Monday, February 1, 2016

যারা বলে কেয়ামতেন দিন কোন ওলির সূপারিশ গ্রহন হবেনা এটি কাফেরদের জন্য কোন মুসলিমের জন্য নয়

১. আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে তার প্রিয় নবী ও অলিদের সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। কিন্তু তারা ওইসব আয়াতকে পাশ কাটিয়ে শুধু এই আয়াতটির ওপর নির্ভর করে নবী এবং অলি-আল্লাহদের সুপারিশ করার কোনো ক্ষমতা থাকবে না বলে যে ফতোয়া দেন তা সম্পূর্ণভাবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসবিরোধী।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  সূরা বাকারার ৪৮নং আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, ওই আয়াতে ‘অলা ইউক্বাবালু মিনহা শাফা’ অর্থাৎ সেদিন কারও কোনো সুপারিশ কাজে আসবে না বলে যে কথাটি বলা হয়েছে তা কাফের এবং মুশরিকদের বেলায় প্রযোজ্য। (দেখুন তফসিরে ইবনে কাছির, ইমাম কুরতুবিসহ আরও অনেক তফসির)।

তার এ কথার সমর্থনে আমরা পবিত্র কোরআনে আরও কিছু আয়াত দেখতে পাই। যেমন- 
  • কাফেরদের জন্য কোনো সুপারিশকারী থাকবে না (সূরা আনআম : ৭০), 
  • মুশরিকদের উপাস্য কোনো সুপারিশ করতে পারবে না (সূরা আনআম : ১০),
  •  কাফেরদের উপাস্য কোনো সুপারিশ করতে পারবে না (সূরা রুম : ১৩), 
  • জালিমদের জন্য কোনো সুপারিশকারী নেই (সূরা মুমিন : ১৮) ইত্যাদি। 
সুতরাং পবিত্র কোরআন এ কথা নিশ্চিতভাবে ঘোষণা করছে, হাশরের দিন কাফের, মুশরিক ও জালেমদের কোনো সুপারিশকারী থাকবে না।


২. পবিত্র কোরআনের আরেকটি আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন, যাতে আল্লাহতায়ালা তার প্রিয়নবী হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের শাফায়াতের ক্ষমতা প্রদান করেছেন, ‘নিজেদের অবাধ্যতার পর ওরা আপনার নিকট এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে এবং আপনি ওদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও দয়ালু হিসেবে পাইবে (সূরা নিসা : ৬৪)’।

হাফেজ ইবনে কাছির রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত তাফসিরে উপরোক্ত আয়াত শরিফের তাফসির করতে গিয়ে একটি বিখ্যাত ঘটনার বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আরব্য এক বেদুঈন পবিত্র কোরআনের উপরোক্ত আয়াতটি শুনতে পেয়ে দ্রুত মদিনা শরিফ রওনা হলেন এই উদ্দেশ্যে যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে তিনি তার পূর্ববর্তী সব গুনাহখাতা আল্লাহর কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেবেন। বেদুঈন লোকটি মদিনা শরিফে এসে জানতে পারলেন, কিছু দিন হল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওজায় কাঁদতে কাঁদতে এই বলে ফরিয়াদ করলেন, ‘হে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি পবিত্র কোরআনের এই শাফায়াতের আয়াতটি শুনতে পেয়ে অনেক আশা নিয়ে আপনার খেদমতে এসেছি আপনার শাফায়াতের মাধ্যমে আমি আমার সব গুনাহখাতা আল্লাহর কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেব বলে। কিন্তু আমার কপাল মন্দ, আমি আপনাকে পেলাম না, তাই অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে আপনার দরবার থেকে ফিরে যাচ্ছি।’ এ বলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরবার থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন। আতবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  নামের একজন সাহাবি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওজা প্রাঙ্গণে ঘুমিয়ে ছিলেন। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে স্বপ্নে ডাক দিয়ে বললেন, ‘ওহে আতবী, আমার এক উম্মত অত্যন্ত নিরাশ হয়ে ভগ্ন হৃদয়ে আমার দরবার থেকে ফিরে যাচ্ছে। আপনি তাড়াতাড়ি তার পেছনে যান এবং তাকে গিয়ে বলুন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার ফরিয়াদ শুনেছেন এবং আল্লাহর দরবারে আপনার জন্য শাফায়াত করিয়েছেন। আপনি  সন্তুষ্টচিত্তে বেহেশতের সুসংবাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও।

