তাজদীদের ক্ষেত্রঃ
মুজাদ্দিদের তাজদীদের মূল লক্ষ্য ও ক্ষেত্র কোন জনপদের ভৌগোলিক সীমানা অথবা অবকাঠামো নয়। লক্ষ্য হলো মানুষের অন্তরের নোংরা অনুভব, অনৈতিক আচরণ ও শরীয়ত গর্হিত কাজ। ইসলামী পরিভাষায় যার নাম ঈমান, আক্বীদা, ইলম, আমল ও ইখলাছ। একটি সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে জনগণ, সরকার ও সার্বভৌমত্বের সমন্বিত রূপকে রাষ্ট্র বলা হয়। ইসলাম এমন রাষ্ট্র সমর্থন করে না। কারণ, ইসলাম নির্দিষ্ট কোন সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম সার্বজনীন এবং এর আবেদন বিশ্বব্যাপী। ইসলামের কাজ হলো, জগৎময় মানুষের অন্তরকে শাণিত করে তোলা এবং তাঁদের মন ও মননে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের সমন্বয়ে সৃষ্ট ইলমে তাছাউফের নির্যাস প্রবেশ করিয়ে দেয়া। অর্থাৎ মানুষকে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহওয়ালা করে তোলা এবং পৃথিবীব্যাপী “খিলাফত আলা মিন হাজিন নুবুওওয়া” প্রতিষ্ঠিত করা। এ লক্ষ্যে মুজাদ্দিদে আ’যম-এর তাজদীদের ক্ষেত্র গোটা বিশ্বের সকল মানুষ। বিপন্ন ও পথহারা মানুষের হিদায়েতের জন্য তিনি বেমেছাল রূহানী কুওওয়ত সম্পন্ন আলোকবর্তিকা। অন্যসব ধর্ম ও জাতি, গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে অপামর মানুষের জন্যও তিনি মনোনীত হাদী। পরিপূর্ণরূপে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ অনুসরণে মানুষকে আল্লাহওয়ালা করে তোলা এবং জগৎব্যাপী ইনসানিয়াত প্রতিষ্ঠায় পঞ্চদশ শতকে তিনি আল্লাহ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শ্রেষ্ঠতম উপহার। আল্লাহ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহকামের প্রতি জগৎব্যাপী মানুষের অনীহা, ভ্রান্ত আক্বীদা, সুন্নতের প্রতি অবজ্ঞা এবং ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে তিনি বেদনাক্লিষ্ট হয়ে পড়েন। এ বেদনাবোধই তাঁর অপ্রতিরোধ্য তাজদীদের ভিত্ রচনা করে।
তাজদীদের প্রণালীঃ
বিপর্যস্ত আক্বীদা, কুফরী ও নাস্তিকতার ঘোর দুর্দিনে আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ লক্ষ্যস’ল মুজাদ্দিদে আ’যম হাক্বীক্বী হিদায়েতের জন্য বিশ্ববাসীকে ডাক দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তাঁর মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত মাসিক “আল বাইয়্যিনাত” ও দৈনিক “আল ইহ্সান” পত্রিকার সঠিক দিক নির্দেশনায় বিশ্বময় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বাতিলের মুখোশ উম্মোচন ও বাতিলকে পর্যুদস্ত করে হক্ব মত-পথ প্রতিষ্ঠায় এ দু’টি পত্রিকার অমিয় আহ্বানে মানুষ দুনিয়াদার আলিম, ইসলামের শত্রু ও বাতিলকে চিনতে ও বুঝতে শিখ্ছে। মানুষের ইছলা’র জন্য এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন কিতাব রচনা করে ইসলামের হক্ব বক্তব্য তুলে ধরছেন। একইভাবে সহজ-সরল এবং হৃদয়গ্রাহীভাব ও ভাষায় নিয়মিতভাবে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ওয়াজ-নছীহত ও তা’লীম তালক্বীন-এর মাধ্যমে আপামর মানুষের মনে ইসলামী জয্বা সৃষ্টি করছেন। দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ তাঁর মুরীদ হচ্ছে। অসংখ্য বিধর্মী ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। তাঁর যিকির-ফিকিরের তা’লীমে লক্ষ লক্ষ মুরীদের অন্তর ইছলাহ হচ্ছে। ইলমে তাছাউফে দীক্ষিত হয়ে অগণিত মানুষ সত্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অবলুপ্ত সুন্নত জিন্দায় মানুষকে হক্ব মত-পথে ফিরিয়ে আনতে তাঁর বিশ্বময় অতুলনীয় অবদান ইতোমধ্যেই মানুষ জেনে ফেলেছে।
