Saturday, November 26, 2016

বাতিল কর্তৃক হক্বের বিরোধিতা ও মিথ্যাচারিতা পূর্বেও ছিল কিনা?


থেকে থাকলে কেন এবং কারা করেছে?
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন তিনি এ দুনিয়াকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ক্বায়িম রাখবেন হক্বানী আলিম তথা আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের মাধ্যমে। তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সব রূহ বা আত্মাকে সৃষ্টি করার পর একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি তোমাদের রব নই?” জবাবে রূহ্সমূহ বললো, “হ্যাঁ, আপনি আমাদের রব।”
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি রূহ্সমূহকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে রূহ্ সম্প্রদায়! আজ থেকে অনেকদিন পর তোমরা দুনিয়ায় যাবে, দুনিয়ায় গিয়ে এ প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যেওনা।” একথা শুনে রূহ্ সম্প্রদায় বললো, “হে আল্লাহ পাক! আমরা তো অনেক বছর পর দুনিয়াতে যাব, আর তখন আমাদের এ ওয়াদার কথা মনে নাও থাকতে পারে।” জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তখন বললেন, “তোমরা চিন্তা করোনা, মূলতঃ তোমাদেরকে আমার ওয়াদার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যেই আমি প্রতি যুগে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করবো। নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যখন পাঠানো শেষ হয়ে যাবে, তখন নায়িবে রসূলগণ উনারা তথা আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পাঠাতে থাকবো।”

উপরোক্ত ওয়াক্বিয়া থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু শেষ নবী, উনার পর আর কোন নবী দুনিয়ায় আগমন করবেন না। তাই ছহীহ দ্বীন তথা শরীয়তের সঠিক আক্বীদা ও আমল মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি ন্যস্ত করেছেন হক্কানী আলিম তথা আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের উপর। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
العلماء ورثة الانبياء
অর্থ: “আলিমগণ উনারা নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা উত্তারাধিকারী।” (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه فيما اعلم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله عز وجل يبعث لـهذه الامة على راس كل مائة سنة من يـجددلـها دينها
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি এ ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মতে মুহম্মদীর জন্যে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন ব্যক্তিকে (মুজাদ্দিদ উনাকে) প্রেরণ করবেন, যিনি তাদের দ্বীন তথা আক্বীদা ও আমলের তাজদীদ বা সংস্কার করবেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, “মুজাদ্দিদ”গণ উনাদের এ দুনিয়াতে আগমনের কারণ বা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সমাজে প্রচলিত যাবতীয় বদ ও কুফরী আক্বীদা, বিদ্য়াত-বেশরা ও শরীয়ত বিরোধী কুসংস্কারমূলক আমল সমূহের মূলোৎপাটন করা আর ছহীহ্ আক্বীদা ও সুন্নতের আমলসমূহে সকলকে অভ্যস্ত করে তোলা।
পক্ষান্তরে এর পাশাপাশি ক্বিয়ামতের পূর্বে আবির্ভূত “কানা দাজ্জালের” পূর্বসূরী কিছু “দাজ্জালে কায্যাবের” আগমনের কথাও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ্ কিতাব “মুসলিম শরীফ”-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون ياتونكم من الاحاديث بـما لـم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আখিরী যামানায় বহু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা শুনোনি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও কখনো শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকেও তোমাদের কাছ থেকে দূরে রাখ। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত “দাজ্জালে কাযযাব” তারাই, যারা মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন বক্তব্য প্রদান করে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাদের কাজই হচ্ছে- কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্য প্রচার করে জনসাধারণের ঈমান বিনষ্ট করা এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হক্কানী উলামায়ে কিরাম তথা আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের বিরোধিতা ও কুৎসা রটনা করা।
মূলতঃ হক্ব-নাহক্বের এ দ্বন্দ্ব, অর্থাৎ না-হক্ব কর্তৃক হক্বের বিরোধিতা ও মিথ্যাচারিতা নতুন কোন বিষয় নয়, বরং হক্ব-নাহক্ব-এর এ দ্বন্দ্ব প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সময় থেকেই চলে আসছে। দাজ্জালে কাযযাবদের অগ্রণী মালঊন, গোমরাহ ও চির জাহান্নামী ইবলীসই এ বিরোধিতার প্রবর্তক।
Share this

No comments:

Post a Comment