Tuesday, November 24, 2015

আল বাইয়্যিনাত ও আল ইহসান পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব আসলে কে?


মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসান পত্রিকা দুটির নাম অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু যিনি এই পত্রিকা দুটো চালান তার সম্পর্কে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আসলে কে? কি উনার পরিচয়? কোথা থেকেই বা আসলেন? এ সম্পর্কে ব্লগে অনেকে অনেক কথাও লিখে থাকে। কারোটা হয়ত সত্যি, কারোটা হয়ত আবার পুরোপুরি মিথ্যা। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তার থেকে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। ---------------------------------------------- রাজারবাগ দরবার শরীফ শরীফটির অবস্থান ঢাকার মালিবাগ মোড় সংলগ্ন, ৫ আউর্টার সার্কুলার রোড। রাজারবাগ দরবার শরীফ মূলত ফুরফুরাহ সিলিসিলা থেকে আগত একটি সিলসিয়া । রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেবের পীর সাহেব হচ্ছেন যাত্রাবাড়ী দরবার শরীফের পীর সাহেব হযরত আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজিহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার পীর সাহেব হচ্ছেন দুই জন হযরত নাজমুস সাদাত সিদ্দিকী ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আব্দুল হাই সিদ্দিকী ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা দুইজনই ছিলেন ফুরফুরাহ দরবার শরীফের মূল পীর সাহেব হযরত আবু বরক সিদ্দিক ফুরফুরারি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দুইজন সন্তান ও খলিফা।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (১০)

# রাজারবাগী পীর সাহেব আলাইহিস সালাম উনার সাথে অন্যান্য মাওলানা ও পীর সাহেবদের পার্থক্য কোথায়?
  • – মানুষের সাথে মানুষের মতের পার্থক্য সর্বকালেই রয়েছে। আর মতপার্থক্যই অনেকক্ষেত্রে বিরোধ সৃষ্টি করে থাকে। তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে তিনিই সঠিক হবেন যিনি কুরআন শরীফ, হাদিছ শরীফ থেকে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরেন। আমি বলব, রাজারবাগী পীর সাহেব হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের অনুসরণ করে থাকেন। আর এটাই হচ্ছে অন্যান্য সকল দল-উপদল থেকে উনার একমাত্র পার্থক্য।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৯)

 ইলমে তাছাউফ যদি ফরয মেনে নেই, তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়- পীর সাহেবের কাছে কেন বাইয়াত হতে হবে? ইলমে তাছাউফ অর্জনের সাথে পীর সাহেবের কি সম্পর্ক?
– ইলমে তাছাউফ হল ক্বলবী ইলম, যা ফিক্বাহ বা তাছাউফের কিতাবাদি পড়ে কখনো হাছিল হয় না। ইলমে তাছাউফ হাছিল করতে হলে ওলী-আল্লাহ, পীর-মাশায়িখের হাতে বাইয়াত হয়ে উনার নির্দেশ মুতাবিক যিকির-ফিকির ও আমল করতে হয়। আর হাদিছ শরীফ উনার ভাষ্য অনুযায়ী ইলমে তাছাউফ ই হচ্ছে উপকারী ইলম। কারণ এই ইলম মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফত, মুহব্বত, নৈকট্য, হাকিকত শিক্ষা দেয় যা কিনা বই পড়ে সম্ভব নয়। আর এ পথে পথ-নির্দেশনা ব্যতীত কেউ পথের সন্ধানই পায় না, পথ পেরিয়ে গন্তব্যে পৌছানো তো অসম্ভব।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৮)

