ফতওয়া দিচ্ছেন, কিন্তু যখন সরকার ফতওয়া বন্ধ করে দেবার উপক্রম করছিল তখন তাদের কি ভূমিকা ছিল? তারা তো তখন এর বিরুদ্ধে কিছু বলে নাই।”
মূলতঃ এসব কথা বলে তারা তাদের অবুঝ ছাত্রদের রাজারবাগ শরীফ-এর বিরোধী করে নিজেদের দিকে ধরে রাখার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র শুধু মিথ্যার ভিত্তিতেই পরিচালিত। আর মিথ্যা তো কখনো টেকসই হয় না।
উল্লেখ্য, ফতওয়া বন্ধের বিরুদ্ধে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার বক্তব্যই ছিল সবচেয়ে তীব্র ও কার্যকর, প্রজ্ঞাপূর্ণ ও গঠনমূলক। এমনকি উনার পত্রিকা আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর সম্পাদকীয়তেও এ বিষয়ে বলা হয়েছিল। আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ৯১তম সংখ্যার সম্পাদকীয় নিবন্ধে লেখা হয়েছিল- “তবে গণতান্ত্রিক সরকারের একটি দাবি হচ্ছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা। সুতরাং সম্পূর্ণ ও অপ্রাসঙ্গিক ফতওয়া প্রদান ও প্রয়োগ নিরুৎসাহিত করণের নামে যেন ফতওয়ার দ্বারকেই রুদ্ধ না করা হয়। অন্যথায় তা কেবল ধর্মীয় স্বাধীনতাতেই হস্তক্ষেপ করা হবেনা, বরং তা হবে স্স্পুষ্ট ধর্মীয় সংঘাত তৈরীর তাজা রসদ।
বলাবাহুল্য, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় আইনের উৎস যেমন আইনসভা, সুপ্রীম কোর্ট তার অভিভাবক মাত্র, তেমনি প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে কোর্ট ইসলামী আইন তথা ফতওয়ার পর্যালোচনা করছে মাত্র। কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট যেমন আইন সভাকে গুরুত্বহীন বলতে পারেনা, তেমনি ইসলামী আইনের উৎস কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ধারা বা ফতওয়া তথা যোগ্যতাধারী সংশ্লিষ্ট মহল বা মুফতীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না কোনভাবেই। পাশাপাশি ফতওয়া দানের অধিকারের ক্ষেত্রে অনাবশ্যক সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি এবং এই অধিকারকে সংকীর্ণগণ্ডীতে আবদ্ধ করার প্রবণতাও প্রভূত অসন্তোষ ও অরাজকতার অবকাশ ঘটাবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
ফতওয়া নিয়ে উদ্ভূত জটিলতার পেছনে প্রজ্ঞাপূর্ণ শরয়ী ইলমের ঘাটতিই কেবল নয়, পাশাপাশি কু-প্রবৃত্তি সংশোধনের অভাবের ক্ষেত্রে ইলমে তাছাউফ শূণ্যতাই মূল কারণ। ইতিহাস বলে,- “সব মুহাক্কিক মুফতীগণই ইলমে তাছাউফে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।” (আল বাইয়্যিনাত-৯১তম সংখ্যা)
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, আল বাইয়্যিনাত শরীফেই ফতওয়া রদ করা সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে। শুধু “ফতওয়া নিষিদ্ধ করণ” বিষয়েই নয়। বরং বাবরী মসজিদ, আফগান ও ইরাক সমস্যাসহ ইহুদী খ্রিস্টান তথা বিধর্মীদের সকল ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারিতার জবাব বা প্রতিবাদই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে পত্রস্থ হয়েছে। যা কাযযাবুদ্দীন গং দেখেও না দেখার ভান করে আছে শুধুমাত্র সাধারণ লোকদেরকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে।
অতএব, বলতে হয় যে, অধুনা খারিজী ওহাবী মাদরাসার উস্তাদরা যে মিথ্যার প্রক্রিয়ায় তাদের ছাত্রদের রাজারবাগ শরীফ-এর বিরোধী করে রাখতে চাইছে তাতে করে সত্যানুসন্ধানীদের তারা ধরে রাখতে পারবে না। চাপে পড়ে বা হুজুগে মেতে খারিজী ছাত্ররা সাময়িকভাবে রাজারবাগ শরীফ-এর বিরোধিতা করলেও তারা অন্তরে অন্তরে তাদের উস্তাদদের ঠিকই মিথ্যাবাদী ও ধোঁকাবাজ মনে করবে এবং এই কারণেই দেখা যায় যে এসব খারিজী ওহাবী মাদরাসার ছাত্রদের আদব-কায়দা খুবই কম। প্রায়ই উস্তাদ-ছাত্র লাঠা-লাঠি, মারামারি করে।
স্মর্তব্য, হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কাফিররা যখন মুসলমানদের সাথে সামনা সামনি উঠা-বসা করতে পারল তখন তাদের এতদিনের ভ্রান্ত বিশ্বাস সহজেই দুরীভূত হল। তেমনি আল বাইয়্যিনাতের দলীলের প্রবাহে খারিজী উস্তাদদের মিথ্যা প্রচারণার দেয়াল ভেঙ্গে যখন সত্যানুসন্ধানীরা বেরিয়ে আসবে তখন ধোঁকা, শঠতা, ছলনা, প্রতারণা, অপবাদ আর অপপ্রচার ও মিথ্যাচারিতায় ভরপুর খারিজীদের বার্ষিকী, সাময়িকী, রেসালা ও কিতাব তাদের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাড়াবে। কুমন্ত্রক কাযযাব উদ্দীন ও সুলায়মান গং তখন তাদের মিথ্যার বেসাতীতে তৈরী ছাত্রদের দ্বারাই ধরাশয়ী ও লাঞ্ছিত হবে। (ইনশাআল্লাহ)

No comments:

Post a Comment