* ’হজরত আবদুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি  তার বিখ্যাত শাওয়াহেদুন নবুয়ত কিতাবে উল্লেখ করেন, ‘হজরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  বলেন, আমরা যখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর দাফনকার্য সম্পাদন করছিলাম তখন এক বেদুঈন এসে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে আছড়ে পড়ল এবং নিজ মাথায় মাটি নিক্ষেপ করতে করতে বলতে লাগল, ইয়া হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘যদি তারা নিজেদের ওপর জুলুম করে অতঃপর আপনার কাছে এসে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহ তাদের অপরাধ মার্জনা করবেন (সূরা নিসা : ৬৪)। এখন আমি আপনার দরবারে এই উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু আপনি তো আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আমি কোথায় যাব? তখন কবর থেকে আওয়াজ এলো- ‘যাও তোমাকে ক্ষমা করা হয়েছে’। হজরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  বলেন, ওই আওয়াজ উপস্থিত সবাই শুনতে পেয়েছিল। [শাওয়াহেদুন নবুয়ত, মদিনা পাবলিকেশন্স পৃ. ১৪৩-১৪৪]

* ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি , ইমাম হাকিম, ইমাম তাবরানি সহি সনদের সঙ্গে বর্ণনা করেন, মারওয়ান দেখতে পেল এক ব্যক্তি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মোবারক জড়িয়ে ধরে তাতে মুখ ঘষতে ঘষতে কান্নাকাটি করছেন। মারওয়ান তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘ওহে তুমি জান, তুমি কী করছ?’ ওই ব্যক্তি মুখ তুলে মারওয়ানের দিকে তাকালে মারওয়ান ঘাবড়ে গেল এবং দেখল তিনি হচ্ছেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । আবু আইয়ুব আনসারী তাকে উত্তরে বললেন, ‘তুমি কী দেখছ না আমি কার কাছে এসেছি? আমি কোনো পাথরের নিকট আসিনি, আমি আমার হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসেছি, যিনি জীবিত আছেন এবং আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন।’ ওই হাদিসটি হাফেজ ইবনে কাসির ও তার তফসিরে সহিসনদের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং যারা বলে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মরে গেছেন, তিনি উম্মতের কোনো ফরিয়াদ শুনতে ও প্রতিকার করতে পারেন না তারা মিথ্যা এবং গোমরাহীর মধ্যে বসবাস করছেন। –

** বিশ্ববিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ সহীহ বুখারী শরীফের কিতাবুত তাফসীরের 
بَاب قَوْلِهِ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا-
নামক অধ্যায়ে সাইয়্যেদেনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  থেকে নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন-
قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُولُ إِنَّ النَّاسَ يَصِيرُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ جُثًا كُلُّ أُمَّةٍ تَتْبَعُ نَبِيَّهَا يَقُولُونَ يَا فُلَانُ اشْفَعْ يَا فُلَانُ اشْفَعْ حَتَّى تَنْتَهِيَ الشَّفَاعَةُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَلِكَ يَوْمَ يَبْعَثُهُ اللَّهُ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ
অর্থাৎ বর্ণনাকারী বলেন আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে  কে ইরশাদ করতে শুনেছি , অবশ্যই মানুষ কিয়ামতের দিবসে দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক উম্মত তাদের আপন আপন নবীদের অনুসরণ করবে। তারা নবীগণের দরবারে গিয়ে সবিনয় আবেদন করবে, হে আমাদের নবী! আপনি এ নাজুক সময়ে মহান আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করুন। হে আমাদের নবী! আপনি এ সংকটময় অবস্থায় আমাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করুন। হে আমাদের নবী ! আপনি এ নাজুক সময়ে মহান আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। পরিশেষে সুপারিশ করার দায়ভার রাসূলে মুয়ায্যম নবীয়ে আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূরানী দায়িত্বে এসে পৌঁছবে। আর উহাই হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফায়াতের মহান মর্যাদা। যা ঐ দিবসে যে দিন আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু তাঁকে মকামে মাহমূদ তথা শাফায়াতের উযমার পদ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন। (বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা # ৬৮৬

No comments:

Post a Comment