 অনেকে বলে, ইলমে তাছাউফ হাছিল করা নাকি ফরয? এখন ফরয বলে দিলেই তো আর ফরয হয় না। ফরয হওয়ার প্রমাণ ও যুক্তি কি?
– ইলমে তাছাউফ হল আত্মশুদ্ধির পথ। যা কিছু পূর্বে বলা হয়েছে, শুধু এগুলোই নয়, আরও অনেক বিষয় তাছাউফের সাথে জড়িত রয়েছে।
আর, ইলমে তাছাউফ চর্চার মাধ্যমে কমপক্ষে সুলতানুল আযকার পর্যন্ত জারী করা ফরযে আইন। এখন, প্রশ্ন হতে পারে, ‘সুলতানুল আযকার’ শব্দ কুরআন শরীফে খুঁজে পেলাম না, সেটা আবার ফরয হল কি করে। জি, সে বিষয়েই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথমেই বলে নেওয়া জরুরী, ইসলামে মনগড়া কথা চলবে না। কথা বললে প্রমাণ থাকতে হবে। প্রমাণ দিলে অস্বীকার করা যাবে না। তবে যুক্তি থাকলে পেশ করতে পারে। কিন্তু অনেক সময়, গ্রহণযোগ্য প্রমাণ দেওয়া হলে, সেই প্রমাণটিকেই অনেকে অস্বীকার করে থাকে মনগড়া সিদ্ধান্তে। মূলত, এরা অবিশ্বাসী, অস্বীকারকারীদের মধ্যেই গণ্য হতে চায়। যাই হোক, আলোচনায় ফিরে আসি। যেসব কারণে তাছাউফ চর্চা করা ফরযঃ

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৭)

 এখন প্রশ্ন হল, পীর সাহেবের দরবার শরীফে কি উদ্দেশ্যে যেতে হয়? আর সেগুলো কি খুব জরুরী?

  • – জি হক্কানী ওলী-আল্লাহ, পীর সাহেবের দরবার শরীফে বিনা উদ্দেশ্যে যাওয়া হয় না। অবশ্যই এমন কিছু উদ্দেশ্য পূরণে যাওয়া হয়, যা পীর সাহেবের দরবার শরীফ ব্যতীত অন্য কোথাও হাছিল করা দুষ্কর ও অসম্ভব।

প্রথমতঃ আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি, মুহব্বত, মা’রিফত হাছিলের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ্‌ পাক পবিত্র কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করার জন্য উসীলা তালাশ (গ্রহণ) করো।”(সূরা মায়িদা/৩৫)। এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় “তাফ্‌সীরে রুহুল বয়ানে” উল্লেখ আছে যে, “উসীলা ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করা যায়না। আর উক্ত উসীলা হচ্ছেন, হাক্বীক্বত ও তরীক্বতপন্থী আলিম বা মাশায়েখগণ অর্থাৎ কামিল মুর্শিদগণ।

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৬)


 আচ্ছা, বান্দা ইবাদত করুক এটাই তো আল্লাহ পাক চান। এখন, কুরআন শরীফেই তো সব বলেই দেওয়াই হয়েছে। তাহলে আর পীর সাহেবের কি দরকার? বাজার থেকে কুরআন শরীফ কিনে নিলেই কি যথেষ্ট নয়? 
  • - জি তা তো বটেই, কুরআন শরীফ এ আল্লাহ পাক বান্দাকে সকল পথ দেখিয়েছেন কিভাবে ইবাদত বন্দেগী করতে হবে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করার জন্য।

 যেমন, আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং ছাদিক্বীন অর্থাৎ সত্যবাদী উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও।” (সূরা তওবা : আয়াত শরীফ ১১৯)। অর্থাৎ শুধু কুরআন শরীফ পড়লেই হবে না, আল্লাহ পাকের ইবাদত করতে হলে ছাদিক্বীনদের সঙ্গী হতে হবে। 
এখন, একটু চিন্তা করে দেখুন তো- আমি বা আপনি কি সত্যিকার অর্থেই ছাদিক্বীন হতে পেরেছি। তাহলে, এই ছাদিক্বীন কারা? সহজ জবাব হল- ওলী-আল্লাহগণ। 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৫)


 রাজারবাগ দরবার শরীফে নাকি মহিলারা যাতায়াত করে। তাহলে রাজারবাগের পীর সাহেব আলাইহিস সালাম কি মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেন? 

  • - প্রথমেই বলছি, ইসলামটা হচ্ছে পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য নির্ধারিত। এখন ফরজ ইলম পুরুষকেও হাছিল করতে হবে, মহিলাদেরও হাছিল করতে হবে। তাহলে মহিলারা কার কাছে হাছিল করবে? মহিলারা তো পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। কিন্তু মহিলারা যাতে ইলম হাছিল করতে পারে, সেজন্য রাজারবাগের পীর সাহেব উনার সম্মানিতা স্ত্রী আলাইহাস সালাম তিনি মহিলাদের সরাসরিভাবে নিয়মিত তালিম দিয়ে থাকেন। আর সেজন্যই পর্দানশীন মহিলারা তালিম নিতে দরবার শরীফ যেয়ে থাকেন। জেনে খুশি হবেন যে, রাজারবাগী পীর সাহেব আলাইহিস সালাম কোন বেগানা মহিলাকে সাক্ষাৎ দেন না। তবে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্দার অন্তরালে মহিলারা রাজারবাগের পীর সাহেবের ওয়াজ-নছীহত মুবারক শুনতে পারেন। আপনারা আপনাদের অধীনস্থ স্ত্রী, মেয়ে বা মাকে অবশ্যই তালিমে নিয়ে আসবেন। 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৪)


