Thursday, November 2, 2017

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে- বাতিল ফিরক্বার উত্থাপিত মিথ্যাচারিতার দলীলভিত্তিক খণ্ডনমূলক জবাব (১)



বাতিল কর্তৃক হক্বের বিরোধিতা ও মিথ্যাচারিতা পূর্বেও ছিল কিনা? থেকে থাকলে কেন এবং কারা করেছে?
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন তিনি এ দুনিয়াকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ক্বায়িম রাখবেন হক্বানী আলিম তথা আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মাধ্যমে। 
তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সব রূহ বা আত্মা উনাদেরকে সৃষ্টি করার পর একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি আপনাদের রব নই?” জবাবে রূহ্সমূহ উনারা বললেন, “হ্যাঁ, আপনি আমাদের রব।” তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি রূহ্সমূহ উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে রূহ্ সম্প্রদায়! আজ থেকে অনেকদিন পর আপনারা দুনিয়ায় যাবেন, দুনিয়ায় গিয়ে এ প্রতিজ্ঞার কথা ভুলবেন না।” একথা শুনে রূহ্ সম্প্রদায় বললেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! আমরা তো অনেক বছর পর দুনিয়াতে যাব, আর তখন আমাদের এ ওয়াদার কথা মনে নাও থাকতে পারে।” জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তখন বললেন, “আপনারা চিন্তা করবেন না, মূলতঃ আপনাদেরকে এ ওয়াদার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যেই আমি প্রতি যুগে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করবো। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যখন পাঠানো শেষ হয়ে যাবে, তখন নায়িবে রসূল উনাদের তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পাঠাতে থাকবো।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত ওয়াক্বিয়া থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু শেষ নবী ও রসূল, উনার পর আর কোনো নবী ও রসূল দুনিয়ায় আগমন করবেন না। তাই ছহীহ দ্বীন তথা সম্মানিত শরীয়ত  উনার সঠিক আক্বীদা ও আমল মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি ন্যস্ত করেছেন হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উপর। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
العلماء ورثة الانبياء
অর্থ: “আলিম উনারা হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা উত্তারাধিকারী।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه فيما اعلم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله عز وجل يبعث لـهذه الامة على راس كل مائة سنة من يـجددلـها دينها
অর্থা: “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মতে হাবীবী উনাদের জন্যে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন ব্যক্তি উনাকে (মুজাদ্দিদ উনাকে) প্রেরণ করবেন, যিনি তাদের দ্বীন তথা আক্বীদা ও আমলের তাজদীদ বা সংস্কার করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, ‘মুজাদ্দিদ’ উনাদের এ দুনিয়াতে আগমনের অনেক কারণ বা উদ্দ্যেশ্যের মধ্যে একটি অন্যতম কারণ বা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সমাজে প্রচলিত যাবতীয় বদ ও কুফরী আক্বীদা, বিদ্য়াত-বেশরা ও সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী কুসংস্কারমূলক আমল সমূহের মূলোৎপাটন করে ছহীহ্ আক্বীদা ও সম্মানিত সুন্নত উনাদের আমলসমূহে সকলকে অভ্যস্ত করে আল্লাহওয়ালা বানানো। সুবহানাল্লাহ!
পক্ষান্তরে এর পাশাপাশি ক্বিয়ামতের পূর্বে আবির্ভূত “কানা দাজ্জালের” পূর্বসূরি কিছু “দাজ্জালে কায্যাবের” আগমনের কথাও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ্ কিতাব “মুসলিম শরীফ” উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون ياتونكم من الاحاديث بـما لـم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় বহু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা শুনোনি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও কখনো শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকেও তোমাদের কাছ থেকে দূরে রাখ। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “দাজ্জালে কাযযাব” তারাই, যারা মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন বক্তব্য প্রদান করে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাদের কাজই হচ্ছে- পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্য প্রচার করে জনসাধারণের ঈমান বিনষ্ট করা এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হক্কানী-রব্বানী হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম অর্থাৎ যামানার সুমাহান মুজাদ্দিদ উনাদের বিরোধিতা ও কুৎসা রটনা করা। নাউযুবিল্লাহ!

No comments:

Post a Comment