কতিপয় তাজদীদের বিষয়ঃ
মুজাদ্দিদের তাজদীদের মূল বিষয় হলো, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী বদ্ আক্বীদা, আমল, অন্যায়, অবিচারের মূলোৎপাটন। ইসলাম বিরোধী যাবতীয় বিশ্বাস ও কার্যকলাপই তাঁর তাজদীদের ক্ষেত্র। দুনিয়ালোভী আলিমদের মনগড়া ফতওয়ার কারণে বর্তমানে অনেক মানুষ সরাসরি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ বিরোধী আক্বীদা ও আমলে লিপ্ত। মুজাদ্দিদে আ’যম শরীয়তের মূল দলীল, অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে সঠিক আক্বীদা ও আমল তুলে ধরছেন এবং ইসলাম ধর্মে প্রবেশকৃত সকল কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াত অপসারণের কাজে সর্বক্ষণ নিয়োজিত রয়েছেন। যেসব হারাম ও নাজায়িয বিষয়ের মূলোৎপানে তিনি
নিয়োজিত, তাঁর কতিপয় নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
বেপর্দা, ছবি, গণতন্ত্র, খেলাধুলা, নারী নেতৃত্ব, মুসলমানের মৌলবাদ দাবী, ব্লাসফেমী আইন, নবী-রসূল আলাইহিস্সালাম, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আওলিয়ায়ে কিরামগণকে দোষারোপ করা, টিভি, ভিসিআর, ভিডিও, হরতাল, লংমার্চ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, সুদ-ঘুষ, রোযা রেখে ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ইত্যাদি নেয়া, মাযহাব মানা, বিজাতীয় ও বিধর্মী যাবতীয় আমল ইত্যাদি।
মুজাদ্দিদে আ’যমের বিরোধিতাঃ
বলা হয়, “প্রত্যেক হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম, অর্থাৎ প্রকৃত হাদীর বিরোধিতার জন্য একজন ফিরাউন অর্থাৎ একজন বিরোধী রয়েছে। তদ্রুপ প্রত্যেক ফিরাউন, অর্থাৎ গোমরাহকে হিদায়েতের জন্য একজন হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম অর্থাৎ প্রকৃত হাদী থাকেন।” বাতিল পন্থীরা আল্লাহ পাক-এর মাহবুব ওলীগণের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকে একথা নুতন নয়, বিস্মিত হওয়ার মতোও নয়। কারণ ইহুদী-নাছারাদের মনোনীত এজেন্ট দুনিয়াদার আলিমদের গোপন ও প্রকাশ্য কারসাজি মুজাদ্দিদের অপ্রতিরোধ্য হিদায়েতের কারণে নিষ্প্রভ হয়। কায়েমী স্বার্থ রক্ষায় বাতিলপন্থীরা অন্যায় ও দলীলবিহীন বিরোধিতায় হক্ব মিটিয়ে ফেলার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকে। কিন্তু সবসময় হক্ব বিজয় হয় আর নাহক্ব নিশ্চিহ্ন হয়। এ মর্মে আল্লাহ পাক বলেন, তারা (বাতিলপন্থীরা) চায় মুখের ফুৎকারে আল্লাহ পাক মনোনীত হাদীকে মিটিয়ে দিতে। অথচ আল্লাহ পাক তাঁর হাদীকে অবশ্যই কামিয়াবী দান করবেন। যদিও কাফির বা বাতিলপন্থীরা তা পছন্দ করে না।׃ (সূরা ছফ-৮) এখানে যা ফিকিরের তা হলো, সুন্নত আমলের অনেক বিষয় ওলীআল্লাহগণের হিম্মত ও অনুশীলনের পর্যায়ভুক্ত থাকে না। তবে মাহবুব ওলীগণের প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত অনেক সুন্নতের আমল আল্লাহ পাক-এর অবারিত রহমত এবং রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সদয় ইহ্সানে পূর্ণতা পেয়ে যায়। এ কারণে যাবতীয় বাতিল ফিরক্বাসমূহের নাহক্ব বিরোধিতা ওলীআল্লাহগণের কাম্য। এতে তাঁদের তাজদীদ পূর্ণতার পথে প্রবল গতিবেগ পায় এবং তাঁদের মান, শান, ইজ্জত, ঐতিহ্য ও মর্যাদা নিরন্তন বৃদ্ধি পায়। মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী’র ক্ষেত্রে হুবহু তাই ঘটেছে।
No comments:
Post a Comment