 অনেক কিছুই জানলাম, তাছাউফ সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই জানব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এবার রাজারবাগ শরীফের প্রসঙ্গে আসি। রাজারবাগ শরীফ কোথায় অবস্থিত? 
  • মালিবাগ মোড়ে নেমে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে ২-৩ মিনিট হাটলেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন ৩ নং গেট চোখে পড়বে। ঠিক তার বিপরীত পাশেই রাজারবাগ শরীফ অবস্থিত (সুবহানাল্লাহ)। ঠিকানা হচ্ছে- ৫, আউটার সারকুলার রোড, রাজারবাগ, ঢাকা -১২১৭, বাংলাদেশ। অন্য কোন দরবারের মত ‘লোক দেখানো ফুটানি’ নেই এখানে। আশা করি, (আপাতত) ৫ তলা সম্পন্ন বিল্ডিং মুবারকের সাদামাটা এ দরবার শরীফ দেখে কোন আদরের দুলাল পিছিয়ে যাবেন না। খুব সম্ভবত সেখানে লেখা দেখতে পাবেন 'মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা'। 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৩)


 পীর শব্দের অর্থ কি? 

  • পীর শব্দটি ফার্সি। শব্দগতভাবে এর অর্থ হল ‘জ্ঞানবৃদ্ধ’। পারিভাষিক অর্থে যিনি আল্লাহ পাককে পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে বা আল্লাহ পাক এর সাথে রূহানী সংযোগ করে দেয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, উনাকেই পীর সাহেব বলা হয়। কুরআন শরীফ ও হাদিছ শরীফে যাদের আউলিয়া, মুর্শিদ ও শায়খ বলা হয়েছে, ফার্সিতে তাদের পীর সাহেব বলা হয়। 

 ফার্সি ভাষার শব্দ 'পীর' কেন বাংলায় ব্যবহার হচ্ছে?

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (২)


 আচ্ছা ভারতীয় উপমহাদেশে পীর সাহেবেরা কেন শক্ত স্থান দখল করে ছিল?

  • অনেকে ভারতীয় উপমহাদেশে পীর-মুরিদি বেশি দেখতে পান। কিন্তু এর কারণ আছে। ইসলাম মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে ইলিয়াস সাহেবের তাবলীগী করেও আসে নি, আবার মওদূদী-নিজামী-সাঈদীর রগ কাটা বাহিনীর জালাও পোড়াও করেও আসে নি। ইসলাম এদিকে এসেছে ওলী-আল্লাহদের হাত ধরে, পীর-মাশায়িখদের, সূফী-দরবেশদের হাত ধরে এসেছে। তাই আল্লাহর ওলীদের মাজার শরীফ বিভিন্ন স্থানেই চোখে পড়ে যায়, সুবহানাল্লাহ। ইসলাম যাদের মাধ্যমে এসেছে, যাদের মাধ্যমে কাফিরেরা কুফরী ছেড়ে দিয়ে মুসলমান হল, তাদের দেখানো পথেই তো মানুষ সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ খুজবে, সেটাই কি স্বাভাবিক নয়! 

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (১)


রাজারবাগ দরবার শরীফ হল আল্লাহ পাক উনার এক মহান ওলীর দরবার। 

 কি হয় সেখানে? 
  • -সেখানে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করা হয়, অন্তর থেকে ইবাদত বন্দেগী করার শিক্ষা দেওয়া হয়। 

 কে শিক্ষা দেন? 
  • যামানার যিনি লক্ষস্থল ওলীআল্লাহ, তিনি সেখানে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত, মা’রিফত শিক্ষা দেন; আদব শিক্ষা দেন। শরীয়তের আদেশ নির্দেশও শিক্ষা দেন।